স্টাফরিপোর্ট- ৩ জুন ২০১৮, দৈনিক রাঙামাটি (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি): বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সাথে গত শুক্রবার ১লা জুন সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক ভিন্ন রকম ইফতার আয়োজন করেছিল ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। দেশে প্রথমবারের মতো শুরু হওয়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার সুপার ফোরে উত্তীর্ণ বিতার্কিকদের সারাদিন ব্যাপি গ্রুমিং শেষে ছিলো এই মেইল বন্ধনের ইফতার।
প্রতিবন্ধীসহ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, ব্যথা-বেদনার গল্প নিয়ে আয়োজিত এই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, চট্রগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করছে। গত ২১ এপ্রিল সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এই প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন। বিভিন্ন রাউন্ড শেষে জাতীয়ভিত্তিক এই রিয়েলিটি শো-র সুপার ফোরে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের দুটি দলসহ চট্রগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ও ইডেন মহিলা কলেজ উত্তীর্ণ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। বনানীতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র কনফারেন্স রুমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিতার্কিকদের সুপার ফোর টিমের গ্রুমিং ও প্রতিযোগিতার বিষয় প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক জনাব ইমদাদুল হক মিলন। সভাপতি হিসেবে প্রতিযোগিতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ইমদাদুল হক মিলন বলেন, দৃষ্টি-প্রতিবন্ধীরা আসলে প্রতিবন্ধী নয়, বরং সমাজের সাধারণ মানুষ যারা তাদের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন নয়, তারাই প্রতিবন্ধী। সমাজের সকলের উচিত একটি দৃষ্টি-প্রতিবন্ধীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা। দৃষ্টি-প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে মানবিক বোধসম্পন্ন হয়ে আমরা মানুষেরা এবার কথা রাখব, তাদের পাশে দাড়াবো। দৃষ্টি-প্রতিবন্ধীরা মনের জোরে এগিয়ে যাবে এবং একদিন তাদের সকল অধিকারসমূহ জয় করবেই।
তিনি আরো বলেন, দৃষ্টি-প্রতিবন্ধীদের মনের শক্তি তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দেবে, এমনকি কেউ কেউ তাদের স্বপ্নকেও ছাড়িয়ে যাবে। তিনি সমাজের সকলকে প্রতিবন্ধীদের পাশে দাড়ানোর আহবান জানান। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার প্রতিবন্ধীদের পাশে এবং তাদের অধিকার আদায় ও দুঃখ-কষ্ট লাঘবে সহায়ক কর্মসূচী গ্রহণ করবেন।
সুপার ফোরের গ্রুমিং বিষয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজক সংগঠন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বললেন, এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানটি যখন শুরু করবার পরিকল্পনা গ্রহণ করি তখন ভেবে ছিলাম দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা কি পারবে এই ধরণের একটি রিয়েলিটি শো-তে অংশগ্রহণ করতে। তারা কি পারবে যুক্তি, তর্ক উপস্থাপনা দিয়ে বিরোধী পক্ষের বক্তব্যকে খন্ডন করতে। কিন্তু প্রতিযোগিতা শুরুর পর দেখলাম পুরা উল্টোচিত্র। বুঝলাম দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা যে কত মেধাবী। একটু সুযোগ ও পরিচর্যা পেলেই যে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতোই সমান তালে নিজেদের তুলে ধরতে পারে। তিনি আরো বলেন, উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে হলে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান ও বিনোদনসহ তাদের সামাজিক নিরাপত্তা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি চাকুরীতে প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রদত্ত কোটা বাধ্যতামূলক করে অন্ততপক্ষে ৫% কোটা রাখা দরকার। দুঃস্থ প্রতিবন্ধীদের ভাতা বাড়িয়ে বর্তমানে প্রদত্ত ৭শ টাকার পরিবর্তে ১৫শ টাকা করা প্রয়োজন। আগামীতে যাতে জাতীয় সংসদে প্রতিবন্ধীদের জন্য অন্ততপক্ষে ৩টি সংরক্ষিত আসন রাখার দাবিসহ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায়ও যাতে প্রতিবন্ধীদের প্রতিনিধিত্ব থাকে সে বিষয়েও তিনি সুপারিশ করেন।
প্রতিবন্ধীদের প্রতি পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এটিএন বাংলা ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি যৌথভাবে ‘যুক্তির আলোয় দেখি’ শিরোনামে এই রিয়েলিটি শো-র আয়োজন করেছে।
গ্রুমিং সেশনে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীসহ ব্যতিক্রম ধর্মী ইফতারের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।
পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান।