আনোয়ার আল হক, ১০ জানুয়ারি ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : রোববার পৌষের রৌদ্রোজ্জল আলো ঝলমলে সকালে আরো একঝাঁক মেধাবী তরুণ তরুণীর প্রদীপ্ত যাত্রা শুরু হয়েছে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে। এই যাত্রার মধ্য দিয়ে তাদের আশৈশবের লালিত স্বপ্ন তথা শত পিতামাতার আগ্রহ উদ্দীপনা যেন বাস্তবের পথে পা বাড়াল।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাঙামাটি পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন এই যাত্রাকে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের বাস্তবায়ন বলে অভিহিত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতেই আজ মেধাবীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে পার্বত্য রাঙামাটির সবুজাভ নয়নাভিরাম ভূমি। তিনি বলেন, মানব সেবার মহান ব্রত সাথে নিয়ে আজ যারা চিকিৎসক হওয়ার শপথ নিয়ে নতুন করে যাত্রা শুরু করলো তারা ডাক্তার হওয়ার পাশাপাশি ইতিহাসেরও অংশ হয়ে থাকবে। কারণ এই মেধাবী তরুণ তরুণীর চোখে মুখে সামনে এগিয়ে যাবার যে উদগ্র বাসনা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, তার মাঝে সুপ্ত রয়েছে অনেক স্বপ্নের সমন্বয়। গতকাল রোববার রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পরিচিতি ও ২০১৫-১৬ শিক্ষবর্ষের শিক্ষা কার্যক্রমের সূচনা অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক এই মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. টিপু সুলতান বলেন, গত বছরের এই দিনে পাহাড়সম অনিশ্চয়তা আর শত প্রতিকুলতা সাথে যে মেডিকেল কলেজ যাত্রা শুরু করেছিল, আজ দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশনের মধ্য দিয়ে তা পূর্ণাঙ্গতা পেল। তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত আশান্বিত যে, সেদিন আমরা যে ভুল ভোঝাবুঝি ও দ্বিধাদ্বন্দ্ব প্রত্যক্ষ করেছিলাম আজকের এ পর্যায়ে এসে মনে হচ্ছে যেন, তা আর জনগণের মাঝে নেই। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, গত এক বছরে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কঠোর অধ্যাবসায় এবং সকল পক্ষের আন্তরিকতা ও সহায়তায় আমরা যে গতিতে এগিয়ে এসেছি, তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে এই মেডিকেল কলেজ একদিন স্থানীয় মানুষের আশা আকাক্সক্ষার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হবে।
নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করতে উঠে প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ¯েœহাশীষ চক্রবর্তী ও নাজমুস সাহেরা মাহেরা নতুন শিক্ষার্থীর মন থেকে সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব দুর করে দিয়ে জানান, অনিশ্চয়তার মাঝে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও অধ্যক্ষ টিপু সুলতানের দক্ষ নেতৃত্ব, সকলের অধ্যাবসায় আর প্রশাসনিক সহযোগীতার কারণে আমরা সকল ঘাটতি পুষিয়ে নিতে পেরেছি। একাডেমিক কারিকুলামের পুরোটাই অতিক্রম করে আমরা এখন আর সকল মেডিকেল কলেজের পাঠপ্রক্রিয়ার সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে পেরেছি।
নতুন শিক্ষার্থী মানিয়া আর আবু রায়হান বক্তব্য দিতে উঠে আগামী দিনের স্বপ্ন ব্যক্ত করার সময় চোখেমুখে এবং কথনে আত্ম বিশ্বাসের ঝলকানিতে উপস্থিত অভিভাবকদের মুগ্ধ করে দেন। কলেজের সূচনা লগ্নে যোগদান করা সুখদুঃখের জলন্ত স্বাক্ষী ও বিদগ্ধ শিক্ষাগুরু ডাঃ বিপ্লব কুমারের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় পরিচিতি অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের প্রকল্প পরিচালক ডাঃ শহীদ তালুকদার ও কলেজের চক্ষু বিভাগের প্রধান ডাঃ শামসুল হক মল্লিক।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এবং সভাপতি দু’জনই উপস্থিত অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে জানান, খুব সহসাই এই মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবনের কাজ শুরু করার জন্য আনুসাঙ্গিক প্রক্রিয়া সমাপ্ত হবার পথে। তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী পাহাড়ে প্রকৃতিক বৈশিষ্ট এবং ভৌগলিক অবস্থান মাথায় রেখে একটি নান্দনিক শিক্ষা ভবন তৈরির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এই প্রকল্প তদারকি করছেন। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পসও হবে পর্যটকদের জন্য আরো একটি আকর্ষণের আধার।
অধ্যক্ষ শুরুতেই কলেজে কর্মরত একুশজন শিক্ষককে অভিভাবকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, এই শিক্ষক শিক্ষিকাগণ প্রত্যেকেই দেশ বরেণ্য চিকিৎসক। তিনি বলেন, আমাদের কলেজে শিক্ষক সঙ্কট তো নেইই বরং অপরাপর কলেজগুলোর তুলনায় এ ক্ষেত্রে আমরা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছি। তিনি জানান, লেকচার গ্যালারি, যন্ত্রপাতি, পুস্তক ও উপকরণ থেকে শুরু করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আনুসাঙ্গক সকল কিছুই আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে মওজুদ আছে। শুধুমাত্র আবাসন সঙ্কট এবং একাডেমিক ভবনের কাজ শেষ হলে আর আমাদের কোনো অপূর্ণতা থাকবে না।
রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় ব্যাচের জন্য এই পাঠদান সূচনা অনুষ্ঠানে সারাদেশ থেকে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের সাথে এসময় দুরদরান্ত থেকে আসা অভিভাবকগণও উপস্থিত ছিলেন। প্রথম ব্যাচের ছাত্রছাত্রীরা ফুল দিয়ে নতুন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেন।
পোস্ট- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান