নতুন সাজে সজ্জিত প্রকৃতির রাণী রাঙামাটির পর্যটন স্পটগুলো দর্শনার্থীদের অপেক্ষায়

528

॥ শহিদুল ইসলাম হৃদয় ॥
নতুন সাজে সজ্জিত প্রকৃতির রাণী রাঙামাটির পর্যটন স্পটগুলো এখন দর্শনার্থীদের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। কয়েক আগে থেকে জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পর্যটন স্পটগুলো দর্শনার্থী প্রবেশের নিশেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে এখনও দর্শনার্থী তেমন একটা না এলেও ইতোমধ্যে কাছাকাছি জেলাগুলো থেকে দর্শনার্থী আসতে শুরু করেছে। করোনাভাইরাসের কারণে সমাজের অচলাবস্থা এখনও কাটেনি; অর্থনীতিতে চলছে মন্দাভাব, ক্ষতি হয়েছে অনেক দিক থেকেই।

নানামুখি ক্ষতির মধ্যেও অনানুষ্ঠানিক লকডাউন পার্বত্য শহর রাঙামাটির জন্য একটি সুখবর বয়ে এনেছে- তা হলো, নতুন রূপ পেয়েছে এই পর্যটন শহর। প্রায় চারমাস পর্যটন বাণিজ্য বন্ধ থাকলেও নতুন সাজে সজ্জিত হয়েছে পর্যটন স্পটগুলো। আশা করা হচ্ছে অচলাবস্থা কেটে গেলে রাঙামাটি শহরের নতুন রূপ অনাগত দিনে পর্যটকদের কাছে আরো মোহনীয় এবং কমনীয়তায় উদ্ভাসিত হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মানুষের চলাচাল সীমিত করার সময় চার মাস গড়িয়ে পাঁচ মাসে পড়তে যাচ্ছে কয়েকদিনের মধ্যেই। মহামারির ভয়ে ভীত মানুষ এখনও প্রযোজনের বাইরে খুব একটা বের হচ্ছে না। প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞার কারণে পার্বত্য শহর রাঙামাটিতে এখনও সন্ধ্যার পর থেকেই প্রায় সব কিছু বন্ধ থাকছে। মানুষের পদচারণা সন্ধ্যার পর নেই বললেই চলে।

এখন সবাই অল্প বিস্তর বের হলেও যারা দুমাস পর বের হয়েছেন ঘর থেকে- তারা বের হয়ে নিজের শহরটিকে দেখছেন নতুন সাজে; এ যেন অচেনা কোনো শহর। শহরের প্রধান সড়কটি প্রথমেই নজর কাড়ছে সবার। সাদা সাইড লাইনের মাঝে কালো পিচঢালা এই পরিচ্ছন্ন সড়কটি পর্যটন শহরের আভিজাত্য প্রকাশ করছে সগৌরবে। অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা পৌরসভার ফুটপাতে টাইলস বসানোর কাজটি এই সৌন্দর্যে কিছুটা ছন্দপতন সৃষ্টি করলেও সেই কাজটিও সম্প্রতি গতি পেয়েছে।

জেলার বেশ কিছু স্পট ঘুরে মনে হয়েছে, পর্যটকরা এবার পাহাড় দর্শনের এসে বেশ তৃপ্ত হবেন। এর মধ্যে সবার আগে দৃষ্টি কাড়ছে রাঙামাটি শহরের পর্যটন স্পটগুলোতে নতুন যুক্ত হওয়া রাঙামাটি পার্ক। জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদের আন্তরিকতায় জেলার পর্যটন খাতে নতুন যুক্ত হওয়া এই পার্কটির উন্নয়ন হয়েছে চোখে পড়ার মতো। শিশুদের বিনোদনের লক্ষ্যে রাঙামাটি পার্কে নতুন যুক্ত হয়েছে আরো অনেক কিছু।

পার্কের উন্নয়ন প্রসঙ্গে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, রাঙামাটি পার্কটি শুধুমাত্র আগত পর্যটকদের কথা চিন্ত করে নয়; বরং স্থানীয় শিশুদের বিনোদনের কথা মাথায় রেখে বিশেষভাবে তৈরী করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে পার্কের প্রবেশ পথে বিশেষ পদ্ধতিতে ছোটদের প্রিয় কার্টুন সিরিয়ালের ট্যাটু ব্যবহার করা হয়েছে এবং ভিতরে একটি কৃত্রিম পাহাড়ি ঝর্ণা নির্মাণ করা হয়েছে।

শিশুদের চিত্তাকর্ষণে বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি স্থাপন ছাড়াও শিশুদের রাইড হিসেবে কিড স্লাইটস ও দোলনা, ইলেকট্রনিক ট্রেন ও হেলিকপ্টার সংযুক্ত হয়েছে। পার্কে আগত অবিভাবক ও শিশুদের জন্য একটি দৃষ্টিনন্দন ক্যান্টিনও স্থাপন করা হয়েছে। শিশুদের বিনোদনের জন্য পার্কটিতে আরো কিছু চমক সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান ডিসি।

এদিকে শহরে অন্যান্য স্পট গুলোরও অবকাঠামোগুলো মেরামত ও সুসজ্জিত করা হয়েছে। শহরের গলিপথগুলোও নতুন করে মেরামত করা হয়েছে অনেকগুলোই।

এ প্রসঙ্গে, রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ম্যানেজার সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই পর্যটন কমপ্লেক্স দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দিয়েছি। কিছু কিছু দর্শনার্থীও পাচ্ছি, আশা করছি শ্রঘ্রই পর্যটকের আনাগোনা বাড়বে। তিনি বলেন, যদিও করোনার কারণে পর্যটন স্পট বন্ধ ছিল এবং পর্যটক বা স্থানীয়দের আগমন শূন্যের কোটায় ছিল। কিন্তু আমাদের কর্মচারীরা সার্বক্ষণিক কাজ করছে। লকডাউনের সময়ে একটি হানিমুন কটেজের অবকাঠামো মেরামতসহ ব্রিজের উপরের পাটাতন পরিবর্তনসহ আমাদের কর্মীরা অব্যাহতভাবে সৌন্দর্য্য বর্ধনে কাজ করে যাচ্ছে।

রাঙামাটি হোটেল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও রিজার্ভ বাজারস্থ হোটেল হিল সিটির সত্ত্বাধিকারী আনোয়ার মিয়া বানু বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকার দেশের সকল পর্যটন স্পট বন্ধ রাখার দরুণ রাঙামাটিতে দেশি বা বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটেনি। ফলে আমরা হোটেল মালিকরা অনেক কষ্টে দিনযাপন করছি।

তবে ভাইরাসের প্রকোপ কমে গেলে পর দেশ-বিদেশি দর্শনার্থীরা রাঙামাটিকে নতুন আঙ্গিকে দেখতে পাবে কারণ রাঙামাটির পর্যটন খাতে আরো কিছু স্পট যুক্ত হয়েছে এবং পূর্ববর্তী স্পট গুলো মেরামত করাসহ নতুন বিভিন্ন স্থাপনা সংযোজিত হয়েছে। ‘আশা করছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে রাঙামাটিতে বিগত সময়ের তুলনায় পর্যটকের আগমন বৃদ্ধি পাবে এবং হোটেল ব্যবসায়ীরাসহ এই খাতের সাথে যুক্ত সকল মানুষ লাভবান হবে’ বলে যুক্ত করেন তিনি।

পর্যটন স্পটগুলো ঘিরে ইঞ্জিন বোট চালানো গোলাম মোস্তফা জানান, রাঙামাটি পর্যটক না আসায় আমরা অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা সহসা এই অবস্থা কেটে যাক। সব কিছু স্বাভাবিক হলে এবার রাঙামাটি পর্যটদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠবে বলে আমরা আশা করছি।