নানা সমস্যায় জর্জরিত ঐতিহ্যবাহী বাঙ্গালহালিয়া বাজারঃ অভিযোগের তীর বাজার চৌধুরীর বিরুদ্ধে

512

|| রাজস্থলী প্রতিনিধি ||

রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার ৩ নং বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের, বাঙ্গালহালিয়া বাজার অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে এবং স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে চলতি বর্ষামৌসুমে প্রতিনিয়তই জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলাধীন গুরুত্বপূর্ন বাঙ্গালহালিয়া বাজারটি।

রাঙামাটি-বান্দরবান ও চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, কাপ্তাই, রাজস্থলী উপজেলার মধ্যবর্তি স্থানে অবস্থিত এই বাঙ্গালহালিয়া বাজারটি ১৯৮০ সাল থেকেই প্রতিষ্ঠিত। প্রতি সপ্তাহে এই বাজারে অন্তত ১০ কোটি টাকা লেনদেন হলেও বাজার কমিটির চরম অব্যবস্থাপনা ও অবৈধ দখলদারদের আধিপত্যের কারনে জলাবদ্ধতাসহ নানান সমস্যায় জর্জরিত বাঙ্গালহালিয়া বাজারটি।

এদিকে নানা দখলকরে হোটেল, রেস্টুরেন্ট খুলে এবং ভবন তুললেও সেগুলোকে দখলমুক্ত না করে জলাবদ্ধতা নিরসনের কথা বলে সরকারী প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় জোরপূর্বক ড্রেজার দিয়ে নালা কাটার অভিযোগ উঠেছে বাজার চৌধুরী ও সাবেক বিএনপি নেতা থোয়াইসুইখই মারমা’র নেতৃত্বে থাকা একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।

খোদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ঞোমং মারমা নিজেও বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ঝেরেছেন। প্রতিটা অবৈধ দখলদারকে বিএনপিনেতা বাজার চৌধুরী নিজেই স্বাক্ষর দিয়ে কাগজ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।

বাজারের ব্যবসায়ী সামসুল আলম, মূছা সওদাগর, কামালসহ একাধিক ব্যবসায়ি ও বাজার কমিটির সাবেক নেতা পুলক চৌধুরীসহ একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বাজার চৌধুরৗ নিজেই বাজারের নালার উপর দোকান তৈরি করে বিক্রিতে সহযোগিতা করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাঙ্গালহালিয়া বাজারের মাছ বাজারের পেছনে থাকা একটি ডোবাকে মাটি ভরাট করে সেখানে দোকান তুলে বিক্রি করেছেন বাজার চৌধুরী। তার এই অবৈধ দোকান ও জায়গায় রক্ষা করতে স্থানীয় ইউপি মেম্বারের মাধ্যমে সরকারি বরাদ্ধ এনে দিনে দুপুরে স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ীর মালিকানাধীন রেকর্ডিয় জমির উপর দিয়ে ড্রেজার দিয়ে মাটি কেটে ড্রেন তৈরি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই চন্দ্রঘোনা থানা ও ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ জানিয়েছেন ভূক্তভোগী ব্যবসায়ি কামাল উদ্দিন।

বাজারের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ না করে এবং তাদের মাধ্যমে বন্ধ হয়ে যাওয়া ড্রেনেজ ব্যবস্থা পরিস্কার না করে নতুন করে ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় নালা তৈরি কেন? এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি স্থানীয় ইউপি মেম্বার জাহাঙ্গীর আলম ও বাজার চৌধুরী। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ি কামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, বাজার চৌধুরী ও ইউপি মেম্বার আমাদের ক্রয়কৃত ৩৬ শতক জায়গার উপর দিয়ে দিনে দুপুরে জোরপূর্বক মাটি কেটে ড্রেণ নির্মাণ করেছে।

বিষয়টি নিয়ে কাগজপত্র দেখাতে চাইলেও আমাদের কোনো কথাই শুনেনি তারা। অথচ গত ২১/০১/২০২১ইং তারিখে বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মৌজার হেডম্যান, স্থানীয় মেম্বার ও গ্রাম্য চৌকিদারদের উপস্থিতিতে স্থানীয় সার্ভেয়ার রেজাউল আলম, ফজলুল আমিনকে নিয়ে পানি চলাচলের জন্য খাস ১৯২৫ দাগে নালা খনন করার জন্য নির্ধারণ করা হয়। চেয়ারম্যানের সিট নকশা দ্বারা নির্ধারিত স্থান উপেক্ষা করে গত ২২/০৫/২০২১ তারিখে সাবেক বিএনপি নেতা ও বাজার চৌধুরী থোয়াইসুই খই মারমা চৌধুরী জোর করে আমাদের খরিদকৃত রেকর্ডিয় ১৯২৪ দাগের জায়গার উপর নালা খনন করেছে। এসময় আমি বিষয়টি নিয়ে বাধা দিতে গেলে জনৈক অরূন সেন ও জাহাঙ্গীর মেম্বারকে সাথে নিয়ে বাজার চৌধুরী আমাকে গালমন্দের পাশাপাশি প্রাণনাশেরও হুমকি দিয়েছেন।

সরেজমিনে বাঙ্গালহালিয়া বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বাঙ্গালহালিয়া বাজারের উপর মং মার্কেট, তাহের কোম্পানী মার্কেট, ইসহাক সওদাগরের রেস্টুরেন্ট, আজিজুল হকের রড সিমেন্টের দোকান, মংসিং চৌধুরীর ফার্নিচারের দোকানসহ পুরো মাছ বাজারটি বাঙ্গালহালিয়া বাজারের নালা দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে সংশ্লিষ্ট্যরা। এছাড়াও মাছ বাজারটি বাজার চৌধুরী নিজেই বিভিন্ন উপারে ভরাট করে অবৈধভাবে দখল করে দোকান তুলে ভাড়া দিয়েছেন।

নিজের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর কোনোটিরই সত্যতা নেই এবং স্থানীয় একটি মহল ইন্ধন দিয়ে তার বিরুদ্ধে এসব করাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাঙ্গালহালিয়া বাজার চৌধূরী ও সাবেক বিএনপি নেতা থোয়াইসুইখই মারমা চৌধুরী।

অপরদিকে বাজার সভাপতি ও স্থানীয় ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে গিয়ে তিনি রোষানলের শিকার হয়েছেন।

এদিকে বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ঞোমং মারমা বলেছেন, আমি এসব অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে রাজস্থলী ইউএনও মহোদয় ও রাজস্থলী উপজেলা চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানিয়েছি।

তিনি বলেন, বর্ষাকালে পুরো বাজারের প্রায় অর্ধেকাংশই পানিতে ডুবে যায়। বাজার চৌধুরী নিজেই অবৈধভাবে দখল করে দোকান তুলে ভাড়া দিয়েছেন। তিনি বলেন, মূলত বাঙ্গালহালিয়া বাজারের পাশে একটি জলাশয় ছিলো আমরা ছোটকাল থেকেই দেখে এসেছি। কিন্তু সেটি ভরাট করে দোকান-পাট নির্মাণ করায় সেটিকে ড্রেন বানিয়ে ফেলে সিন্ডিকেট চক্র। এসব দখলদারদের বিরুদ্ধে তার শক্ত অবস্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি জেলা প্রশাসক ও ইউএনও মহোদয়ের সার্বিক সহযোগিতাও কামনা করছি।