চাঁদার দাবিতে পণ্যভর্তি দু’টি ট্রাক পুড়িয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। সোমবার ভোরে সংঘটিত এই ঘটনার জেরে দিনভর অবরুদ্ধ ছিল রাঙামাটি শহরের মানুষ।
সোমবার জেলার নানিয়ারচরে ট্রাকে আগুন দেওয়ার খবর রাঙামাটি শহরে আসার সাথে সাথে সকল ধরনের পাবলিক পরিবহন বন্ধ করে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। এ সময় রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে পড়ে হাজারো মানুষ। শ্রমিকরা অবরোধ চলাকালে রাস্তায় ব্যারিকেড দিলেও প্রশাসনের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপে ব্যারিকেড তুলে নেওয়া হয়। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে সন্ধ্যা ৬টা থেকে যান চলাচল শুরু হয়। শহরের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ শান্ত রয়েছে।
শ্রমিক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য ও প্রত্যক্ষদর্শি সূত্রে জানা গেছে, মহালছড়ি হাটবার ঘিরে সোমবার ভোরে রাঙামাটি শহর থেকে পণ্য বোঝাই করে দু’টি ট্রাক মহালছড়ি বাজারে যাচ্ছিল। ভোর ৫টার দিকে নানিয়ারচর উপজেলার ১৮ মাইল এলাকায় কাঁঠালতলীতে পৌঁছলে একদল অস্ত্রধারী পাহাড়ি যুবক তাদের পথরোধ করে।
চালক গাড়ি থামালে তাদের কাছে চাঁদা পরিশোধের টোকেন দেখতে চাওয়া হয়। চালকের কাছে এসময় কোনো টোকেন ছিল না। টোকেন দেখাতে না পারায় ওই যুবকেরা গাড়ি দুটির চালক, হেলপার ও ব্যবসায়ীদের ট্রাক থেকে নামিয়ে মারধর করে তাড়িয়ে দিয়ে ট্রাকে (ট্রাক নং চট্টমেট্রো ট-১১০৭৪১) এবং (চট্টমেট্রো ট- ১১২০৬৬) আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হয় বলে পরিবহন শ্রমিকরা দাবি করেছে, তবে এর মধ্যে নাম পাওয়া গেছে তিনজনের। এরা হলো প্রকাশ আচার্য, কামাল হোসেন ও মুন্সী মিয়া।আগুন দিয়ে চলে যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা ২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো দাবি করেছে।
ট্রাকে আগুন দেওয়ার খবর পেয়ে মহালছড়ি সেনা জোনের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে সেনা সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে। পরে মহালছড়ি থানা থেকে পুলিশ সদস্যরাও ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তারা বিষয়টি রাঙামাটি ফায়ার স্টেশনকে জানালে রাঙামাটি থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও ততক্ষণে ট্রাক দু’টি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।
এদিকে ঘটনার খবর রাঙামাটিতে ছড়িয়ে পড়লে এ ঘটনার প্রতিবাদসহ চাঁদাবাজদের আটকের দাবিতে রাস্তায় ব্যারিকেড দেয় শ্রমিক সংগঠনগুলো। এসময় রাঙামাটি শহরে সকল ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর ১২টার দিকে শ্রমিক সংগঠনগুলো যৌথভাবে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গেলে জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান শ্রমিকদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সম্মেলন কক্ষে সভায় মিলিত হন। দু’ঘন্টা আলোচনা হলেও তাদের দাবি দাওয়া পুরণে কার্যত কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় অবরোধ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। তবে সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে অভ্যন্তরীণ রুট ও শহরে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
শ্রমিক নেতৃবৃন্দ জানায় জেলা প্রশাসক তাদের ক্ষতিপুরণের বিষয়ে পার্বত্য মন্ত্রণালয়সহ উপর মহলে সুপারিশ করবেন বলে কথা দিয়েছেন এবং ছাঁদাবাজদের বিরুদ্ধেও আইনী প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। শ্রমিক নেতৃবন্দ বলেন, আমরা প্রশাসনের প্রতি আস্থা রেখে আপাতত কোনো আন্দোলন না করলেও দ্রুত এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রতিকার না পেলে বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আইন শৃঙ্খলা একটি চলমান প্রক্রিয়া এ বিষয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্থ ট্রাক দু’টির মালিকের জন্য আমরা ক্ষতিপুরণের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। তিনি গুজব কথায় কান না দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, জেলায় শান্তি-শৃঙ্খলা বাজায় রাখার বিষয়ে সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, জেলায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সব কিছু করা হবে। মানুষ যাতে কোন দুর্ভোগে না পরে সে ব্যাপারে আমরা সজাগ দৃষ্ঠি রাখছি বলে পুলিশ সুপার জানান।
জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোয়াজ্জেম হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ, রাঙামাটি বাস মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দীন সেলিম, রাঙামাটি অটোরিক্সা মালিক সমিতির সভাপতি অলি আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক শহিদুজ্জামান মহসিন রোমানসহ স্থানীয় সাংবাদিকরা।
ঘটনার প্রতিবাদে মহালছড়ি বাজার ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনগণ রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ সমাবেশ করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
রাঙামাটি কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রশিদ জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।