নানিয়ারচরে বাড়ছে করোনা সনাক্তের হার প্রয়োজন সচেতনতার

424

।।নানিয়ারচর প্রতিনিধি।।

সারা দেশে করোনা সনাক্তের ৬৩তম জেলা রাঙামাটি। রাঙামাটির করোনা সনাক্তের নবম উপজেলা আনাসের রাজধানী খ্যাত নানিয়ারচর উপজেলা। মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই এলাকায় ব্যবসায়ীরা আসেন ফল ক্রয়ে। দীর্ঘদিন করোনা সংক্রামণের হার কম থাকলেও ইদানীং নানিয়ারচরে বাড়ছে করোনা সনাক্তের হার।

বুধবার দুপুরে নানিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে সরেজমিনে দেখা যায়, করোনা সনাক্তের পরবর্তি চিকিৎসায় ৫টি আইসোলেশন বেড তৈরী রাখা হয়েছে। ফ্লু কর্ণার ও করোনা সম্ভাব্য রোগীকে পৃথকভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে নানিয়ারচর স্বাস্থ্য বিভাগ। করোনা সনাক্তের হার বাড়ছে কিনা জানতে চাইলে নানিয়ারচর স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. জাকিউল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন করোনা সনাক্তের হার একেবারে কম থাকলেও সারাদেশে ন্যায় নানিয়ারচরে ইদানীং করোনা সংক্রামণের হার বাড়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের তদারকির ফলে আজও করোনা সংক্রামণ সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে এন্টিজেন টেষ্টের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে করোনা সনাক্ত করা যাচ্ছে। এন্টিজেন টেষ্টে রিপোর্ট নেগেটিভ এলে আমরা জেলা সদর হাসপাতালে পিসিআর ল্যাবে স্যাম্পল পাঠাচ্ছি। ল্যাবে ফলাফল পজিটিভ হলে আমরা তার অসুস্থতার ধরণ অনুযায়ী হোম আইসোলেশন বা হাসপাতালে আইসোলেশন বেডে রাখার ব্যবস্থা করছি। এবছর জানুয়ারি থেকে শুধু ফ্লু কর্ণারে ৩হাজার রোগীকে সেবা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। সেবা নিতে আসা রোগীদের করোনা টেষ্টে অনিহা প্রসঙ্গে ডা. জাকিউল বলেন, সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশি ও করোনার সম্ভ্যাব্য লক্ষণ পেলে আমরা কোভিড টেষ্টের নির্দেশনা দিয়ে থাকি। এসময় অনেক রোগী টেষ্টে করোনা সনাক্ত হলে হোম আইসোলেশন বা আইসোলেশন ইউনিটে থাকার ভয়ে অগোচরে পালিয়ে যাচ্ছেন। এটা সমুচিত নয় বলে জানান এই চিকিৎসক।

এসময় তিনি জ্বর, সর্দি, কাশি ও ফ্লু জাতীয় যে কোন রোগের লক্ষন দেখা দিলেই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ এবং প্রয়োজনে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) টেষ্টের ও পরামর্শ দেন। হাসপাতালে কি পরিমান করোনা সনাক্ত রোগীকে সেবা দেওয়া সম্ভব জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের প্রাথমিক ভাবে আলাদা ৫টি আইসোলেশন বেড রয়েছে। যা শুধুমাত্র করোনা রোগীদের সেবা দিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও ১৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার জরুরী সেবা দিতে মজুদ রয়েছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূয়েন খীসা জানান, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছে প্রথম শ্রেণীর কোভিড যোদ্ধারা। ১৫০০জনের অধিক ব্যাক্তিকে করোনার প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে। ২য় ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে প্রায় ৮০০জনকে। এসময় করোনা পরিস্থিতিতে সকলকে টেষ্টের আওতায় আসার আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, সারাদেশে কোভিড সংক্রামণ যেভাবে বাড়ছে নানিয়ারচর ও এর ব্যাতিক্রম নয়। তবে নানিয়ারচরে করোনা এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাইনি। কিন্তু ইদানীং যেভাবে সংক্রামণ বাড়ছে তাতে এটা একটা অশনি সঙ্কেত হতে পারে। কাজেই করোনার ভয়াবাহতা আরো বৃদ্ধি পাওয়ার আগেই সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।

সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারও পরামর্শ দেন এই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র আরো জানায়, এখন পর্যন্ত নানিয়ারচর থেকে সনাক্ত হয়ে কেউ মৃত্যুবরণ করেনি। তবে ঢাকা চট্টগ্রাম থেকে আক্রান্ত হয়ে বাইরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে ৩জন করোনা রোগী। এবিষয়ে জানতে চাইলে নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিউলি রহমান তিন্নি বলেন, উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী ও বিভিন্ন সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে করোনা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি, সরকারী নির্দেশনা মেনে চলা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই আশাকরি করোনা ভাইরাস মোকাবেলা সম্ভব। উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই নানিয়ারচর স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে মোট ১৫০টি টেষ্ট পাঠানো হয়েছে রাঙামাটি করোনা ডিটেকটিভ পিসিআর ল্যাবে। এর মধ্যে মোট সনাক্ত হয়েছে ২৩জন। প্রতিবেদনটি লেখার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত হোম আইসোলেশনে আছেন ৪জন করোনা সনাক্ত রোগী। বাকিরা সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এদিকে গত এক মাসে করোনা টেষ্ট করা হয়েছে ৪৫জন। এর মধ্যে সনাক্ত হয়েছে ৪জন। টেষ্টের ফলাফল অনুযায়ী মোট সনাক্তের হার ১ দশমিক ৮শতাংশ।