স্টাফ রিপোর্টার, ১৯ নভেম্বর ২০১৫, দৈনিক রাঙামাটি : পু®পার্ঘ্য অর্পণ, শোক র্যালি ও সমাবেশের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার পালিত হয়েছে রাঙামাটির নানিয়ারচর গণহত্যার ২২তম বার্ষিকী। দিবসটি উপলক্ষে সকালে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা সদরে শোক র্যালি ও সমাবেশ আয়োজন করে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদসহ ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্্রন্ট (ইউপিডিএফ) সমর্থনপুষ্ট সংগঠনগুলো। সকাল ১০টায় উপজেলা সদরের রেস্ট হাউজ মাঠ থেকে এক শোক র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও নানিয়ারচর বাজার প্রদক্ষিণ করে উপজেলার কেন্দ্রীয় শ্মশানে শহীদদের সমাধিস্থলে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে শহীদ পরিবার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ইউপিডিএফ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের পক্ষে পুষ্পার্ঘ্য ও শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। পরে আবার র্যালি সহকারে উপজেলা রেস্ট হাউজ মাঠে গিয়ে সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৯৩ সালের ১৭ নভেম্বর জেলার নানিয়ারচর উপজেলা সদরে নিরীহ পাহাড়িদের ওপর চালানো এক সাম্প্রদায়িক হামলার মাধ্যমে ওই নৃশংস গণহত্যা সংঘটিত হয়। ২২তম বার্ষিকীতে ওই ঘটনার শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং খুনিদের বিচার ও শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নানিয়ারচর উপজেলার সভাপতি রিপন আলো চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা সভাপতি অনিল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রিনা চাকমা ও নানিয়ারচর সদর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার সেন্ট্রো চাকমা। সমাবেশ পরিচালনা করেন পিসিপি নেতা কুমেন্টু চাকমা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ১৯৯৩ সালের ১৭ নভেম্বর অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাজারে সওদা করতে যাওয়া নিরীহ পাহাড়িদের ওপর হামলা চালিয়ে ওই নৃশংস হত্যাকান্ড চালানো হয়েছে। হিংস্র হায়েনার মতো ওই নারকীয় তান্ডবলীলায় শোভাপূর্ণ চাকমা, কালোবিজা চাকমা, অর্জুন মণি চাকমা, ধীরেন্দ্র চাকমাসহ ৩০ জনের অধিক নিরীহ পাহাড়িকে হত্যা করা হয়। এছাড়া অসংখ্য পাহাড়িকে জখম ও পাহাড়িদের বাড়িঘরে আগুন দেয়া হয়েছে। কিন্তু ওই নারকীয় গণহত্যার দীর্ঘ বাইশ বছর পরও জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো রকম পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। কোনো রকম প্রতিবেদনও প্রকাশ করেনি সরকার। নানিয়ারচর গণহত্যাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে এযাবৎ সংঘটিত ডজনের অধিক গণহত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হওয়ার কারণে এখনও বিভিন্ন সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হচ্ছে। বক্তারা ওই নারকীয় ঘটনায় শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং খুনিদের বিচার ও শাস্তির দাবি জানান।
বক্তারা আরও বলেন, ঘটনার দু’দিন আগে তৎকালীন নানিয়ারচর জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু নাঈম ও থানা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান উধাও হয়েছিলেন- যা পূর্ব পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত বহন করে।
তারা দাবি করে বলেন, ওই হত্যাকান্ডে জড়িত সেটেলার বাঙালিদের সর্দার আবদুল লতিফ, আইয়ুব হাসান, ইউনুচ সওদাগর, আহমদ মিয়াসহ দোষীরা আজও বীরদর্পে সেনা ও প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়ায় এবং স্থানীয় পাহাড়ি জনগণকে হুমকি ধমকি দিয়ে ত্রস্ত করে রাখে। ওইসব সেটেলার বাঙালি সর্দার এবং তৎকালীন দায়িত্বে থাকা সেনা, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে দাবি করেন বক্তারা।
তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ১৯৯৩ সালের ওই নারকীয় গণহত্যার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে এখনও পায়তারা চলছে। যার সূত্র ধরে ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে নানিয়ারচরের বগাছড়িতে পাহাড়িদের তিনটি গ্রামে হামলা চালিয়ে অর্ধ শতাধিক বাড়িঘরে আগুন দেয়া হয়েছে।
পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান