আলমগীর মানিক , ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : দাম নির্ধারণ, অনুমোদন কিংবা জবাবদিহিতা কোনো ক্ষেত্রেই কোনো ধরণের শৃঙ্খলায় নেই রাঙামাটি শহরের বোতলজাত গ্যাস ব্যবসায়। এতে ভোক্তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন, তেমনি ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন বাজারগুলোতে কোনো প্রকার লাইসেন্স ছাড়াই অবাধে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানীর সিলিন্ডার গ্যাস। আইনের তোয়াক্কা না করে অবাধে বিক্রি করা এসব গ্যাস সিলিন্ডার যত্রতত্র বিক্রয়ের ফলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানান, এই ব্যবসা পরিচালনার জন্য তাদের কাছ থেকে এবং চট্টগ্রাম থেকে বিস্ফোরক আইনের আওতায় লাইসেন্স নেওয়ার নিয়ম থাকলেও জেলার অধিকাংশ ব্যবসায়ির কোনো বৈধ অনুমোদন নেই। তারা জনসমাগমস্থলে কোনো সতর্কবার্তা ছাড়াই এই বিপজ্জনক পদার্থ বিক্রি করছেন।
অবৈধ ভাবে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসার কারনে সরকার বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়িদের অনুমোদনের আওতায় আনতে মাঠে নেমেছে রাঙামাটির জেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাঙামাটি শহরের পুরাতন বাস স্টেশন এলাকার একটি রড সিমেন্টের দোকানে ভ্রাম্যমান আদলত অভিযান চালিয়ে দোকান থেকে অবৈধ গ্যাস সিলিন্ডার জব্ধ করে দুই হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয়। আদালত পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. রেজাউল করিম। তাকে সহযোগিতা করেন সদর উপজেলার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মোছাম্মদ নাছিমা আক্তার খানমসহ পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ।
জানা গেছে, বোতলজাত গ্যাস বিক্রির জন্য বিস্ফোরক দ্রব্যের লাইসেন্স ও ফায়ার লাইসেন্স গ্রহণের পাশাপাশি এইসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রাখার বিধান রয়েছে। অথচ বেশিরভাগ ব্যবসায়ী এই নিয়ম নীতির কোনো তোয়াক্কা না করেই সাধারণ ব্যবসার মতই চালিয়ে যাচ্ছে গ্যাসের ব্যবসা। লাইসেন্স ছাড়া গ্যাসের পরিবেশক নিয়োগ পাওয়ার কথা না থাকলেও তারা ডিলার সেজে বসে আছেন।
শহরের রিজার্ভ বাজার, বনরূপা, তবলছড়ি, ভেদভেদী, কলেজ গেইট, রাঙ্গাপানি, আসামবস্তিসহ ১০ উপজেলার বিভিন্ন বাজারগুলোর স্থানীয় রড সিমেন্টের দোকান, মুদির দোকান, গ্লাসের দোকান, হার্ডওয়্যারের দোকান, পানের দোকান, মুরগীর দোকান, ছুটা তেলের দোকানসহ বিভিন্ন দোকানে বিক্রয় করা হচ্ছে লাইসেন্স বিহীন গ্যাসের সিলিন্ডার।
এ দিকে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ব্যবসায়ীরা গ্যাসের দামও নিচ্ছেন বিভিন্ন কায়দায়। সরকারি এলপি গ্যাস ব্যক্তিবিশেষে ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৪ টাকায় বিক্রি করা হয় বলে জানিয়েছেন কয়েকজন ভোক্তা। অথচ এ বিষয়ে পেট্্েরাবাংলার দর নির্ধারণ করা আছে। বসুন্ধরা, ক্লিনহিটসহ অন্যান্য গ্যাস বিক্রির ক্ষেত্রেও এক এক দোকানে এক এক ধরণের দাম নেওয়ার হচ্ছে। ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী দোকানগুলোতে মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখার বিধান থাকলেও এই বিধান কোনো ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না।
জানতে চাইলে রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ- পরিচালক গোলাম মোস্তফা জানিয়েছেন, পুরো রাঙামাটি জেলায় ফায়ার সার্ভিস থেকে অনুমোদন নিয়ে ১০/১২ জন তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তিনি জানান, জেলায় গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রয়কারী ব্যবসায়িদের মধ্যে ৯০ভাগই অবৈধভাবে এসব দাহ্য পদার্থ বিক্রয় করছেন।
২০০৩ সালের অগ্নি নির্বাপক আইনে অনুমোদন ছাড়া এসব জিনিসপত্র বিক্রি করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।
সম্পাদনা- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান