॥ রাঙামাটি রিপোর্ট ॥ পর্যটন নগরী রাঙামাটির দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন নতুন নগর পিতা। রোববার রাঙামাটি পৌরসভার নব নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করে বিদায়ী পরিষদ। গতকাল অপরাহ্নে রাঙামাটি পৌরসভা কার্যালয়ে এই দায়িত্ব গ্রহণ ও হস্তান্তর কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। দায়িত্ব হস্তান্তরের আগে সকালে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় নতুন নগর পিতা আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, আমার অঙ্গীকার হলো শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ একটি সুখী নাগরিক সমাজ প্রতিষ্ঠা। রাঙামাটি পৌর এলাকায় আমরা বিভিন্ন ভাষাভাষি ও নানা জাতি-গোষ্ঠীর মানুষ একসাথে বসবাস করি। এই সৌভাগ্য আমাদের এনে দিয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট, তাই ঐতিহ্যের সুনাম ধরে রাখার জন্যই আমাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন আমার মিশন হবে রাঙামাটি শহরকে দুর্গন্ধ ও জঞ্জালমুক্ত একটি পরিচ্ছন্ন পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা। আমি সকলের সহযোগীতা চাই। আগামী দিনের উন্নয়ন হবে সমভাবে সকলের জন্য।
বিদায়ী মেয়র সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ভূট্টো তার বিদায়ী ভাষণে বলেন, আমি চেষ্টা করেছি রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা এবং দলীয় আদর্শের বাইরে থেকে নাগরিক সমাজের উন্নয়ন করতে। কতটুকু পেরেছি কি পারিনি, কেন পারিনি, সে বিচারের ভার নাগরিক সমাজের। তবে আজ দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে গেলেও এই পৌরসভার একজন নাগরিক হিসেবে আমি রাঙামাটি পৌরসভার উন্নয়নে আজীবন কাজ করে যাবো। নতুন পরিষদ যখনই মনে করবে, আমাকে ডাকলে বা কোনো সহযোগীতা চাইলে আমি আনন্দচিত্তে তা পালন করবো। তিনি বলেন, আমরা যাওয়ার সময় উত্তরসূড়ীদের জন্য কি রেখে যেতে পারলাম সে বিষয়ে আমি লিখিত প্রতিবেদন প্রদানের সাথে সাথে সাংবাদিক সম্মেলন করেও তা জনগণের উদ্দেশ্যে জানিয়ে গেলাম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু, তিনি রাঙামাটি পৌরসভার উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্বক সহযোগিতা থাকবে বলে আশ্বাস প্রদান করে বলেন, আমি এ এলাকার সন্তান, রাজনীতির উর্দ্ধে উঠে সকলকে কাঁেধ কাঁধ মিলিয়ে এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যেতে হবে। পৌরসভার উন্নয়ন হলে আমাদের এলাকার উন্নয়ন হবে। তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে বিদ্যুৎ। এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও আমরা পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ পাই না। অথচ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমাদের লক্ষ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। কথা ছিলো বিদ্যুৎ উপাদন হলে অঞ্চলের অধিবাসীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কিন্তু জনগণের দাবি আজ পর্যন্ত পূরণ হয়নি।
দায়িত্ব গ্রহণ ও হস্তান্তর উপলক্ষে আয়োজিত এই সংবর্ধনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, রাঙামাটি বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল তানভির আলম, রাঙামাটি পুলিশ সুপার সাইদ তারিকুল হাসান, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য মাহাবুবুর রহমান, সাবেক মেয়র হাবিবুর রহমান ও সাবেক চেয়ারম্যান কাজী নজরুল ইসলাম। পৌরসভার প্রধান নির্বাহী সোহেল পারভেজের সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য রাখেন, জেলা পরিষদ সদস্য স্মৃতি বিকাশ ত্রিপুরা, কাউন্সিলর রোকসানা আক্তার ও কালায়ন চাকমা। এছাড়া বিদায়ী ও নিবার্চিত কাউন্সিলরবৃন্দ, রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ সংবাদিকবৃন্দ এবং শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বিদায় ও বরণ অনুষ্ঠান শেষে রাঙামাটি পৌরসভা কার্যালয়ে গিয়ে নব নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন বিদায়ীরা। এ সময় নতুন মেয়রকে ১৫০ কোটি টাকায় বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বুঝিয়ে দেন বিদায়ী মেয়র।
বিগত ২০১৫ সালের ৩০শে ডিসেম্বর সারাদেশের ন্যায় রাঙামাটি পৌরসভায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন রাঙামাটি জেলা যুবলীগের সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরী। নির্বাচনের জয়লাভের পর গত ২৪ই জানুয়ারী চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে শপথ গ্রহণ করে নবনির্বাচিত পৌর পরিষদ।