॥ মঈন উদ্দীন বাপ্পী ॥
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার পর্যটন শহর রাঙামাটি। যার সৌন্দর্য সুধা উপভোগ করতে দেশ বিদেশ থেকে হাজারো পর্যটন ভ্রমণে আসেন প্রতিনিয়ত।
নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের পাশাপাশি, এ অঞ্চলের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য, বৈচিত্রময় সংস্কৃতি, দৃষ্টিনন্দন জীবনাচার পার্বত্য চট্টগ্রামকে গড়ে তুলেছে একটি বহুমাত্রিক আকর্ষণ সমৃদ্ধ পর্যটন গন্তব্য হিসেবে। এঅঞ্চলের সৌন্দর্যে তাই যুগে যুগে ভ্রমণকারীরা মুগ্ধ হয়েছেন।
শুধু রাঙামাটিই নয় গোটা বাংলাদেশকে ঘিরেই রয়েছে পর্যটন শিল্প বিকাশের অমিত সম্ভাবনা। এই সম্ভবনা উপলব্ধি করেই সরকার ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে। সরকারের সেই ঘোষণারই প্রতিফলন ঘটাতে রাঙামাটি জেলায় আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়মিত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
পর্যটন বর্ষের শুরুতেই রাঙামাটিতে কাজ শুরু করলেও সবকিছু গুছিয়ে নিতে সময় লেগেছে ট্যুরিস্ট পুলিশের। তবে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রায় সকল উপকরণ ও জনবল নিয়ে সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। রাঙামাটি পুরাতন বাস স্টেশন সংলগ্ন আর্ম পুলিশ ব্যাটালিয়নের কার্যালয়টির একটি অংশ ট্যুরিস্ট পুলিশের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে এই বাহিনীর কার্যক্রম।
রাঙামাটির নবনির্মিত এই ট্যুরিস্ট পুলিশ কার্যালয়ে কথা হলো ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) সাইফুল ইসলামের সাথে। তিনি জানালেন, এই বাহিনীটি পুলিশের মধ্যেই একটি নতুন সংযোজন। পুলিশের ১১টি উপ-বাহিনীর মধ্যে ট্যুরিস্ট পুলিশ একটি। তারা শুধু ট্যুরিস্টদের নিরাপত্তায় কাজ করবেন।
তিনি জানান, শীতের মওসুম শুরু হতেই রাঙামাটিতে প্রচুর পরিমানে পর্যটক আসছে। হোটেল মোটেল কোথাও সীট খালি নেই। রাস্তাঘাট ও দর্শনীয় স্থানগুলো এখন পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত। তিনি বলে প্রাথমিকভাবে আমাদের জনবল কম হলেও প্রয়োজনের নিরিখে আরো জনবল আসবে। পাঠানো হবে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও।
ইতোমধ্যে একটি পিকআপ এবং একটি গান বোটও পেয়েছেন তারা। ইতোমধ্যে শহরের প্রবেশমুখে এবং নদীতে টহল শুরু করেছেন তারা। তিনি জানালেন পর্যটক সংশ্লিষ্ট কোনো সমস্যায় আমাদের অবহিত করলে আমরা সাথে সাথে তাদের সহযোগীতা করবো।
এই কর্মকর্তা জানালেন, আমরা এখনো কোনো অস্ত্র ব্যবহার করছি না তবে পর্যটকদের নিরাপত্তায় লাটি, লাইট ও স্ক্যানার ব্যবহার করছি। তিনি বলেন, সারা দেশে ট্যুরিস্ট পুলিশের মূল কার্যক্রম পরিচালনা করছে ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ। আর পার্বত্য চট্টগ্রামে ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম দেখভাল করার দায়িত্ব পালন করছেন চট্টগ্রাম পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি।
তিনি আরও বলেন, রাঙামাটি ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম পারিচালনার জন্য একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও এখনো আমাদের ইউনিটে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে আমাদের পাঁচজন কনস্টেবল, একজন নায়েক, একজন এস আই, একজন এ এস আই, একজন অফিস সহকারী নিয়ে আমাদের কার্যক্রম চলছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ট্যুরিস্ট পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমাদের বিদ্যমান জনবল হয়তো যথেষ্ট নয়। তবে আমরা সবেতো শুরু করলাম প্রয়োজনের নিরিখে আরো জনবল পাঠানো হবে। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, রাঙামাটিতে ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২০১৫ সালের ৭জুন পুলিশ সুপার সম্মেলন কক্ষে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে অংশগ্রহণ করে পুলিশের ডিআইজি মো: সোহরাব হোসেন। পুলিশের ডিআইজি এসময় সন্তু লারমার সাথেও একান্ত সাক্ষাতে মিলিত হন।
এ বৈঠকের পরবর্তীতে রাঙামাটিতে অস্থায়ী কার্যালয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম পরিচালিত হলেও চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে আর্ম পুলিশ ব্যাটালিয়ন রাঙামাটি কার্যালয়ের পার্শ্ববর্তী নিজস্ব ভবন থেকে ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম চলছে।
এদিকে রাঙামাটিতে পুর্ণদমে টুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন পর্যটন ব্যবসার সাথে সংশ্ষ্টিরা। তারা জানান, ইতোমধ্যে এখানে পর্যটন মওসুমে যে সব ছোটখাট ঘটনা পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের বিব্রত করতো, আশা করা যায় এর মধ্য দিয়ে তার অবসান ঘটবে। তবে রাঙামাটি জেলার ভৌগলিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই বাহিনীর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আরো জনবল নিয়োগ করতে হবে বলে মত প্রকাশ করেন তারা।
প্রসঙ্গত পর্যটন একটি বহুমাত্রিক ও শ্রমঘন শিল্প। সবচেয়ে দ্রুত সম্প্রসারণশীল ও বৃহৎ বাণিজ্যিক কর্মকান্ড হিসেবে এ শিল্প বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি লাভ করেছে। পৃথিবীর সমগ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি ১১ জনের মধ্যে গড়ে ১ জন বর্তমানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পর্যটন পেশার সঙ্গে জড়িত। সেই তুলনায় আমাদের দেশের মানুষের অংশগ্রহণ নিতান্তই কম। পাহাড়ের সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পের বিকাশে তাই সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের উপর গুরুত্বারো করেছেন ওয়াকিবহাল মহল।