পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের নজিরবিহীন বৈষম্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে পিসিসিপি

13

।।সাইয়্যেদ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ।।

পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের প্রতি বৈষম্যমূলক বাজেট বরাদ্দের প্রতিবাদ জানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটি এক বিবৃতি দিয়েছে। ২৮ মার্চ শুক্রবার সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে পিসিসিপি দাবি জানায়, সম্প্রতি যে একপাক্ষিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা বাতিল করে পাহাড়ি-বাঙালি সকল জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সমভাবে বিতরণ করতে হবে।

পিসিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক জমির উদ্দিন স্বাক্ষরিত প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় কর্তৃক বরাদ্দকৃত সাম্প্রতিক বাজেট সংবিধানের সাম্যের নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পর্যালোচনায় দেখা যায়, বরাদ্দ প্রক্রিয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পক্ষপাতদুষ্ট। রাষ্ট্রের সম্পদ কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের জন্য নয়, এটি সকল নাগরিকের অধিকার। অথচ সরকার পাহাড়ি অঞ্চলের জনসংখ্যার প্রকৃত চিত্র ও প্রয়োজন উপেক্ষা করে একপাক্ষিক বরাদ্দ প্রদান করেছে।

খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার মধ্যে বরাদ্দের অসামঞ্জস্যতা নিম্নরূপ:
খাগড়াছড়ি: ১৯৫ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে ৩ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা (৭১.০২%)
রাঙামাটি: ৪৪ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ২২ লাখ ২০ হাজার টাকা (২৭.৭৭%)
বান্দরবান: মাত্র ৩ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা (১.২০%)
এই পরিসংখ্যান স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে, বান্দরবানকে পরিকল্পিতভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ এই জেলায় বরাদ্দ মাত্র ১.২০%, যা বৈষম্যের প্রতিচিত্র।

রাঙামাটির বরাদ্দের ৮৬.৫০% চাকমা সম্প্রদায় পেয়েছে, যেখানে বাঙালিরা পেয়েছে মাত্র ৬.৯৫%, আর মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের বরাদ্দ আরও নগণ্য। খাগড়াছড়ির ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে, যেখানে চাকমারা পেয়েছে ৭৩.০৯% বরাদ্দ।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে, এই বরাদ্দে অনিয়মের আরেকটি প্রমাণ হলো একই ব্যক্তি একাধিকবার অনুদান পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ: রাঙামাটির রনজ্যোতি চাকমা দু’বার মোট ৬ লাখ টাকা পেয়েছে। বিনৌটি চাকমা ১২টি গ্রুপের নামে ২৫ লাখ টাকা পেয়েছে। খাগড়াছড়ির ত্রিনা চাকমা ১২টি গ্রুপের নামে ২৫ লাখ টাকা পেয়েছে। অন্যদিকে, বাঙালি, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর অনেকে কোনো বরাদ্দই পাননি! এ ধরনের পক্ষপাতমূলক বরাদ্দ সংবিধানের ১৯(১) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন, যেখানে বলা হয়েছে, “রাষ্ট্র সমাজের সব নাগরিকের মধ্যে সমতা বিধান করবে।”

পিসিসিপি’র দাবি হলো-
১. বৈষম্যমূলক সাম্প্রদায়িক চাকমা বরাদ্দ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
২. বান্দরবানসহ সকল জেলার জন্য ন্যায্য বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।
৩. বাঙালি, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, সাঁওতালসহ সকল জনগোষ্ঠীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
৪. একই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে একাধিকবার বরাদ্দ দেওয়ার অনৈতিক প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।
৫. জনসংখ্যার অনুপাতে ও প্রকৃত প্রয়োজনের ভিত্তিতে বরাদ্দ প্রদান করতে হবে।

বিবৃতিতে পিসিসিপি সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি জানিয়ে উল্লেখ করে, পার্বত্য চট্টগ্রাম কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর সম্পত্তি নয়, এটি সকল জাতিগোষ্ঠীর আবাসভূমি। বরাদ্দের নামে পক্ষপাতমূলক আচরণ ছাত্র সমাজ মেনে নেবে না। এই বৈষম্যমূলক বাজেট অবিলম্বে সংশোধন করা না হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে।

বিবৃতিতে পিসিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটি জানায়, পাহাড়ের জনগণ ন্যায়বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামতে প্রস্তুত! পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা আধিপত্যবাদ চালু রেখে পাহাড়ের অন্যান্য ১২টি নৃ-গোষ্ঠীকে পিষ্ট করা যাবে না। এই পক্ষপাতমূলক বরাদ্দ বাতিল করে জনসংখ্যা অনুপাতে সমভাবে বরাদ্দ প্রদান করতে হবে, অন্যথায় পার্বত্য উপদেষ্টা সু-প্রদীপ চাকমাকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে।