পার্বত্য চুক্তি’র উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন, শান্তি প্রতিষ্ঠা নয় : প্রসিত বিকাশ খীসা

537

Prosit-khisaaaahh

স্টাফ রিপোর্টার, ৩০ নভেম্বর ২০১৫, দৈনিক রাঙামাটি (প্রস বিজ্ঞপ্তি) : ই্উনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ সম্পাদনের ১৮ বছর পূর্তির প্রাক্কালে আজ ৩০ নভেম্বর ২০১৫ সোমবার সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিগত ১৮ বছরে প্রমাণিত হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার তথা শাসকচক্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে শান্তিচুক্তি করেছিল। শান্তি প্রতিষ্ঠা বা রাজনৈতিক সমাধান লক্ষ্য ছিল না। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি বিভিন্ন সময় সভা-সমাবেশে সরকারের প্রদত্ত অঙ্গীকার লোক ঠকানোর ফন্দি ছাড়া আর কিছু নয়। স্পষ্টতই চুক্তিটি সরকারের অনুকূলে, তা সত্ত্বেও প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন করে নি, নানা উছিলায় কাল ক্ষেপণ করে চলেছে। আদৌ চুক্তি বাস্তবায়িত হবে কিনা সে নিয়েও খোদ সরকারের মধ্যেই দ্বিধা দ্বন্দ্ব রয়েছে, যা বিভিন্ন সময় রাঙ্গামাটির এসপি-সরকারি কর্মকর্তা ও দলের নেতা-কর্মীদের বক্তব্যে প্রকাশ পায়।

প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ‘চুক্তি’ বাস্তবায়ন না করলেও সরকার তার অন্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বসে নেই মন্তব্য করে ইউপিডিএফ নেতা বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে সরকার তার অন্য এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিয়োজিত। বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস করিয়ে ভিন্ন ভাষা-ভাষী জাতিগুলোর ওপর সাংবিধানিকভাবে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে। ভিন্ন ভাষা-ভাষী জাতিসমূহের জাতীয় পরিচিতি ও অস্তিত্ব ধ্বংস করতে সকল শক্তি নিয়োজিত করেছে। এ বছর ৭ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কর্তৃক গণবিরোধী ১১দফা নির্দেশনা জারির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে অঘোষিত সেনা শাসনকে বৈধতা দেয়া হয়েছে।

গেল ২৯ নভেম্বর জাতিসংঘ ঘোষিত ‘ফিলিস্তিন সংহতি দিবসে’র মত একটি সাধারণ শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বিনা উস্কানিতে সেনা-পুলিশের বেয়নেট দিয়ে নিষ্ঠুর হামলা ও ধরপাকড়ের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ইউপিডিএফ নেতা বলেন, তথাকথিত “অপারেশন উত্তরণ” আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত গণবিরোধী “১১দফা নির্দেশনার” ফলে পাহাড়ে পুরোপুরি ফৌজি শাসন কায়েম হয়েছে। পাহাড়ি জনগণ এখন সেনাবাহিনীর হাতে জিম্মি, যেন দেশের এই অঞ্চলটি সেনা কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর নিকট লিজ দেয়া হয়েছে। সেনা ক্যাম্প নির্মাণ-সম্প্রসারণের পাশাপাশি চলছে পর্যটনের নামে ভূমি অধিগ্রহণ ও উচ্ছেদ অভিযান। গণতন্ত্রের ছিটেফোঁটাও আর অবশিষ্ট নেই। সভা-সমাবেশের অধিকার এখন বুটের তলায় পিষ্ঠ। কেবল রাজনৈতিক মিটিং মিছিলে নিয়মিত হামলা নয়, পাহাড়িদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি র‌্যালিতেও হামলা চালানো হয়েছে। বিনা দোষে গ্রেফতার জেল-জুলুম, নির্যাতন, হয়রানি, ঘেরাও ইত্যাদি এখন দৈনন্দিন ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চুক্তির পর গত ১৮ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ওপর এক ডজনের অধিক বড় আকারের সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে, হাজার হাজার একর জমি বেদখল করা হয়েছে এবং বহু পাহাড়ি নারীর ইজ্জত হরণ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে ইউপিডিএফ নেতা বলেন, সরকার পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে আন্দোলনে বিভেদ ও বিভ্রান্তি ঘটিয়ে পাহাড়িদের দুর্বল করে ফেলে যুগ যুগ ধরে তাদের পদানত রাখার ফন্দি এঁেটছিল, তা বুঝতে আর কারোর বাকী নেই। জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা এখন সময়ের দাবি।

প্রসিত খীসা অবিলম্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত গণবিরোধী “১১দফা নির্দেশনা” তুলে নেয়া সহ পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা প্রত্যাহার করে মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, ভূমি অধিকারসহ স্বায়ত্তশাসন প্রদান, সেটলারদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনক পুনর্বাসন, সংবিধানে জাতিসত্তার স্বীকৃতি, ভারত প্রত্যাগত ও আভ্যন্তরীণ শরণার্থীদের পুনর্বাসন, গ্রেফতারকৃত ইউপিডিএফ-এর নেতাকর্মীসহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি, দীঘিনালায় বিজিবি কর্তৃক উৎখাত হওয়া ২১পরিবারকে নিজ জমিতে ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসন, রাঙ্গামাটির বগাছড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণসহ নিজ জায়গাজমি ফিরিয়ে দেয়া, পর্যটনের নামে সাজেক-নুনছড়ি-চিম্বুক-কেওক্রাডং পাহাড়ে পরিবেশ ধ্বংসের যে আয়োজন চলছে তা অচিরেই বন্ধ করা, স্থানীয়দের জমি ফিরিয়ে দেয়া এবং বান্দরবানের রুমা-লামা-নাক্ষ্যংছড়ি-আলিকদমসহ রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ির বিস্তৃত এলাকা জুড়ে যে ভূমি বেদখল প্রক্রিয়া চলছে তা বন্ধের দাবি জানান।

বার্তা প্রেরক : নিরন চাকমা-
প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগ, ইউপিডিএফ

সম্পাদনা, পোস্ট- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান