পাহাড়িদের বার্ষিক সামাজিক উৎসব ঘিরে তিন জেলাজুড়ে চলছে আনন্দ আয়োজন

274

॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥

বাংলা পঞ্জিকা বর্ষের শেষ লগ্নে পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করতে এখন পাহাড় জুড়ে বইছে উৎসবের আমেজ। পার্বত্য জেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর এই উৎসবগুলো আলাদা নামে হলেও সমতলের মানুষের কাছে বেশ কিছুদিন ধরেই বৈসাবী উৎসব নামে পরিচিত হয়ে উঠঠেছে। এ উৎসবকে ঘিরে রাঙামাটিতে ৫ দিনের বিজু বৈসু সাংগ্রাই মেলা উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গত সোমবার ৪টায় রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনিস্টিউট প্রাঙ্গনে বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু সংস্কৃতি মেলার সূচনা করেন, সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার এমপি। এছাড়া পাহাড়ে সপ্তাহ ব্যাপী চলছে নানা আয়োজন।

পাহাড়ের মানুষের এই প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক বিহু বিষু পালন করা হচ্ছে এবার সাড়ম্বরে। আলাদা নামে হলেও চাকমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা ও মারমা জাতিগোষ্ঠির মানুষ একযোগে পালন করে এ উৎসব। চাকমারা বিজু, ত্রিপুরারা বৈসুক, মারমারা সাংগ্রাই আর তংচঙ্গ্যারা বিষু নামে এ সামাজিক উৎসব পালন করে। তবে অনেক মানুষ এ উৎসবকে বৈসাবি নামেও চেনে। উৎসবকে ঘিরে নানান আয়োজন শুরু হয়েছে পাহাড়ি গ্রামে। সপ্তাহ জুড়ে চলবে এ উৎসব।

উৎসবের বর্ণিল আয়োজনে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সাংস্কৃতিক ইনিষ্টিটিউট প্রাঙ্গনে ৫ দিনের বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু সংস্কৃতি মেলায় ৩০টি ষ্টলে নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর আলোকচিত্র ও ঐতিহ্যবাহী বস্ত্র ও হস্ত শিল্প সামগ্রী প্রদর্শীত হয়। এছাড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিদের ঐতিহ্যবাহী যন্ত্র সংগীত, উভগীত, গেংখুলী গীতসহ নানান সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও শিশু চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

এছাড়া এই উৎসবকে স্বাগত জানিয়ে শহরে বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। রাঙ্গামাটি সরকারী কলেজ মাঠ থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির ইনিষ্টিটিউটে শেষ হয়। র‌্যালী শেষে অনুষ্ঠিত হয় আদিবাসীদের মনোজ্ঞ ডিসপ্লে। আর এই বৈসাবি উৎসবকে ঘিরে সকল ক্ষুদ্র জাতিকে এক কাতারে নিয়ে আসে প্রতিবছর।
রাঙ্গামাটি সংসদ সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবিকে বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু-বিহু নামে পালন করে থাকে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির সংমিশ্রনে বৈসাবি এক বৈচিত্রময় রূপ ধারণ করেছে। এটা মূলত পুরোন বছরকে বিদায় দেওয়া আর নতুন বছরকে বরণ করার জন্য পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের এ বৈসাবি উৎসব। এই উৎসবটি বয়ে আনে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলন হয়। থাকেনা কোন হিংসা-বিদ্বেষ। আশা করি বৈসাবির আনন্দ উচ্ছ্বাসের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। পাহাড়ে বয়ে আসছে শান্তি ও সম্প্রীতি এক মিলন মেলা।

১২ এপ্রিল বৈসাবী উৎসবের প্রথম দিন চাকমা, ত্রিপুরা, তংচঙ্গ্যা জাতি ফুল বিজু বৈসু কিংবা বিষু। এদিন নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে শুরু হবে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।

পরদিন ১৩ এপ্রিল চৈত্র সংক্রান্তির দিনকে বলা হয় মুল বিজু, বৈসু, বা বিষুু। এ দিন প্রতি ঘরে রান্না হবে ঐতিহ্যবাহী পাচন। ঘরে ঘরে চলে অতিথি আপ্যায়ন। আর ১৪ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত চলে মারমা ও রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী জল খেলি তথা পানি খেলা উৎসব। রাখাইন, মারমা তরুন তরুনীরা জলখেলিতে অংশ নিয়ে উৎসবে মেতে উঠে।

করোনা অতিমারীর কারনে গত তিনটি বছরে বৈসাবি উৎসবের আয়োজন ছিল সীমিত। এবার করোনামুক্ত পরিবেশে সামাজিক উৎসবকে কেন্দ্র করে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছে পাহাড়ের মানুষ। সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে রাঙ্গামাটিসহ পাহাড়ের সর্বত্র বিজু বৈসুক সাংগ্রাই উৎসব আনন্দঘন পরিবেশে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি আর সৌহাদ্য বাড়বে এমন প্রত্যাশা সকলের।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে বসবাসরত ১৩ নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর উদ্যোগে বিজু, সাংগ্রাইং, সাংক্রান, সাংক্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, জল উৎসব ও বাংলা নববর্ষ উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্যদিয়ে পালন করা হয়।