॥ আলমগীর মানিক ॥
তিন পার্বত্য জেলার মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে চলতি বছরের শিক্ষা বৃত্তি বিতরণ শুরু করেছে উন্নয়ন বোর্ড। এ বছর শিক্ষার্থীদের ২ কোটি টাকার বৃত্তি প্রদান করা হবে। সোমবার রাঙামাটি জেলার নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তি বিতরণকালে চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরাও যাতে তাদের মেধার বিকাশ ঘটাতে পারে সেই লক্ষ্যেই উন্নয়ন বোর্ড শিক্ষাবৃত্তি কার্যক্রম চালু রেখেছে। প্রতি বছর এই বৃত্তির পরিমাণ বাড়তে বাড়তে এখন দুই কোটিতে পৌঁছেছে উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, আগামী বছর থেকে একটি ভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে আরো এককোটি টাকা বৃত্তি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হবে।
নিখিল কুমার চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড জাতির পিতার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান। বঙ্গবন্ধু সেদিন পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের মানুষের কল্যাণ চিন্তা করেছিলেন বলেই আজ উন্নয়ন বোর্ড তিন জেলার উন্নয়নের বিস্তৃত ভূমিকা পালন করতে পারছে। তিনি পাহাড়ের শিক্ষার্থীদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার স্মার্ট সিটিজেন হিসেবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প পাহাড়ের শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে পরিণত করতে হবে। উন্নয়ন বোর্ড নিরলসভাবে সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নেই কাজ করে যাচ্ছে।
সোমবার (৩ এপ্রিল) সকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাইনী হল রুমে শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তির চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা। বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য্য প্রফেসর ড: সেলিনা আখতার, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাঃ প্রীতি প্রসুন বড়–য়া, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য প্রশাসন ইফতেখার আহমেদ, সদস্য বাস্তবায়ন মোহাম্মদ হারুণ উর রশিদ ও সদস্য পরিকল্পনা মোঃ জসিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আল হকসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী বক্তব্য রাখেন। এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তুষিত চাকমাসহ অন্যান্য কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও অভিভাকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নিখিল কুমার চাকমা আরো বলেন, পাহাড়ের দুর্গম এলাকার কোনো মেধাবী শিক্ষার্থী যেনো ঝরে না পড়ে আমরা তা আন্তরিকভাবে দেখছি। তিনি বলেন, শুধু শিক্ষা বৃত্তি নয়, পার্বত্য এলাকার ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি নিজেদের আত্ম কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে উন্নয়ন বোর্ড কম্পিউটার প্রশিক্ষণসহ নানামুখি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠালগ্ন হতেই তিন পার্বত্য জেলায় বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সামগ্রিক কল্যাণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে যোগাযোগ, শিক্ষা, তথ্য-প্রযুক্তি, শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য, কৃষি ও পানীয় জল ব্যবস্থাপনা, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, পর্যটনের উন্নয়ন ও বিকাশ, নারীর ক্ষমতায়ন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ইত্যাদি সেক্টরে কাজ করে যাচ্ছে। চেয়ারম্যান বলেন, উন্নত সমৃদ্ধ জাতি গঠনে গুণগত শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। এই লক্ষ্যেই আমরা বৃত্তি প্রদান করছি। এর পরিমাণ ছোট হলেও তা শিক্ষার্থীদের জন্য কিছুটা হলেও সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।
উন্নয়ন বোর্ড এ বছর রাঙামাটি জেলার বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ের ৪০৬ জন এবং কলেজ পর্যায়ে ৩৪৫ জনসহ মোট ৭৫১ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করছে। বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ের প্রতি জনকে ১০ হাজার টাকা করে ৪০ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা এবং ৩৪৫ জনকে ৭ হাজার টাকা করে ২৪ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়। শীঘ্রই পার্বত্য বাকি দুই জেলায় বৃত্তির অর্থ বিতরণ করা হবে।