রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে ঘটে যাওয়া সহিংসতার সাথে দেশের বাইরের শক্তি ও পতিত স্বৈরাচারের ইন্দন রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তবর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, যারাই শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করবেন বা পাহাড়ের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করা হবে। তিনি যেই হোন কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
শনিবার রাঙামাটিতে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে মত বিনিময়ের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লে: জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম। রাঙামাটি সেনা রিজিয়নে অনুষ্ঠিত এ মত বিনিময় সভায় পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমাসহ স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও আঞ্চলিক দলের নেতাগণসহ নিরাপত্তা বাহিনীর উদ্বর্তন কর্মকর্তারা এবং গণামধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টারা সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে সবাই বলেছেন আমরা সম্প্রীতি চাই। আমরা নেতৃবৃন্দের মাঝে শান্তির পক্ষে যে আন্তরিকতা দেখেছি, তাতে বোঝা যাচ্ছে এখানে তৃতীয় কোনো পক্ষ পাহাড়ি বাঙালিদের মাঝে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। অথবা বাইরে থেকে কেউ ষড়যন্ত্র করে পাহাড়ের সম্প্রীতি নষ্ট করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলোর পেছনের কারণ খুঁজে বের করতে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। পাশাপাশি আহতদের চিকিৎসায় ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। তিনি আইন শৃঙ্খলার উন্নতিকল্পে প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য গণমাধ্যকর্মীদের সহযোগীতা কামনা করেন।
তিন উপদেষ্টা ছাড়াও সভায় পুলিশের আইজি, বিজিবির মহাপরিচালক, দুইটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান, সেনাবাহিনী চট্টগ্রাম রেঞ্জের জিওসি, রাঙামাটির ব্রিগেড কমান্ডার ও পুলিশ সুপারসহ নিরাপত্তা বাহিনীর উদ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাঙামাটি সেনা রিজিয়নের প্রান্তিক মিলনায়তনে বেলা সাড়ে ১২ টা থেকে অনুষ্ঠিত দুইঘন্টাব্যপী মতবিনিময় সভায় রাঙামাটির বিভিন্ন সরকারী অফিসের প্রধানগণ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি ও জেএসএসর নেতৃবৃন্দ, সাবেক এমপি উষাতন তালুকদার, চাকমা সার্কেল চীফসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিগণ, রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ, পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দ তাদের মতামত তুলে ধরেন।
সভায় জেএসএস এর পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে জানানো হয়, শুক্রবার রাঙামাটিতে সংঘঠিত সাম্প্রদায়িক হামলার সাথে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস এর কোনো সম্পর্ক ছিল না।
এদিকে রাঙামাটিতে প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা অব্যাহত রয়েছে। মানুষজন জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। পুরো শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের ডাকে রাঙামাটিতে সব ধরনের পণ্য ও যাত্রীবাহি যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
অপরদিকে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফ এর ডাকে তিন পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘন্টার সড়ক ও নৌ পথ অবরোধ কর্মসূচি চলছে। শনিবার সকাল থেকে রাঙামাটি শহরে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, আর্মড পুলিশসহ র্যাব সদস্যদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।