॥ অর্ণব মল্লিক ॥
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ৪নং কাপ্তাই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের দুর্গম একটি পাহাড়ী এলাকার নাম হরিণছড়া। যেখানে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌ-পথ। অর্থাৎ কাপ্তাই জেটিঘাট থেকে ঘন্টাখানেক ইঞ্জিনচালিত বোট দিয়ে নৌ-পথ পাড়ি দিয়ে ওই এলাকায় পৌঁছাতে হয়। যেখানে দুইটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও ছিলোনা কোন উচ্চ বিদ্যালয়। যার ফলে সেখানকার স্থানীয় শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট করে প্রাথমিকের লেখাপড়া সমাপ্ত করলেও উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার জন্য দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে কাপ্তাই সদরে আসতে হতো।
তবে ওই হরিনছড়ার বেচারাম কারবারী পাড়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশেষ উদ্যোগে এবং এলাকাবাসীর সহযোগীতায় গত ২০২২ সালে গড়ে তোলা হয় হরিনছড়া উচ্চ বিদ্যালয়। এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ষষ্ট-দশমী শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক শিশির কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা জানান, মাত্র ২৯ জন শিক্ষার্থী, ৬ জন শিক্ষক এবং ১ জন অফিস সহায়ক নিয়ে আমরা পাঠদান কার্যক্রম শুরু করেছি। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে আমরা এলাকার শিক্ষা বিস্তারের কথা চিন্তা করে বিনা বেতনে এখানে শিক্ষকতা করে যাচ্ছি। প্রধান শিক্ষক আরোও জানান, এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দারা অনেক গরীব হওয়াতে সকল ছাত্রছাত্রী ঠিকভাবে বেতনও দিতে পারেনা। তাই মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীরা যৎ সামান্য যা বেতন দেয়, তা দিয়ে আমরা চেয়ার-টেবিল এবং প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য খরচ বহন করে থাকি। এভাবেই চলছে আমাদের পাঠদান কার্যক্রম।
বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক রুপন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, জনি তঞ্চঙ্গ্যা, নুহাইচিং মারমাসহ সকলে বিদ্যালয়টির উন্নয়নে এমপিও ভুক্তকরণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বসন্ত কুমার কার্বারী জানান, দূর্গম এই জনপদে ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডে কোন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। তাই এই এলাকার ছেলে মেয়েরা ৫ম শ্রেণী শেষ করে অনেকদূরে গিয়ে বাসাভাড়া নিয়ে বা হোস্টেলে থেকে পড়ালেখা করে আসছে। আবার আর্থিক অনটনের কারনে অনেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর আর পড়ালেখা করতে পারেনি। তাই আমরা এলাকার শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে সম্পূর্ণ স্থানীয় উদ্যোগে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত করেছি। যেখানে এখনো পর্যন্ত শিক্ষকদের কোন বেতন আমরা দিতে পারি নাই।
তিনি আরোও জানান, হরিণছড়া মুখ, ভাঙামুড়া, পাংখোয়া পাড়া, বেচারাম কার্বারী পাড়া, নবীন মেম্বার পাড়া হতে প্রায় ৪- ৫ কি: মি: পাহাড়ী পথ পাড়ি দিয়ে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসে। তাই সরকারি সাহায্য ছাড়া আমাদের বিকল্প কোন পথ নেই।
৪নং কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ জানান, এখানে সরকারি দুইটা প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে এখানে কোন উচ্চ বিদ্যালয় ছিলোনা। পরে এলাকাবাসীর উদ্যোগে আমরা অনেক দিন ধরে চেষ্টার ফলে ২০২৩ সালের জান্য়ুারি থেকে এখানে বিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু করেছি। দুর্গম অঞ্চলে শিক্ষা ব্যবস্থার কথা চিন্তা করে এই বিদ্যালয়টি এমপিও করার উদ্যোগ গ্রহনের জন্য অনুরোধ জানাই।
এদিকে সম্প্রতি বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেন কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমন দে। তিনি জানান, অত্যন্ত দূর্গম এলাকায় এই প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দূর্গম এলাকায় যাতে শিক্ষা কার্যক্রম আরোও প্রসারিত হতে পারে সেই বিষয়ে যথেষ্ট আন্তরিক। তাই কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে যাতে এই প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত করা যায় সেই জন্য সব ধরনের সহায়তা করা হবে।