স্টাফ রিপোর্টার, ১৮ জানুয়ারি ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : পার্বত্যচুক্তি পুর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ও সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশনের দাবিতে তিন পার্বত্য জেলায় দীর্ঘ মানববন্ধন করেছে তিন পাহাড়ি সংগঠন। পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক, আদিবাসী ফোরাম এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার সকালে বান্দরবান ও রাঙামাটিতে মানব বন্ধন পালন করা হয়।
আয়োজকরা জানায় খাগড়াছড়ির পানছড়ির দুদুুকছড়ি থেকে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুনধুম পর্যন্ত প্রায় ৩শ’ কিলোমিটার দীর্ঘ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। সকালে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান, বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান, আদিবাসী ফোরামের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন খীসা বক্তব্য দেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে জনগণকে নানা ধরণের বিভ্রান্তিকর তথ্যদিয়ে যাচ্ছে। অথচ চুক্তির মৌালিক বিষয়গুলো বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগই নেওয়া হচ্ছে না। বরং চুক্তি বিরোধী কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এতে করে পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
আমাদের বান্দরবান প্রতিনিধি নুরুল কবির জানান, বান্দরবান জেলায় সোমবার সকাল দশটা থেকে এগারটা পর্যন্ত এক ঘন্টা কর্মসূচি পালিত হয়। বান্দরবান শহর থেকে শুরু করে গণ মানববন্ধনে অংশ নেন কয়েক হাজার পাহাড়ি বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। বান্দরবান শহর থেকে শুরু করে মানববন্ধনের লাইন ফারুক পাড়া, ডলু পাড়া,বান্দরবান-থানছি সড়কে ১৬মাইল পয়েন্ট, টংকাবতী, লামা উপজেলা, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মিয়ানমার সীমান্ত ঘুমধুম ও রাঙামাটির বাংগালহালিয়াসহ প্রায় তিনশ’ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলে মানববন্ধন। কর্মসূচিতে বান্দরবানে নেতৃত্ব দেন আদিবাসী ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি ও সিএইচটি(পার্বত্য চট্টগ্রাম) হেডম্যান নেটওয়ার্ক এর নেতৃবৃন্দ। এ সময় বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের হেডম্যান নেটওয়ার্ক সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও তারাছা মৌজা হেডম্যান উনিংহ্লা বলেন, ১৮বছরেও চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারনে আমরা উদ্বিগ্ন। চুক্তির দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং দেশের সমতল অঞ্চলের বসবাসরত আদিবাসীদের জন্য আলাদা ভূমি কমিশন গঠনের দাবিতে আমরা এই কর্মসূচি পালন করেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি পালন করে যাব।
জুরাছড়ি ও বরকলে গণমানববন্ধন :
বরকল প্রতিনিধি : পার্বত্য চুক্তি এ অঞ্চলের মানুষের মুক্তির সনদ। বেচেঁ থাকার একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু দীর্ঘ ১৮ বছরেও সরকার চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না করে পার্বত্যঞ্চলের মানুষের সাথে প্রতারণা করছে। অবিলম্বে এ প্রতারণা বন্ধ করে চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্বত্যঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন। নইলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম হেডম্যান নেটওর্য়াক, হেডম্যানএসোসিয়েশন, আদিবাসী ফোরাম ও নাগরিক কমিটির যৌথ উদ্যোগে পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন ও সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের ভূমি কমিশন গঠনের দাবিতে সোমবার বরকল উপজেলা পরিষদের মাঠ প্রাঙ্গণে ঘন্টা ব্যাপী গণ- মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
উপজেলা হেডম্যান এসোসিয়েশনের সভাপতি হেডম্যান মিলন শংকর চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণ- মানববন্ধনে উপজেলা হেডম্যান এসোসিয়েশনের সহ- সাধারণ সম্পাদক হেডম্যান নিলাময় চাকমা,পার্বত্য চট্টগ্রাম হেডম্যান নেটওর্য়াক সদস্য দীপেন দেওয়ান (টিটু) উপজেলা হেডম্যান এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রভাত রঞ্জন চাকমা ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিলিপ কুমার চাকমা সুশীল সমাজের প্রতিনিধি অপূর্ব মিত্র চাকমা উপজেলা কার্বারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি নন্দ বিকাশ চাকমা কার্বারী নলেনী কুমার চাকমা ও হেডম্যান লালতন পাংখোয়া বক্তব্য রাখেন।
এদিকে কর্মসূচী আওয়াতায় জুরাছড়ি উপজেলায়ও নানারঙের প্লাকার্ড ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে এলাকাবাসী। এতে নেতৃত্ব দেন হেডম্যান নেটওয়ার্ক উপজেলা সভাপতি মায়ানন্দ দেওয়ান এবং আধিবাসী ফোরামের উপজেলা সভাপতি প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা। সংহতি প্রকাশ করে যোগদেন কার্বারী এসোশিয়েসন। কর্মসূচিতে একাত্বতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন উপজেলা চেয়ারম্যান উদয়জয় চাকমা, ১নং ইউপি চেয়ারম্যান ক্যানন চাকমা, প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুরেশ কুমারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশিল সমাজ, নাগরিক কমিটি ও কার্বারী প্রতিনিধিরা।
পোস্ট- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান