পাহাড়ে নানাভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে আমরা চাই সৌহার্দপূর্ণ পার্বত্য চট্টগ্রাম

84

॥ আলমগীর মানিক ॥

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাথে কথা বলে আমরা অনুধাবন করেছি যে, পাহাড়ে নানাভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। এই অঞ্চল দেশ ও জাতির জন্য একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল, আমরা চাই এখানে সোহার্দপূর্ণ পরিবেশে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মানুষ এক সাথে বসবাস করুক। পারস্পরিক আস্থার সঙ্কট থাকলে যেমন শান্তি বিঘিœত হবে, তেমনি মানবাধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত না হলে মানুষের মাঝে নির্ভরশীলতা আসবে না। তিনি সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা বিভিন্ন পেশার মানুষকে কাছ থেকে যে মতামত ও অভিযোগ পেয়েছি তা নিয়ে কাজ করবো এবং এখানে কোনোভাবেই যেন মানবাধিার লঙ্ঘিত না হয় সে বিষয়ে সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবো।

বুধবার (১৮ জানুয়ারি) রাঙামাটিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরো টিম উপস্থিত থেকে এক সমন্বিত গণশুনানীর আয়োজন করে। এতে তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন পেশার মানুষ তাদের অভিযোগ ও মতামত সম্বলিত অনুভূতি তুলে ধরেন। গণশুনানী পরিচালনাকালে কমিশন চেয়ারম্যান উপরোক্ত মন্তব্য করেন। রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী, রাঙামাটির পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য মো. সেলিম রেজা, নারায়ণ চন্দ্র সরকার, কংজরী চৌধুরীসহ কমিশসনের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ। রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত গণশুনানীকালে তিন পার্র্বত্য জেলার জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান, কার্বারী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যমকর্মী ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
চেয়ারম্যান ড. কামাল বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান অপহরণ, গুম-খুনসহ সশস্ত্র তৎপরতা মাধ্যমে ব্যাপক চাঁদাবাজির মতো ঘটনাগুলোয় মানবাধিকার কমিশন অসন্তুষ্ট। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো হতাশ হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। কাজেই আমরা আন্তরিকতার সাথে এ এলাকা নিয়ে কাজ করবো।
গণশুনানিতে তিন পার্বত্য জেলা থেকে আসা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, ০২রা ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি হলেও পার্বত্য এলাকায় শান্তি ফিরে আসেনি। যাদের সাথে চুক্তি করেছে সরকার তারা এখনো অস্ত্র ছাড়েনি। চুক্তিতে অবৈধ অস্ত্র সরকারের কাছে জমাদানের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করতে হবে উল্লেখ থাকলে ও পাহাড় থেকে তারা অস্ত্র জমা না দিয়ে প্রতি নিয়ত খুন-গুমসহ পাহাড়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে রাখছে। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বলেন, সংবিধানের এক নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে আমাদের দেশের নাম হবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। কিন্তু দেশের এক দশমাংশ এলাকা বিস্তৃত পার্বত্য চট্টগ্রামকে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে এটা উপজাতীয় অধ্যুষিত এলাকা। এর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠিকে অস্বীকার করা হয়েছে। প্রত্যেক নাগরিক সাংবিধানিকভাবেই সমান সুযোগ পাওয়ার কথা সংবিধানে উল্লেখ থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা পরিষদ, উন্নয়ন বোর্ডে শুধুমাত্র উপজাতীয়দেরকেই কৌটা সুবিধা দেওয়া হয়ে আসছে। এই ক্ষেত্রে অত্রাঞ্চলে বসবাসরত বাঙ্গালীদের মানবাধিকার লঙ্গিত হচ্ছে।

গণশুনানীতে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বলেন, আঞ্চলিকদলীয় সন্ত্রাসীদের ভয়ে চুক্তি সম্পাদনকারী দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের নিজ বসতঘরে থাকতে পারে না। এলাকায় গেলে আঞ্চলিক দল গুলোর হাতে খুন-গুম হতে হয়। জেলা পরিষদের সদস্য হয়েও নি ঘরে থাকতে নাপারাটা কি মানবাধিকার লঙ্গণ নয়? এমন প্রশ্নও তুলেছেন রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য ও কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অংসুছাইন চৌধুরী। অটোরিক্সা সমিতির প্রতিনিধিরা বলেন, পাহাড়ে প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিয়ে এখানে যাত্রীবাহী গাড়ি চালাতে হয়। এর পরে ও বিভিন্ন এলাকায় যাত্রীবাহী অটোরিকশা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এখানে কোনো প্রকার জীবনের নিরাপত্তা নেই। পাহাড়ে এই সন্ত্রাসীদের ধারা প্রতিনিয়ত গুম খুন হতে হচ্ছে। তাহলে পাহাড়ে সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা কোথায়?

ব্যবসায়ি নেতৃবৃন্দরা বলেন, পার্বত্য জেলা গুলোতে বসবাসরত সাধারণ মানুষ ভালো নেই। পার্বত্য চুক্তি হলে ও আমাদের প্রতিনিয়ত চাঁদা দিতে হচ্ছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের। তাহলে চুক্তি হলেও কেন আমাদের চাঁদা দিতে হবে সন্ত্রাসীদের? জনপ্রতিনিধিরা বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদের সামান্য দুই লাখ টাকার রাস্তার কাজ করতে গেলেও উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিতে হয়!

এদিকে গণশুনানীতে অংশ নেওয়া পাহাড়ি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সরকার শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের তেমন কোনো ভূমিকা রাখছে না। যার কারণে পাহাড়েও শান্তি ফিরে আসছে না। বিধিবিধান মোতাবেক চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসবে না বলেও মন্তব্য করেন তারা।