॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥
রাঙামাটি পুলিশের দৃঢ়তায় অপহরণের অল্প সময়ের মধ্যেই উদ্ধার হয়েছে কাউখালীর ইটভাটা থেকে অপহৃত তিন হতভাগ্য শ্রমিক। সশস্ত্র পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা তাদের ইটভাটায় কাজ করা অবস্থায় অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যাওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যেই সোমবার ভোরে তাদের উদ্ধার করা হয়। গত বুধবার মধ্যরাতে কাউখালীর কলমপতি ইউনিয়নের তারাবুনিয়ার খাঁজা গরীবে নেওয়াজ ইটভাটা ভাটা থেকে এই তিন শ্রমিককে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে দূর্গম জঙ্গলে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। অপহরণের সংবাদ পাওয়ার পর থেকেই পুলিশের কয়েকটি টিম সাহসিকতার সাথে সাড়াশি অভিযানে নামে। পুলিশের সাড়াশি অভিযানে কোনঠাসা হয়ে অবশেষে জিম্মীদের রেখেই পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় সন্ত্রসীরা। উদ্ধারকৃত শ্রমিকদের নিয়ে সোমবার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।
সোমবার ভোররাতে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া তিন শ্রমিক হলেন জিয়াউর রহমান জিকু(২৮), আহসান উল্লাহ(২৯) ও মো: মোসলেম উদ্দিন(৪০) অপহরণের পর তাদের মুক্তিপন হিসেবে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেছিল সন্ত্রাসীরা। শ্রমিক অপহরণ হওয়ার দুইদিন পর কাউখালী থানায় আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা করে ইটভাটার মালিক। এর পরদিনই অপহরণে জড়িত থাকার দায়ে দু’জনকে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ আহমেদ একে পুলিশে একটি বড় সাফল্য বলে উল্লেখ করে জানান, কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের দুর্গম ডাবুন্যাছড়ি ও আশে পাশের বিস্তৃৃত এলাকায় পুলিশের টানা অভিযানের মুখে টিকতে না পেরে অপহরণকারীরা অপহৃতদের হাটহাজারীর সীমান্তবর্তী এলাকায় ফেলে পালিয়ে যায়। এ সময় অভিযানে থাকা কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ(তদন্ত) মোঃ আব্দুল হালিমের নেতৃত্বে কাউখালী থানা পুলিশের একটি দল তাদেরকে কাউখালীতে নিয়ে আসে।
কাউখালী থানার ওসি মো. পারভেজ আলী জানান, এই অপহরণের সাথে সরাসরি জড়িত দুই পাহাড়ি সন্ত্রাসীকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর রাত ১০টায় কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা এলাকা থেকে মুক্তিপণের অগ্রিম ৫ লাখ টাকা গ্রহণকালে ২ জনকে আটক করা হয়। পরে তাদের আদালতে প্রেরণ করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতদের দেয়ার তথ্যের ভিত্তিতে অপহৃতরা ডাব্বুনিয়া এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাবু মারমার হেফাজতে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মারুফ আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) শাহনেওয়াজ রাজু বিপিএম, পিপিএম অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কাপ্তাই সার্কেল) রওশন আরা রব সহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মকর্তারা জানান, পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় ওসি পারভেজ আলী তার থানার ওসি (তদন্ত) মো. আব্দুল হালিমের নেতৃত্বে পুলিশের ৫টি টিমকে বিভক্ত করে কাউখালীর ডাব্বুনিয়া এলাকার সম্ভাব্য স্থানটি ঘিরে ফেলে এবং পুলিশের সবকটি টিম একত্রিত হয়ে দুর্গম ডাব্বুনিয়া ছড়া পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করে। পুলিশের অভিযানে কোনঠাসা হয়ে সন্ত্রাসীরা অপহৃতদের কাউখালীর রাউজানের রাবার বাগান এলাকায় ফেলে চলে যায়। পরে অপহৃতরা রাউজান হয়ে হাটহাজারীর থানার ফতেয়াবাদ এলাকায় ইটভাটা মালিক আলমগীর কোম্পানীর সন্ধানে যায়। এ খবর অভিযানে থাকা পুলিশের ওসি (তদন্ত) আব্দুল হালিম জানার পর তৎক্ষণাৎ ফতেয়াবাদ এলাকায় গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। পরে তাদের কাউখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাঙামাটিতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। এই ঘটনার সাথে আরো কারা কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।