॥ স্মৃতিবিন্দু চাকমা ॥ প্রকৃতির কোলে ঘুমিয়ে থাকা পাহাড়ি এক গ্রামের নাম বগাখালী। এ যেন সভ্যতা থেকে যোজন যোজন দুরে গজিয়ে ওঠা নির্জীব নিষ্প্রাণ এক গ্রাম। প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে জুমে যাওয়া, আর জুম থেকে ফিরে পেটে চারটে গুঁজে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়া। এমনি এক বৈচিত্রহীন ঘেরাটোপে বাঁধা এই পাহাড়ি গ্রামের মানুষগুলোর নিয়ত জীবন। জেলা সদর থেকে কত দুরে, সে হিসেবে বাদ দিলেও এলাকার মানুষ বলে উপজেলা সদর থেকেই এই গ্রামের দুরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলার পিছিয়ে থাকা উপজেলা জুরাছড়ির চার ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে দূর্গম দুমদুম্যা ইউনিয়নেরই একটি গ্রামের নাম বগাখালী। উপজেলা সদর থেকে দুরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। যোগাযোগের জন্য নেই কোনো বাহন, দুর্গম পাহাড়ি পথে পায়ে হেটে এই ৬০ কিলোমিটার অতিক্রম সময় লাগে পাক্কা দুই দিন।
আগাগোড়া জুমচাষের উপর নির্ভরশীল এই জনপদের মানুষ এখন স্বপ্ন দেখছে তাদের জীবন ছকে বেঁধে শতাব্দী পার করলেও তাদের ঔরসে জন্ম নেয়া শিশুগুলো সভ্যতার হাত ধরে বেড়ে উঠুক। অসুখ বিসুখে চিকিৎসা সুবিধা না পেলেও অন্তত তাদের শিশুরা যেন শিক্ষার আলোকিত পথে হাটতে পারে সেই ব্যবস্থা হোক। অনেকেই তাই এনজিওর চালু করা প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার পর ছোট্ট শিশুটিকে উপজেলা সদরে রাখার কসরত করছেন অবাস্তব স্বপ্নে। এতে শিশুটি যেমন পিতৃমাতৃহারা হয়ে এক নির্জীব মানুষে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে, তেমনি উপজেলা সদরে ঘর ভাড়া নিয়ে বার্ষিক ৩০ থেকে ৪০হাজার টাকা ব্যয় করাও তাদের পক্ষে শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়ে উঠছেনা। এক সময় স্বপ্ন গুটিয়ে নিয়ে শিশুকে নামিয়ে দিচ্ছে জুম ক্ষেতে। প্রাথমিক বিদ্যালয় যাও আছে, প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ চুকে গেলে তাদের শিক্ষা জীবনেরও ইতি ঘটছে। কারন এই দুর্গম জনপদে কোনো উচ্চ বিদ্যালয় নেই।
দুমদুম্যা ইউপি চেয়ারম্যান শান্তিরাজ চাকমা কথা প্রসঙ্গে জানালেন, কোনো মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় অনেকে শিশুদের উপজেলা সদরে ঘর ভাড়া নিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন বটে। আর্থিক অনটনে আবার তাদের শিক্ষা জীবনের ইতি ঘটছে। তিনি জানান, এলাকার সকলে মিলে চেষ্টা করে বিগত ২০১০ সালে বগাখালী বাজারে একটি নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যাল স্থাপন করে। কিন্তু শর্তের বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে এই বিদ্যালয় এখনও পাঠদানের অনুমতি পায়নি। এতে শিশুদের শিক্ষাচেষ্টা যেমন ব্যর্থ হচ্ছে তেমনি আর্থিক দৈন্যতা এবং শিক্ষক সঙ্কটে বন্ধ হতে বে ছে বিদ্যালয়টি।
এই ইউপি চেয়ারম্যান স্কুলটির পাঠদানের অনুমোদনসহ জেলা সদরের সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তাদের এ বিষয়ে সদয় হবার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সাতে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে সুদৃষ্টি প্রত্যাশা করেছেন যেন শর্ত শিথীল করে এবং ফাইল চালাচালির ধান্দাপথ বাদ দিয়ে এই বিদ্যালয়টিকে ২০১৭ সালে পাঠদানের অনুমতি প্রদান করা হয়
এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান উদয় জয় চাকমা বলেন, বগাখালী নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি পাঠদানের অনুমতি পাওয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, তিনি আশা প্রকাশ করেন আগামী বছর পাঠদান অনুমোদনসহ বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রেও উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রকল্প নেওয়া হবে।