১৮ অক্টোবর ২০২১, ঢাকা ব্যুরো অফিস, দৈনিক রাঙামাটি।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে রাজধানী উন্নয়ন কতৃপক্ষ ‘রাজউক’র পদোন্নতি প্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিককে নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। নানান অভিযোগ মিশ্রিত আলোচনার মূলে রয়েছে, পাঁচজন সিনিয়রকে পেছনে ফেলে তিনি সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী হয়েছেন। রাজউকের সকল প্রকার ধারাবাহিক আউন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধান প্রকৌশলীর পদটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। এ পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার পাশপাশি তরিতকর্মা ব্যক্তির কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া সরকারের গরুত্বপূর্ন কোনো পদে কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে বসাতে চায়না কর্তৃপক্ষ। সেই বিবেচনায় উজ্জল মল্লিককে কর্তৃপক্ষ প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বে নিয়োগ দেন। সকল যোগ্যতা ও দক্ষতার যাচাই-বাছাই করে এবং নিয়োগ বিধিমালা অনুসরণ করেই সরকার তাকে প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। বিশেষ করে পূর্বাচল প্রকল্পে তার কর্ম ততপরতা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাকে এ পদের জন্য বিশেষ ভাবে বিবেচিত করেন। সাধারণত এ ধরণের পদে একাধিক ব্যক্তির মধ্য থেকেই যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হয়।
উজ্জল মল্লিকের কর্ম ততপরতার ফলে পূর্বাচল প্রকল্পে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টায় ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর চীনে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতামূলক “এশিয়ান টাউনস্কেপ জুডিস এ্যাওয়ার্ড” লাভ করে। যা ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজউল করিম এমপি ও এ মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন। ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ল্যান্ডস্কেপ কনসালট্যান্ট, হংকং, চায়না’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ পুরস্কার দেয়া হয়। আন্তর্জাতিক এ পুরস্কার প্রাপ্তিতে পূর্বাচল প্রকল্প পরিচালক হিসেবে প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিকেরও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া তার কাজের স্বচ্ছতাসহ পূর্বাচল প্রকল্পে ব্যাপক উন্নয়ন ও নানা আলোড়ন সৃষ্টিকারী দৃষ্টিনন্দন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করায় তার সুনাম রয়েছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, উজ্জল মল্লিকের নিয়োগে সমালোচনার মূলে রয়েছে- সংস্থাটির সিনিয়র তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ হেলালীকে প্রধান প্রকৌশলী পদে নিয়ম মোতাবেক নিয়োগ দেয়ার কথা। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার রাজউক থেকে প্রায় ৩৩০ জন কর্মকর্ত-কর্মচারীকে আওয়ামী লীগ সমর্থক বলে সংস্থাটি থেকে চাকুরিচুত করা হয়। এ সময় প্রকৌশলী হেলালির পদস্থ কর্মকর্তা থাকায় তিনিও সে দায় এড়াতে পারেন না। একারণে মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ হেলালীকে এ পদে নিয়োগ প্রদানে দ্বিধাগ্রস্থ হন। অন্যদের মদ্ধ্যেও বিএনপি-জামায়াত জোট সমর্থনের প্রমান রয়েছে। সূত্র আরো জানায়, উজ্জল মল্লিক নিয়োগ বিবেচনায় যোগ্য না হলে এ পদে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পণা ছিলো।
চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক। তিনি ইতোপূর্বে রাজউকের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক ১৯৭৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বাঁশখালীর কোকদন্ডী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা শ্রী বাবু অনন্ত মোহন মল্লিক ও মাতা শ্রীমতি বিশ্ব বানী মল্লিক। তিনি ১৯৯০ সালে বাণী গ্রাম সাধনপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি ও বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে কৃতিত্বের সাথে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী অর্জন করেন।
তিনি ২০০০ সালে রাজউকের সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০৫ সালে নির্বাহী প্রকৌশলী ও ২০১৬ সালে তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিকের সহধর্মিণী সুমা মিতা বিশ্বাস একজন সনামধন্য চিকিৎসক। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জনক।
প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক পেশাগত ব্যস্ততার বাইরে সমাজ সেবামূলক বেশ কয়েকটি সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত আছেন। এসবের মধ্যে তিনি বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ক্লাবের পরিচালক, বাঁশখালী সমিতি ঢাকার সাধারণ সম্পাদক ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সচিব, চট্টগ্রাম সমিতি ঢাকার কার্যনির্বাহী সদস্য, দি ইনস্টিটিশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের লাইফ ফেলো হিসেবে অন্যতম।
শামীমুল আহসান
ঢাকা ব্যুরো প্রধান, দৈনিক রাঙামাটি।