প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে টানেল যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ ॥ খুলছে শিল্পের নতুন দুয়ার

228

॥ চট্টগ্রাম ব্যুরো ॥

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে টানেল যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ, এর মধ্য দিয়ে দেশের জন্য খুলছে শিল্পের নতুন দুয়ার। শনিবার (২৮ অক্টোবর) বেলা ১১টা ৪৩ মিনিটে বহুল প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনের পর সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী প্রথমে পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম তীরে একটি এবং টানেল পার হয়ে আনোয়ারায় নদীর দক্ষিণ তীরে আরেকটি ফলক উন্মোচন করেন। ১১টা ৫০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী গাড়িবহর নিয়ে টানেলে প্রবেশ করেন। দুপুর ১২টায় টানেলের অপরপ্রান্তে পৌঁছে টোল প্লাজায় তিনি টোল পরিশোধ করেন। পরে দুপুরে জনসভার মঞ্চে উঠেন এবং প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।

প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, টানেলটি চট্টগ্রাম বন্দরকে সরাসরি আনোয়ারা উপজেলার সাথে সংযুক্ত করা ছাড়াও সরাসরি কক্সবাজারকে চট্টগ্রামের সাথে সংযুক্ত করবে। ৩৫ ফুট প্রস্থ এবং ১৬ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট দুটি টিউব ১১ মিটার ব্যবধানে তৈরি করা হয়েছে। ফলে ভারী যানবাহন সহজেই টানেলের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে পারবে। এই টানেলে যানবাহন ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারবে।

টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৪০ কিলোমিটার। যার সঙ্গে ৫.৩৫ কিলোমিটারের এপ্রোচ রোডের পাশাপাশি ৭৪০ মিটারের একটি সেতু রয়েছে। যা মূল শহর, বন্দর এবং নদীর পশ্চিম দিককে এর পূর্ব দিকের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে টানেলটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফ্রেব্রুয়ারি প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সাড়ে চার বছরের নির্মাণযজ্ঞ শেষে খুলে দেওয়া হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। এই টানেল চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা থেকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে আনোয়ারা উপজেলাকে যুক্ত করায় দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে সাগর উপকূল ঘিরে শিল্পের নতুন দুয়ার খুলে যাচ্ছে। এই টানেল প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করায় সড়ক দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমে আসবে।

রোববার থেকে চার লেনের এই টানেল যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। টোল দিয়েই টানেল ব্যবহার করতে হবে। শুধু দেশেই প্রথম নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে প্রথম সড়ক টানেল এটি।

১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পটি বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়িত হয়। চীনের এক্সিম ব্যাংক দুই শতাংশ হার সুদে ৫,৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে এবং বাকি অংশের অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।

প্রসঙ্গত, কর্ণফুলী নদী সারা দেশ থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে আলাদা করেছে। প্রায় ৯১ বছর আগে এই নদীর ওপর প্রথম কালুরঘাট রেলসেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। এই সেতু থেকে সাত কিলোমিটার ভাটিতে ১৯৮৯ সালে প্রথম সড়ক সেতু নির্মাণ করা হয়। নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় ২০১০ সালে একই স্থানে কর্ণফুলী তৃতীয় শাহ আমানত সেতু নির্মাণ করা হয়।