আনোয়ার আল হক- ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : আমরা এখন ঘটা করে অনেকগুলো দিবস পালন করি; আর এটা বিশ্বজুড়েই পালিত হয়। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক দিবস মিলিয়ে শতাধিক দিবস পালন করা হয়। অনেকের মতে, এখন বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে বেশিরভাগ দিনই কোনো কোনো বিষয়ের জন্য বিশেষ দিবস পালন করা হচ্ছে। দিবসগুলো পালনে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো স্বার্থকতা রয়েছে। তা নাহলে বিশ্বময় বসে থাকা এতো দার্শনিক, পন্ডিত আর বোদ্ধারা এসব দিবস পালনের জন্য এতো উৎসাহিত করতেন না। জাতিসংঘ ঘোষিত দিবসগুলো পালনের ক্ষেত্রে তো সদস্য দেশগুলোর জন্য বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। বিশ্ব কন্যা দিবস, বাবা দিবস, মা দিবস, প্রবীণ দিবস, পরিবেশ দিবস, বিশ্ব হাতধোয়া দিবস.. এভাবে নানানামে নানা বিষয়ে দিবস পালনের এই যে বৈশ্বিক প্রবণতা একে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই।
কেউ কেউ না চাইলেও সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারে প্রবর্তিত বিশ্ব ভালোবাসা দিবসটিও এখন বিশ্বময় কমবেশী সর্বব্যাপী পালিত হচ্ছে। অনেকে প্রশ্ন তুলেন ভালোবাসার আবার দিবস কি? ভালোবাসা প্রতিমূহুর্তের, সব সময়ের। কথাটা আমার মতে একেবারেই অবান্তর। কারণ হাত আমরা সবসময় ধুই, পরিবেশের জন্য কাজ করি প্রতি মূহুর্তে, বাবা চিরকাল বাবাই, মায়ের স্থান কেউ দখল করতে পারে না। তারপরও তাদের ঘিরে যে দিবস আমরা পালন করি, তারতো নিশ্চয়ই একটা স্বার্থকতা আছে। সারাদিনের ক্লান্তিশেষে মানুষ তার কুলায় ফিরে যায়, সেখানে তার পথ চেয়ে বসে থাকেন একজন মমতাময়ী মহিয়সী নারী, থাকে বাবা-মা ভাই-বোন সন্তান-সন্ততি। তবে সেই মহিয়সী নারী কখনও স্ত্রী, কখনও মা কখনও বা বোন। বয়স, পরিবেশ ও ভাগ্য অনুযায়ী একেকজনের জন্য এক একজন মহীয়সী বসে থাকেন আঁজলা ভরে ভালোবাসার পরশ নিয়ে। যার সান্নিধ্যে ক্লান্তি ধুয়ে মুছে মানুষ আবার আর একটি দিনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে। কর্মজীবী নারীরা সারাদিন ব্যস্ততাশেষে ঘরে ফিরে যান, তার অপেক্ষায়ও থাকে উপরে বর্ণিত সবাই। কিন্তু তার পরও ক্ষণকাল পরেই তিনি আবার হয়ে উঠেন সবার অপেক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের সমাজে এই মাতৃতান্ত্রিক আবর্তন বিশ্বব্যপী আবর্তিতত হচ্ছে সেই আবহমান কাল থেকেই। এর কেন্দ্রবিন্দুটি কিন্তু ভালোবাসা। একটি বাংলা প্রবাদ শুনে আসছি ছোটকাল থেকে ‘প্রেমের পবিত্র শিখা চিরদিন জ্বলে স্বর্গ থেকে আসে প্রেম স্বর্গে যায় চলে। সবার মনেই প্রেম থাকে, থাকে ভালোবাসা; তবে বলতে আপত্তি কোথায়?
ভালোবাসা শুধু পবিত্রই নয় পূর্ণময়ও বটে, নির্দোষ ও পরিশিলিত ভালোবাসা আমাদের ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির পথ মসৃণ করে। সৃষ্টজীবের প্রতি বিশেষ এবং পিতা-মাতা ও রাসুলের প্রতি সবিশেষ ভালোবাসা ছাড়া ঈমান পরিপূর্ণতা পায় না। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি ঘোষিতভাবে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইনস ডে। ভালোবাসার জন্য আলাদা একটি দিন। প্রতিদিনের মত আজকের প্রভাতেও সূর্য পূব আকাশে রাঙা চোখ মেলবে। দক্ষিণা হাওয়া হৃদয়ে বুনে দেবে মায়াবী শিহরণ। প্রকৃতিতে খেলা করবে বর্ণিল প্রজাপতি ও ভ্রমরের ঝাঁক। শুরু হবে আরো একটি নতুন দিন, যে দিনটির নাম দেওয়া হয়েছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।
আজকের রৌদ্রজ্জ্বল শুভ্র সকাল, রূপালী দুপুর, আর মায়াবী রাত ; পুরো সময়টাই কেবল ভালোবাসার ক্ষণ। ভালোবাসার রঙে রঙিন হবে হৃদয়। বসন্ত বাতাসে হৃদযন্ত্রের মিথস্ক্রিয়ায় সারা বিশ্বের প্রেমপিয়সী মানুষ বছরের এ দিনটিকে বেছে নিবে মনের গহিনের কথকতার কলি ফোটাতে। করতালে সুরে সুরে আজ ভালোবাসার গান গাইবার দিন। ‘ভালোবাসা’ এই কথাটা নিয়ে পৃথিবীতে যত গল্প, কবিতা, গান, উপন্যাস রচিত হয়েছে আর কোনো সম্পর্ক নিয়ে ততটা হয়নি। তবে ভালোবাসা হবে সবার জন্য, মানুষ ও মানববতার জন্য, প্রিয় আর প্রেয়সির জন্য, বন্ধু আর শুভার্থীদের জন্য। বিপদগ্রস্থ আর পিড়ীতদের জন্য আর নিজের পছন্দের মানুষ; সে যেই হোক পুরুষ কিংবা নারী সকলের জন্য, নির্মল নিষ্কলুস আর পবিত্র ভালোবাসা। এই দিনে অনেকেই অনেক কিছু স্বপ্ন দেখে যেমনঃ অনেকে ভাবে তার প্রিয় বন্ধুকে নিয়ে ঘোরাফেরা করবে, আবার অনেকে ভাবে তার বন্ধুকে নিয়ে পার্কে যাবে, আবার অনেকে ভাবে তার মা-বাবা-ভাই-বোনদের সাথে গল্প করবে। আসলে আমাদের যেটা করনীয়ঃ অনেকেই আছেন সারাদিন কাজ কর্ম করে বাসায় যখন ফিরেন তখন তার মা-বাবার সাথে সময় দিতে পারেন না, তাই এই দিনটিকে পরিশীলিত ভালোবাসার জন্য নির্দিষ্ট করতে কোনো সমস্যা তো নেই। গতিময় জীবনের অফুরন্ত ব্যস্ততার ফাঁকে নিজের কাছে মানুষ, ভালোবাসার মানুষগুলোকে যদি একটু বাড়তি সময় দেওয়া যায় মন্দ কি? আমি বলি ভালোবাসা দিবসে যদি আমাদের মা-বাবা-ভাই-বোনদেরকে নিয়ে একসাথে বাসায় বসে গল্প করি, তাদের মনের কথাগুলো শুনি, যে গুলো তারা আমাকে সময়ের কারণে বলতে পারেনি। তাদেরকে একটু ভালবাসা দেওয়ার চেষ্টা করি, মা-বাবার ছেলে হিসেবে, ভাই-বোনদের ভাই হিসেবে; সবাই যদি এই কাজটা করি, তবে জীবনের যান্ত্রিকতার মাঝেই তৈরি হবে আরো কিছু স্মরণীয় সময়। আমি যদি আজকে এই রকম একটা ভাল কাজ করি, হয়তো আমার ছেলেও আমার জন্য এমন একটা কাজ করবে। আপনি যদি আপনার মা-বাবাকে একটু সময় দেন একটু ভালবাসা দেন, আপনার ছেলে আপনার কাছ থেকে তা শিখে আপনাকেও ততটুকু সম্মান দিবে। আপনি আপনার মা-বাবাকে ভালবাসুন এবং আপনার ছেলেকেও তা শিখাবার চেষ্টা করুন।
শ্বাশ্বত ইসলাম মানুষকে শিক্ষা দেয় প্রথমত তার নিজেকে ভালোবাসাতে হবে, নিজ শরির ঠিক রাখার জন্য নিজের স্বাস্থ্যের যতœ নেওয়া একটি ওয়াজিব কাজ। শুধু নিজেকেই নয়, ইসলাম পিতা-মাতা, ভাইবোন, সন্তান সন্ততি এমনকি প্রতিবেশীকে ভালোবাসার শিক্ষা দেয়। একে অন্যকে ভালোবাসার এই অবিনাশি চেতনাই ইসলামকে বিশ্বের মানুষের কাছে এতটা জনপ্রিয় করেছে। রাসুল (দঃ) বলেন, ‘তোমার ভাইকে সাহায্য করো চাই সে অত্যাচারী হোক কিংবা অত্যচারিত হোক। সাহাবায়ে কেরাম বললেন আমরা অত্যচারীকে কিভাবে ভালোবাসবো? তিনি বললেন, তুমি জুলুম থেকে তার হাত টেনে ধরবে’ (বুখারী ২৪৪৪ ভাবানুবাদ)। অপরের প্রতি দয়া ও সহযোগীতার হাত সেই বাড়িয়ে দিতে পারে, সতত যার মন ভালোবাসায় টইটুম্বুর থাকে। সুতরাং ভালোবাসা কোনো পঙ্কিল শব্দ নয়, নয় নর্দমা থেকে উঠে আসা কোনো বস্তপঁচা বর্ণগুচ্ছ। ভালোবাসা এক পূর্ণময় ইবাদতের নাম। ভালোবাসতে হবে প্রত্যেক সৃষ্টজীবকে প্রতি মূহুর্তে।
তবে মনে রাখতে হবে, এসব দিবস পালনে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো কোনো পক্ষের অতি বাড়াবাড়ি, দিবস পালনের উদ্দেশ্যই মাটি করে দেয়। তেমনটি যাতে না হয়, সেদিকে সবাইকে সবিশেষ নজর রাখতে হবে। পবিত্র এই শব্দ যাতে আমাদের বাড়াবাড়িতে পঙ্কিলময় না হয় সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে। স-বা-র জন্য রইল ভালোবাসা।
গল্প… ভালোলাগার শক্ত হাত :
মোঃ হান্নান- শাওনের জীবন থেকে ভালোলাগাগুলো একে একে হারিয়ে যাচ্ছে। সেগুলো বিদায় নিয়ে জমা হচ্ছে পিছুটানের খাতায়। একেক বয়সে ভালোলাগাগুলোর চরিত্রও ভিন্নরকম। কোন না কোন সময় কাউকে না কাউকে সম্পুর্ন নিজের মত করে ভালো বেসেছিল। সে ভালোবাসার মানুষগুলো কেউ আছে, কেউ নেই। যারা আছে তাদের কেউ দুরে থাকতে ভালোবাসে, আর যারা কাছে আছে তারা রক্তের বাঁধনে আবদ্ধ আছে বলেই আছে। যারা নেই তারা একেবারেই নেই। ভালোলাগাটা একধরনের বাতিক। শাওন পিছুটানে চোখ রাখে। জন্মের পরপরই সমস্ত ভালোবাসায় বসত গেড়ে নিল মা আর বাবা। রক্তের বাধনে যে এত মমতা, এত ¯েœহ, এত ভালোবাসা তাতো পৃথিবীর সবকিছুর উর্ধ্বে থাকা চাই। মা আর বাবার সে মমতায় কোন কৃত্রিমতা নেই, অকৃত্রিমতা ছাড়া।
ত্রিশ পেরিয়ে আসা শাওন এক টগবগে তরুণ। কাটিয়ে আসা এতটা বসন্তে কতরকমের ভালবাসার পরশ পেয়েছে শাওন তার ইয়ত্তা নেই। পুর্ণতা আর অপুর্ণতা, প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তিতে ভালোও না, মন্দও না। শাওন মুহুর্তের জন্য অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ল এ মুহর্তে। অতীত ভাবনার মায়াজালে জড়িয়ে পড়ল হঠাৎ করে। ফেলে আসা জীবনের হিসাব নিকাশে আপ্লুত আবেগে বন্দি হয়ে পড়ল সে। উদ্বেগ-উৎকন্ঠা, আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখের চাদরে জড়িয়ে থাকা দিনগুলো সত্যিই অতুলনীয় ও অকল্পনীয়। টুপ টুপ করে কয়েক ফোঁটা চোখের জল পড়ল শাওনকে অবাক করে দিয়ে। এ চোখের জলের মানেটা কি? এত ভালোবাসার মাঝে বেড়ে উঠা শাওনের চোখে জল এল কেন? তবে কি তার সে ভালবাসার অধ্যায়গুলো অপুর্ণই রয়ে গেল। চোখের জল তো দু’ধরনের হয়ে থাকে। কষ্ট আর আনন্দের। এই মূহুর্তে কোনটার জল গড়িয়ে পড়ল চোখ থেকে, বুঝল না সে।
সুপ্তির সাথে শাওনের পরিচয় কিশোর বয়সে। তার মনটা যখন কৈশোরের আনন্দে উদ্বেলিত, রঙ্গীন মেঘে উড়ে চলার বয়স, তখনই ভালো লেগে গেলো সুপ্তিকে। অবশ্য এ ভালোলাগার পেছনে শাওনের প্রতি সুপ্তির অনধিকার চর্চাগুলোই বেশি ধরা পড়ে। শাওনকে নিজের মত করে গড়ে তোলা; সব সময় পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ করা; চমৎকার ভবিষ্যতের প্রত্যয়ে সুখমেশানো দেখানো স্বপ্নগুলো শাওনকে ক্রমশই দুর্বল করে ফেলে সুপ্তিকে ভালোবাসার জন্য। জীবনের প্রথম ভালোবাসার কেতন উড়া শুরু এ সুপ্তির চোখে চোখ রেখে। দুজনার দেখাশুনা, গল্পে মেতে উঠা ক্ষনগুলোর হাত ধরে কখন কিভাবে সুপ্তিকে নিজের মনের গভীরে জায়গা করে দিল তা শাওন নিজেই জানে না হয়তো। শাওন নিজে নিজেই হাসে। সুপ্তি আসলেই ভালোলাগার মত মেয়ে। সুপ্তির সাথে দিনগুলোর তুলনা চলে না। এক কথায় চমৎকার।
হঠাৎ করে ফোনটা বেজে উঠল। হাত বাড়িয়ে রিসিভারটা নিল, হ্যালো বলতেই ওপ্রান্ত থেকে পরিচিত কেউ বলে উঠল, কি করছো? শাওন উত্তর দেয়, নিজস্ব কিছু কাজে ব্যস্ত আছি, বিকালে দেখা হবে। অপরপ্রান্তে টেলিফান রাখার শব্দ শোনা গেল। শাওন আবারো ভাবনার জগতে হারিয়ে গেল। সুপ্তির সাথে ইদানিং দেখাও হয় না, কথাও না। একসময় একজন আরেকজনকে না দেখলে দিনটা ভালো যেত না। আর এখন দুজনার সম্পুর্ন নিজস্ব পরিবেশে বেশ ভালই কাটছে চলমান দিনগুলো। মনে পড়ে সেই দিনটির কথা। গ্রীষ্মের প্রচন্ড খরতাপের ঠিক দুপুর বেলা। সেই বয়োবৃদ্ধ গাছটার নিচে শাওন ছিল সুপ্তির সাথে। সুপ্তি কোনরকম ভুমিকা ছাড়াই বলে বসলো, অসম্ভব। শাওন জানতে চাইল, অসম্ভব মানে? সুপ্তি বুঝাতে চেষ্টা করে, শাওন তুমি এখনও অপ্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্টিত হতে হতে ততদিনে আমি….। সুপ্তির এই উক্তি এক অপ্রত্যাশিত ঝড় হয়ে তছনছ করে গেল শাওনের সাজানো বাগান এবং স্বপ্নগুলো।
ভালো লাগাগুলো এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে এক এক করে। হটাৎ করেই এমন ভর দুপুরে সারা আকাশ আধাঁর ছেয়ে বৃষ্টি নামল। বৃষ্টির মাত্রা এত বেশি যে, দুরের সবকিছু অস্পষ্ট হয়ে গেল। শাওন কান পাতে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে। বেশ ভালোও লাগে তার। বৃষ্টির একটা চরিত্র বেশ পছন্দ শাওনের। ধুলোয় জমে থাকা সবকিছু পরিষ্কার করে দিয়ে তবেই ক্ষান্ত হয়। সবকিছুকে চকচকে করে নতুনত্ব উপহার দিয়ে তবে বৃষ্টি বিদায় নেয়। তাই তো শাওনের বৃষ্টি এত পছন্দের। শাওন ভাবে, তার মনে জমা থাকা অতীতের সবধুলো ময়লা যদি এভাবে ধুয়ে ফেলা যেত।
আবারো ফোনটা বেজে উঠে, আবারো রিসিভার হাতে নিয়ে হ্যালো বলতেই শুনতে পেল, কি করছো এখন? শাওন উত্তর দেয়, বিশ্রাম। অপরপ্রান্তে থেকে জানতে চাইল, দুপুরের খাবার খাচ্ছো কোথায়? শাওন জানালা দিয়ে বৃষ্টি কমে এল কিনা দেখার জন্য চোখ রাখে। বৃষ্টি কমে আসার কোন আভাষ পাচ্ছে না দেখে বলল, দুপুরে অফ। অপরপ্রান্ত থেকে কেন জানতে চাইলে, শাওন বলে, ইচ্ছে নেই। রিসিভার রাখার আগে শাওন অপরপ্রান্ত থেকে ক্ষোভ মেশানো গলা শুনতে পেল, যা ইচ্ছে হয় তাই করো। খুব জোরে রিসিভার রাখার শব্দটা কানে তালা মেরে দিল।
শাওন জানালার পাশে এসে দাঁড়ায়। বাইরে অবিরত বৃষ্টি হচ্ছে। আজ সুপ্তিকে এত বেশি মনে পড়ছে কেন? তার সাথে তো কোন সম্পর্কই তো তৈরি করতে পারেনি। একটা সময় ব্যাকগ্রাউন্ড নড়বড়ে ছিল বলে সুপ্তি শুধুমাত্র সে অযুহাতে দুরে সরে রইল। সুপ্তির ভালবাসায় মনের প্রাধান্য ছিলনা। সুপ্তি শাওনকে স্বপ্ন দেখিয়ে সময়কে নিজের নিঃসঙ্গতাকে ব্যস্ত রেখেছে মাত্র। মনে পড়ে শাওনের, কি বলেছিল শেষ দেখায়। শাওন বলেছিল, যে স্বপ্ন দেখায় সে ভালোবাসার স্বপ্নও দেখায়। তবুও সুপ্তির টনক নাড়তে পারেনি শাওন। সেই শেষ কথা। এখন দেখাও হয় না, কথাও হয় না। শাওন জেনেছে এখনো সুপ্তি বিয়েই করেনি। কারও অপেক্ষায় রয়ে গেছে। শাওন ভাবে, যার অপেক্ষায় আছে অন্ততঃ সে নয়। অন্য কেউ। যার ব্যাকগ্রাউন্ড খুব শক্ত। খুউব। আচ্ছা, সে তো এখন প্রতিষ্টিত এক সরকারী কর্মকর্তা। বড় পদের বড় বেতনের চাকরী। গাড়ী, বাড়ী, ব্যাংক ব্যালেন্স সবই এখন হাতের মুঠোয়। তবুও কি সুপ্তির যোগ্যতায় পৌছানো হল না? তা ভাবতেই কিঞ্চিৎ কষ্ট পেলেও আহত হয় না সে। তার হিসাবে সে এখন পরিপূর্ণ একজন মানুষ। যা পেয়েছে তার প্রাপ্য বলে পেয়েছে। সে এতেই সস্তুষ্ট। তবে সুপ্তির কথা চলে আসলেই কিছুটা হলেও খারাপ লাগে। একসময়ের ভালোলাগা এখন দিনে দিনে করুনাতে পরিনত হচ্ছে। সুপ্তির প্রতি কখনো শাওনের ক্ষোভ জন্মায়নি। ভালোলাগাটা রুপ পরিবর্তন করে করুনাতে স্থান নিয়েছে।
টেলিফোনটা কাছে টেনে নিল। রিং করলো। রিসিভ করলো কেউ যেন। হ্যালো বলতেই শাওন বুঝে নিল কে রিসিভ করেছে, কাল আমরা বাইরে যাচ্ছি। ওপ্রান্ত থেকে প্রশ্ন করলো, কোথায়? শাওন বলে, দুরে কোথাও যেখানে শুধু এক পশলা বৃষ্টি হয়, এক চিলতে রোদ উঠে পরক্ষনেই আবার এক গুচ্ছ মেঘ এসে যাবে মুহুর্তেই। ওপ্রান্ত থেকে সুর মেলায়, পাহাড়গুলো দুর্গ হয়ে ছোট এক শহরকে পাহাড়া দিচ্ছে, স্বচ্ছ নদীর কলতানে মুখরিত সহজ সরল জীবন যাপন যেখানে। শাওন বলে, যাবে তুমি সে চমৎকার শহরে? কবিতার সুরে বলে উঠে ওপ্রান্তে, মন তো আর মানে না অপেক্ষার, আমি ছুটে যেতে যাই এখনি সেখানে, অনিন্দ সুন্দর যে শহর চমৎকার আর চমৎকার। পরক্ষনেই সে আবার বলে উঠে, ফিরবো নাকি? শাওন বলে, ফিরে কি আসা যায় এমন শহরকে পিছনে রেখে? আচ্ছা রাখি। দুপ্রান্তে দু’জনেই ফোন রেখে দেয়।
দীর্ঘসময়ের ব্যস্ততা শেষে বৃষ্টি থামল শেষ বিকালে। শাওন অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা ফ্ল্যাটে চলে এল। আসার পথে পথের পাশে ফুল দোকান থেকে অনেকগুলো ফুল কিনে নিল। নিজের ফ্ল্যাটের কলিং বেল টিপতেই দরজা খুলে গেল মিনিট খানেক অপেক্ষা করে। দরজা খুলে দেয় নদী। ফুলগুলো নদীর সামনে এগিয়ে ধরে বলে, হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন নদী। চমৎকার এক হাসি উপহার দিয়ে ফুলগুলো হাতে নিয়ে সেও বলে, সেম টু ইউ। পরক্ষনেই এক কৃত্রিম অভিমান চোখে মুখে নিয়ে এসে বলে সে, নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়ে ভ্যালেন্টাইন পালন করা হচ্ছে, তাই না?
এজন্যই নদীকে বেশ ভালো লাগে। ঠিক সুপ্তির মতই নদীর আচার আচরন তবে তফাৎটা দুজনার মাঝে কৃত্রিম আর অকৃত্রিম। সুপ্তির সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে যখন শাওনের মনে হল চারিধার শূণ্য আর হতাশায় অগোছালো আর তছনছ। কৈশোরে সেই দুরন্ত কিশোরের আর কোন অধিকার নেই স্বপ্ন দেখার। স্বপ্নহীন শাওন যখন কষ্ট নামক দুকুল ভাঙ্গা নদীতে সাতরিয়ে চলেছে, জীবন-মৃত্যূর মাঝামাঝি যখন তার ভবিষ্যৎ, যখন সে ভাবল জীবনের সবটাই অর্থহীন, যখন ভাবতে শুরু করলো একজনকে তো ভালোবেসে শুন্যহাতে ফিরে আর কার মাঝে নিজেকে খুঁেজ দেখবে, তখনই মাঝ নদীতে ভেলা হিসেবে কেউ এল একগুচ্ছ স্বপ্ন নিয়ে, এক নতুন জীবনের পরিপূর্নতা দিতে। সে তো হতাশাচ্ছান্ন অন্ধকার রাতের শেষে নব জীবনের সুর্যদয় ঘটাল। শাওন তাকে ঘিরে আস্থা ফিরে পেল। ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নগুলো ফিরে পাওয়ার আশ্বাসে উদ্বেলিত হয়ে উঠল মনটা। সে আর কেউ নয়, নদীই। সেই নদীই সারাক্ষনই উদ্বেলিত আর উৎকন্ঠায় থাকে শাওনকে নিয়ে। এই নদীই তো রোজ অনেকগুলো ফোন করে শাওনকে। শাওনের বিষন্নতায় একরাশ ভালোবাসার বারোতা বইয়ে দেয় সে প্রতিনিয়ত। নদী চায় শাওন যেন কোন অবস্থায় একাকীত্ব অনুভব না করে।
দু’জনার সর্ম্পকটা শুরুতে ভালোলাগা দিয়ে শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হলো ভালোবাসার অধিকারে। দুজনেই ভালোবাসার দিনে পৃথিবীর সব ভালোবাসাকে স্বাক্ষী রেখে একে অপরের হাতে হাত রেখে বিয়ের পিড়িতে বসলো। শাওনের সব ভালোবাসায় বসত গেড়ে বসল নদীর ভালোবাসা। আজ শাওন আর নদী দুজনেই পরিপূর্ন। আজ সেই দিন। দুজনার ষষ্ট বিবাহ বার্ষিকী। এমন দিনে সুপ্তিকে মনে পড়ার মানেটা কি? হাজারো প্রশ্ন মনের মাঝে এসে ভিড় জমালেও একটাই উত্তর ঝলমল করছে মনের আকাশে, আজ ভালোবাসা দিবস। এমন দিনেই তো ভালোবাসার ক্ষনগুলো চিরসবুজ রুপ ধারন করে সবসময়ের মত। তা যতই পুরনো হোক, ধুলোয় মিশে যাক।
রাঙামাটির দিকে নীল রঙের টয়োটা গাড়ীটা দ্রুতই পাহাড়ের উচু নিচু আর আকা-বাকা পথ ধরে এগিয়ে চলেছে শাওন আর নদীকে নিয়ে। সেই শহরের দিকে এগিয়ে চলছে যার সবটাই সুন্দর আর সুন্দর। অপরূপা রাঙামাটিই হতে পারে ভালোবাসা উপভোগ করার সেরা জায়গা। সেখানেই যাচ্ছে নদী আর শাওন। যেখান থেকে দুজনার শুরু এবং এক সুপ্তির সাথে বিচ্ছেদ। যে সুপ্তি এখনো নাকি কারো অপেক্ষায় আছে, যার ব্যাকগ্রাউন্ড খুব শক্ত। শাওনের হাতে হাত রাখল নদী এবং একটু কাছে সরে এসে শাওনের কাধে মাথা রেখে দুর পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে শাওনের কাছে জানতে চাইল, মনে পড়ছে সেই দিনগুলোর কথা ? শাওন নদীর হাতটা শক্ত করে ধরে চোখে চোখ রেখে একটা জমনো নিঃশ্বাসকে বিদায় দিয়ে জানান দেয়, খ-ুউ-ব।
ভালোবাসার বাণী :
হুমায়ুন আহমেদ- ভাল লাগা এমন এক জিনিস যা একবার শুরু হলে সব কিছুই ভালো লাগতে থাকে।
রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ- তুমিই শুধু ভালোবাসা রাখতে গিয়ে ছড়িয়ে ফেললে চতুর্দিকে অসাবধানে ভালোবাসা ছড়িয়ে ফেললে চতুর্দিকে।
মহাদেব সাহা- তোমাকে ভুলতে চেয়ে তাই আরো বেশি ভালোবেসে ফেলি, তোমাকে ঠেলতে গিয়ে দূরে আরো কাছে টেনে নেই যতোই তোমার কাছ থেকে আমি দূরে যেতে চাই ততো মিশে যাই নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে।
আলবার্চ আইনস্টাইন- ভালোবাসায় পতনের জন্য কোনোভাবেই আমরা মহাকর্ষ-অভিকর্ষকে দায়ী করতে পারি না।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়- বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বলেছিল, যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালোবাসবে সেদিন আমার বুকেও এ-রকম আতরের গন্ধ হবে।
গল্প… এসএমএস ভালোবাসা :
কেউ যদি অভিমানে তোমার সাথে কথা না বলে, বুঝে নিবে সে তোমায় আড়ালে মিস করে.. আর কেউ যদি না দেখে কাঁদে, বুঝে নিবে সে তোমায় ভীষণ ভালবাসে..!
যে ভালবাসা বুঝে না, তাকে ভালবাসা শিখাতে যাবেন না! কারন সে ভালবাসা শিখবে আপনার কাছে, কিন্তু ভালবাসবে অন্য জনকে! আর কষ্ট পাবেন আপনি।
কাউকে দুর থেকে ভালবাসাই সব থেকে পবিত্র ভালোবাসা। কারন, এ ভালোবাসায় কোন রকম অপবিত্রতা থাকে না, কোন শারীরিক চাহিদা থাকে না। শুধু নীরব কিছু অভিমান থাকে, যা কখনো কেউ ভাঙায় না। কিছু অশ্রু বিন্দু থাকে, যা কেউ কখনো মুছতে আসে না। আর সবার অজান্তে আড়ালে একা যেখানে একজনই রানী/রাজা।
“ভালোবাসা” শব্দটা হয় না কখনো পুরানো.. হয় না কখনো মলিন.. হয় না ধূসর কিংবা বর্নহীন.. যা শুধু রংধনুর রঙে রঙিন.. হোক না সেটা এপার কিংবা ওপারের.. তারপরেও ভালোবাসা তো শুধুই ভালোবাসা!
শুধু কাছে পাওয়ার জন্য ভালবাসা নয়। শুধু ভালো লাগার জন্য ভালবাসা নয়। নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে ভালোবাসার মানুষকে সুখী রাখার নামই ভালবাসা।
যখন কেউ কারো জন্য কাঁদে সেটা হল আবেগ। যখন কেউ কাউকে কাঁদায় সেটা হল প্রতারনা। আর যখন কেউ কাউকে কাঁদিয়ে নিজেও কেঁদে ফেলে! সেটাই হল প্রকৃত ভালবাসা!
ভালবাসা মানে আবেগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হৃদয়ের অভ্যন্তরীণ একটা অনুভুতি, যা কেবল শুধু মাত্র ভালবাসার মানুষের সামনে ভাষায় অথবা আচরণে প্রকাশ হয়।
প্রথম দেখায় কখনো ভালোবাসা হয় না। যা হয় তা হল ভালো লাগা। আর সেই ভালো লাগা নিয়ে ভাবতে থাকলে সৃষ্টি হয় ভালবাসা।
ভালবাসা স্বপ্নীল আকাশের মত সত্য, শিশির ভেজা ফুলের মত পবিত্র.. কিন্তু সময়ের কাছে পরাজিত, বাস্তবতার কাছে অবহেলিত..!!
গল্পটি মর্মস্পর্শী ভালোবাসার :
(বিদেশি পত্রিকা থেকে নেয়া)
পুরো একটা বছর হয়ে গেল ৩৭০ বিমানের কোনও খোঁজ মিলল না। আস্তে আস্তে স্মৃতির আড়ালে চলে যাচ্ছে মাঝ আকাশে হারিয়ে যাওয়া মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বেজিংগামী যাত্রীবিমান ৩৭০। উদ্ধারকারী দল আশা ছেড়ে দিয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকারও প্রায় ধরেই নিয়েছে আর কোনও দিন পাওয়া যাবে না। কিন্তু সবাই ভুলে যেতে বসলেও ভোলেনি ৩৭০ বিমানের যাত্রী আর বিমানকর্মীদের পরিবারের লোকেরা। এক বছর পর হারিয়ে যাওয়া বিমানের এক যাত্রীর ১০ বছরের ছেলে চিঠি লিখেছে তার বাবাকে। সেই চিঠিটাই এই পোস্টে লিখলাম।
প্রিয় বাবা,
বাবা পুরো একটা বছর কেটে গেল তবু তুমি এলে না। তবে জানো তোমার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আমি একটুও ক্লান্ত হয়নি। কেন জানো! আসলে আমার বন্ধুদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। ওরা ওদের বাড়িয়ে লোকের কাছে শুনে আমায় বলেছে, তুমি নাকি আর কোনও দিন ফিরবে না কারণ নাকি তোমার খোঁজ আর কোনও দিন পাওয়া যাবে না। ওদের কথা শুনে আমার হাসিই পেয়ে গিয়েছিল। আমি জানি তুমি ফিরবে, ফিরবে, ফিরবে। তুমি যে প্লেনে ছিলে সেই ৩৭০ টা কোথাও না কোথাও নিশ্চই আছে।
তুমি আমায় একটা গল্প বলেছিলে মনে আছে! গল্পের শেষে বলেছিলে, তুমিও ওই গল্পের নায়কের মত একটা দেশ খুঁজে বের করবে। জানি ওমন একটা দেশ খুঁজতেই তুমি গিয়েছ।
তোমার সেদিন হয়তো প্লেনে সবাই ঠিক করলে এমন একটা দেশ খুঁজবে যেখানে কোনও বাজে লোক থাকে না, যেখানে কালো সাদা লোকেদের আলাদা করে দেওয়া হয় না, যেখানে গরীব-বড় লোক বলে কিছু নেই। সেই রকমই কোনও দেশ হয়তো তোমরা পেয়ে গিয়েছো।
জানো ক’দিন আগেই আমাদের স্কুলের সেই অডিটিরিয়ামে একটা অনুষ্ঠান হল তোমাকে আর প্লেনটাকে নিয়ে (অবশ্য এরকম অনুষ্ঠানে এই একবছর অনেক হয়েছে, আমায় অবশ্য ওগুলোতে মা যেতে দেয়নি)। অনেক লোকে তোমায় আর প্লেনটাকে নিয়ে অনেক কথা বলল। সবটা আমি বুঝতে পারিনি, তবে যেটুকু বুঝলাম সেটাতে পরিষ্কার, ওরা শুধু বিজ্ঞান আর বই পড়া জিনিসগুলোই বোঝে। কিন্তু নিখোঁজ কোনও কিছুর জিনিস যদি বই পড়ে বলে দেওয়া যেত তাহলে তো বারমুডা ট্র্যাইঙ্গেল, গড এসব কিছুই থাকত না। অনুষ্ঠানের শেষে মাকে একটা মূর্তি দেওয়া হল, মা কাপড় দিয়ে চোখটা মুছে ছিল। মাকে কিছু বলতে খুব জোর করল ওরা। মা কিছু বলতে পারল না। আমায় দেখে সবাই মুখ দিয়ে এমন একটা আওয়াজ করতে লাগল যেন আমার সব শেষ হয়ে গিয়েছে। মাইকটা আমার সামনে দিলে আমি বলতাম, প্লেনটা হারিয়ে যায়নি, খুঁজতে গেছে। খুঁজতে গেছে আমাদের হারিয়ে যাওয়া ভালবাসা, আর আন্তরিকতা। এ কথাটা কেন মনে হল জানো? তুমি চলে যাওয়ার পর টিভিতে যতবার তোমার আর হারিয়ে যাওয়া প্লেনটার কথা দেখিয়েছে ততবার বাড়ির ফোনটা বেজেছে, কলিংবেলে আওয়াজ হয়েছে। সবাই এসে মাথায় হাতও বুলিয়েছে। কিন্তু তুমি শিখিয়েছিলে না, আসল ভালবাসা আর মেকি ভালবাসার ফারাক কীভাবে ধরা যায় সেই পদ্ধতিটা। তাতে করে বুঝে গেছি ওরা ঠিক ভালবাসে না। তুমি থাকলে তুমিও এমনটাই ভাবতে….
দেখো তোমায় আর একটা কথা বলতে ভুলে গেলাম, তুমি চলে যাওয়ার পর মা ক টা দিন কিচ্ছু খায়নি। টিভিতে, কাগজে, ম্যাগাজিনে কটা দিন শুধু তোমার আর ওই ৩৭০ প্লেনটার কথা। তারপর আস্তে আস্তে সবাই ভুলে গেল। মা একটা চাকরি পেল। মাঝে আরও একটা প্লেন হারিয়ে গেছিল, পরে পাওয়া গেল ধ্বংস হয়ে যাওয়া অবস্থায়। তখন আবার আমাদের বাড়ির সামনে কদিন ক্যামেরার ভিড় ছিল, তোমার কথা হচ্ছিল, মা ইন্টারভিউও দিল। তখন ভেবেছিলাম তুমি হয়তো এবার আসবে। কিন্তু না…
ওই প্লেনের খোঁজ পাওয়ার পর মা-ও বলতে শুরু করল তোমাদের প্লেনটাও হয়তো কোথাও ভেঙে পড়েছে। আমি মায়ের সঙ্গে তর্ক করেছিলাম। মা তখন চুপ করেছিল। কদিন আগে টিভিতে বলেছিল, তোমাদের প্লেনের ব্যাটারি না কী যেন একটা পাওয়া গিয়েছে। এখন আমার ওসব ভাল লাগে না, বিশ্বাসও হয় না। প্রথম প্রথম যখন কোনও একটা মহাসাগরে তোমাদের প্লেনের খোঁজ চলছিল তখন একদিন শুনছিলাম এই পাওয়া যাবে, এই ব্ল্যাক বক্স সাড়া দিয়েছে…ও মা তারপর দেখলাম ওসব কিচ্ছু না। সবাই আস্তে আস্তে ভুলে গেল। জানি সবাই ভুলে যাবে, শুধু আমি ভুলব না।
স্কুলে একটা রচনা লিখতে দিয়েছিল, তুমি কী হতে চাও এটা নিয়ে। আমি লিখেছিলাম পাইলট হতে চাই। কেন জানো! তোমায় প্লেনে করে খুঁজতে যাবো তাই। এখন খুব মন দিয়ে পড়ছি। পাইলট হতেই হবে। আমি এখন আর কাগজের প্লেন বানাই না। এখন ওসব খেলা আর ভাল লাগে না। তোমায় একটা মিথ্যা কথা বলেছি। চিঠির শুরতে বলেছিলাম না, বন্ধুরা তুমি আসবে না বললে আমার হাসি পায়, ওটা মিথ্যে কথা। আসলে আমার কান্না পায়। স্কুলের স্যার বলেছিল, ওত বড় একটা প্লেন কখনও এতদিন নিখোঁজ থাকতে পারে না।
টিভিতে রাডার না কি বলে একটা জিনিসের কথা বলে বুঝিয়ে বলেছিল কেউ তোমাদের প্লেনটা বন্দুক দিয়ে নামিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে। সব কথা শুনে আমি কেমন যেন হয়ে যাচ্ছি। মনের জোরটা কমে আসছে বোধহয়। সব কেমন যেন গুলিয়ে আসছে। আগে দেখতাম তুমি প্লেনটা থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে একটা ইয়া বড় সাগরের সামনে স্নান করতে নামছো। এখন আর ওটা দেখতে পাই না। এখন ঘুমিয়ে পড়লে স্বপ্নে মাঝে মাঝে শুনতে পাই আসবে না, ধ্বংস হয়ে গেছে, সবাই মারা গেছে। বাবা তুমি ফিরে এসো, এসো প্লিজ। আসার সময় কিচ্ছু আনতে হবে না। ঠিকানা জানি না তাই লেখাটা নৌকা বানিয়ে জলে ছেড়ে দিলাম। আমি জানি লেখাটা ভেসে ভেসে তোমার কাছে যাবে। তুমি পড়ে নিজের কাছে রেখে দিয়ো। আর হ্যাঁ মাকে বলো না আমি তোমায় চিঠি লিখেছি, তাহলে খুব রেগে যাবে। মা বলে বাবার কথা সব সময় ভাববে না।
ইতি- প্রিন্স
ভ্যালেন্টাইন দিবসের পথ চলা যেভাবে :
আপনি হয়তো ১৪ ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালন করবেন। কিন্তু আপনি জানেন কি ভালোবাসা দিবসের পূর্ব ইতিহাস?না জানা থাকলে জেনে রাখুন এই দিবসের ইতিহাস গাথা সেই কথা। ভালোবাসা দিবস বা সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স ডে (ইংরেজি: ঠধষবহঃরহবং উধু) (সংক্ষেপে ভ্যালেন্টাইন’স ডেনাম পরিচিত) একটি বার্ষিক উৎসবের দিন যা ১৪ই ফেব্রুয়ারী প্রেম এবং অনুরাগের মধ্যে উদযাপিত করা হয়। এইদিনে মানুষ তার ভালোবাসার মানুষকে ফুল, চিঠি,কার্ড, গহনা প্রভৃতি উপহার প্রদান করে দিনটি উদ্যাপন করে থাকে।
ইতিহাস বলছে, ২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেইটাইন’স নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচার- অভিযোগে তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয্যাস তাঁকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেইটাইনের জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদন্ড দেন। সেই দিন ১৪ই ফেব্রয়ারী ছিল। অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেইটাইন’স স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারারিকে ভ্যালেন্টাইন’ দিবস ঘোষণা করেন।
ভালবাসা দিবস নিয়ে কিছু মজার তথ্য :
বিশ্বের সব মানুষের কাছে ভালোবাসার চিরন্তন বাণী নিয়ে প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেনটাইনস ডে তথা ভালবাসা দিবস আসে। চলে উৎসব ও অনুষ্ঠানের নানা আয়োজন। কিন্তু এ দিবসটির পটভূমির কথা জানে কজন? পাঠকদের জন্য এখানে
দেয়া হলো মজার আটটি তথ্য-
১. ভ্যালেনটাইনস ডে যার নামে উদযাপিত হয়ে আসছে, প্রাচীন রোমের সেই খ্রিষ্টান সাধু সেন্ট ভালেন্টিনাস ব্যক্তিগত জীবনে খুব একটা আমুদে প্রকৃতির লোক ছিলেন না। তিনি কি রোমের ভ্যালেনটাইন ছিলেন, নাকি টার্নি শহরের ভ্যালেনটাইন ছিলেন, এ ব্যাপারেও নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। এমনকি তাঁর প্রেম দীর্ঘস্থায়ী ছিল কি না, এ ব্যাপারেও খুব বেশি কিছু জানা যায়নি। কেবল এটুকুই জানা গেছে, রোমানদের হাতে তাঁর শিরশ্চেদের আগে প্রিয়তমাকে লেখা চিঠির শেষে তিনি লিখেছিলেন, ‘তোমার ভ্যালেনটাইন’।
২. আপনার কি ধারণা রয়েছে, কারা সবচেয়ে বেশি ভ্যালেনটাইনের দেখা পান? অন্তত একটি জরিপের ফলাফলে উত্তর পাওয়া গেছে সেটি হলো শিক্ষকেরা।
৩. ১৭৯৭ সালে একজন ব্রিটিশ প্রকাশক তরুন প্রেমিকদের জন্য একগুচ্ছ আবেগঘন পদ্য প্রকাশ করেন। এটা সেসব তরুনকে সহায়তার উদ্দেশে প্রকাশ করা হয়েছিল, যাঁরা নিজের আবেগ পদ্যের মাধমে প্রকাশ করতে পারেন না। এরই ধারাবাহিকতায় ভ্যালেনটাইনস দিবসে কার্ড বিনিময়ের চল শুরু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
৪. প্রথাগতভাবে ভালোবাসা দিবসে যে হূদয় আকৃতির প্রতীক ব্যবহার করা হয়, সেটির ধারণা সিলফিয়াম নামের এক ধরনের ঔষধি গাছের বীজ থেকে এসেছে। তবে মজার ব্যাপার হলো, বহুকাল আগে ধর্মীয়ভাবে আঁকা বিভিন্ন চিত্রে পাইনগাছের মোচার আকৃতিকে হূদয়াকৃতির সঙ্গে তুলনা করা হতো।
৫. যুক্তরাষ্ট্রে শুভেচ্ছাকার্ড অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, দেশটিতে এদিন প্রতিবছর ১৯ কোটি প্রেমিক-প্রেমিকা ভালোবাসার শুভেচ্ছাকার্ড পান। ফ্রান্সে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তিনটি করে কার্ড পাঠালে এ সংখ্যার সমান হবে। এই যে এত কোটি কোটি কার্ড, ভালোবাসা দিবসের এত এত শুভেচ্ছাবাণী এর শুরুটা কোথায় হয়েছিল জানেন? ভালোবাসা দিবসের প্রথম চিরকুট যিনি পাঠিয়েছিলেন, তিনি ছিলেন ফ্রান্সের ওরলিঁও শহরের ডিউক। তাঁর নাম ছিল চার্লস। ১৪১৫ সালে একটি যুদ্ধে পরাজয়ের পর তাঁকে টাওয়ার অব লন্ডনে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছিল।
৬. সত্যিকার কার্ডের পাশাপাশি আজকের ডিজিটাল যুগে সমান জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ই-কার্ড, যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাঠানো যায়। একটি হিসাব বলছে, বিগত বছরের ভ্যালেনটাইনস দিবসে দুনিয়াজুড়ে মোট এক কোটি ৫০ লাখ ই-ভ্যালেনটাইনস কার্ড বিনিময় হয়েছিল।
৭. ২০ শতকের মাঝামাঝি থেকে ভালোবাসা দিবসের উপহার হিসেবে কার্ড, গোলাপ ফুল, লাল সাটিন কাপড়ে মোড়ানো চকলেট, হূদয় আকৃতির বাক্সসহ নানা ধরনের উপহার বিনিময়ের চল শুরু হয়। ১৯৮০ সাল থেকে এতে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। সে সময় থেকে হীরাশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা দিনটিতে প্রিয়জনকে হীরার তৈরি গয়না উপহার দেওয়ার বিষয়ে মানুষকে উত্সাহিত করতে শুরু করেন।
৮. এ বছর ভ্যালেনটাইনস দিবস উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনের একটি রেস্তোরা ক্রেতাদের অভিনব এক ডিনারের প্যাকেজ অফার করেছে। অফারটি হলো ‘জীবনে একবারই ৩০ হাজার ডলারের ভ্যালেনটাইনস দিবসের ডিনার’। এই প্যাকেজের মধ্যে নানা পদের খাবারের পাশাপাশি রয়েছে এক আউন্স পরিমাণ মাছের বিশেষ ধরনের ডিম, চকলেট লাভা কেক, যার ওপরে থাকবে ২৪-ক্যারেট সোনার পাতা। এ ছাড়া থাকবে শেল্টার দ্বীপের অজস্র ঝিনুক।
৯. সিফিলিস রোগের সবচেয়ে প্রচলিত চিকিৎসা াপদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছিল ১৯২৮ সালের ভ্যালেনটাইনস দিবসে।
কবিতা… বদলে যাওয়া শহর :
এই শহর বদলে গেছে অনেক, অনেকখানি
তোমার প্রস্থানে বিমর্ষরুপ সর্বত্র।
ভালোবাসার খরা চলছে ধারাবাহিকতা রেখে
পাখিগুলো সুরে সুরে গাইছে না গান আর।
আকাশ তোমার শুন্যতায়
মন মরা হয়ে থাকে পুরো বারটি মাস।
এই শহরে তুমি নেই বলে,
আমি বড্ড একা হয়ে গেছি, হয়ে আছি নিঃসঙ্গ,
খাপছাড়া জীবন আমাকে নিয়ে মেতে উঠেছে
আমাকে নিয়ে খেলছে।
অগোছালো রুটিনে এলোমেলোতেই ব্যস্ত আমি
তোমার মত আদুরে শাষন আর কেউ করে না,
কেউ তোমার মত ভালবাসে না, অভিমানও না।
কেউ যতœ করে জানতে চায় না, কেমন আছো?
অথচ, শহরটাতে তুমি ছাড়া অনেকের বসত
তাদের কেউ ভালবাসতে চায় না।
তোমাকে ছাড়া তাদের কাছে আমি মূল্যহীন,
একপেশে জীবনে ছুড়ে দিয়ে তারা বেজায় খুশি
এ শহরটা এভাবে চলছে, রসহীন, উচ্ছাসহীন।
কতো সহজে বদলে গেছে এ শহর, তোমার শুন্যতায়,
বদলে রেখেছে আমাকে, অনাদর আর অবহেলায়।
খোদার প্রেম
ডা. রুখসানা আমিন সুরমা
দোযখ আমি ভয় করিনা-
বেহেশত করিনা আশা,
খোদা আমি চাই শুধু তোমার ভালবাসা।
আমি কিছু পাই বা না পাই-
তুমি আমায় করো না নিরাশা,
আমি শুধু করি তোমার প্রেমের আশা।
তোমার দয়ায় বেঁচে আছি তোমার হুকুমে মরবো,
তুমি যদি নিরাশ করো আমি তবে কি করবো?
আমি তোমায় ভয় করি আর তোমায় মানি,
তুমি সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তিমান এ কথাই আমি জানি।
খোদা তোমার প্রেমে আমি ডুবে যেতে চাই,
তোমার রহমতের ছায়ায় আমি শান্তি খুঁজে পাই।
তোমার মত এতো ভালো আর কেউ তো বাসে না,
তুমি ছাড়া আমার মনে আর কেউ তাই আসে না।
খোদার প্রেমের মতো স্বাদ আর কিছুতে নাই,
তাইতো খোদা আমি শুধু তোমার প্রেম চাই।
খোদা আমি তোমার প্রেমে স্বদা থাকি মশগুল,
তবে আর চিন্তা নেই পার হব আমি দু-কূল।
সময় এবং তারিখঃ ১০/০২/২০১৬ইং রাত ১২.৪৫মিঃ
পোস্ট করেনন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান