প্রায় চারমাস বন্ধ থাকার পর কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ শুরু

191

॥ আলমগীর মানিক ॥

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ মিঠা পানির কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য সম্পদের সুষ্ঠ প্রজনন নিশ্চিতে টানা তিন মাস ১৭ দিন বন্ধ থাকার পর বুধবার (১৭ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে পুনরায় মাছ আহরণ শুরু হয়েছে। রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমানের স্বাক্ষরিত নির্দেশনা পত্রানুসারে অন্তত ৫টি শর্ত মেনে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নেমে পড়েছে প্রায় ২৫ হাজার নিবন্ধিত জেলে। মাছ আহরণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ করণের প্রথমদিনে বৃহস্পতিবার বিপুল পরিমাণ মাছের প্রত্যাশা করছে ব্যবসায়ীরা।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাঙামাটির হাট-বাজারগুলোসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কাপ্তাই হ্রদের মাছ বিপণন শুরু হবে। রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবার নতুন করে কাপ্তাই হ্রদ থেকে আহরিত মাছের উপর শুল্কহার ১৪ থেকে ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ মিঠা পানির কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদের আয়তন ৭২৫ বর্গ কিলোমিটার। দেশের অন্যতম মৎস্য উৎপাদন ক্ষেত্র কাপ্তাই হ্রদ আয়তনের বিচারে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ মোট জলাশয়ের প্রায় ১৯ শতাংশ। উৎপাদন বাড়াতে চলতি মৌসুমে হ্রদে ৬০ হাজার ৩শ ২২ কেজি রুই, কাতল, মৃগেলের পোনা ছাড়া হয়েছে। মাছের রেণু উৎপাদনের জন্য হালদা নদীর ব্রুডফিশ ও পোনা সংগ্রহ করা হয়।

মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন মৌসুমে প্রতিবছর ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত হ্রদে মাছ শিকার বন্ধ থাকে। তবে এবার পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় দুই দফায় এ নিষেধাজ্ঞা বাড়ানো হয় ১৭ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) রাঙামাটি ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. তৌহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, এবার মৌসুমের শুরুতেই বৃষ্টিপাত হওয়ায় মাছের উৎপাদন ভালো হয়েছে। এর সঙ্গে শুল্কহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার রাজস্ব আয় ১৭ কোটি টাকা ছাড়াবে বলেও আশা করছি। তিনি জানান, বন্ধকালীণ সময়ে আমরা অন্যান্য বছরের তুলনায় মাছের পোনা বেশি অবমুক্ত করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা পোনা ও মা মাছ রক্ষায় বন্ধকালীন ৯৫ দিনে কাপ্তাই হ্রদে অবৈধ মৎস্য শিকারী থেকে পাচারকারিদের বিরুদ্ধে ৪২০টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসব অভিযানে ১২টি কেচকি জালসহ কারেন্ট জাল, সুতার জাল, নেট জাল সবগুলো প্রায় আড়াই লক্ষ মিটার জাল, দেশীয় ইঞ্জিন বোট ২৩৬টি, তিন টনেরও অধিক মাছ, ২০০ কেজি শুটকি উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়। এসব নিলামে বিক্রি করে সরকারে কোষাগারে জমা করা হয়েছে ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ৫৯১ টাকা।

এদিকে, বুধবার মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ শুরু করতে ৫ শর্তাবলি উল্লেখ করে আদেশ পত্র জারি করেছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান কর্তৃক স্বাক্ষরিত উক্ত পত্রে নিন্মোক্ত ৫টি উল্লেখ করে সেগুলো মেনে না চললে আইনত দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করার কথাও বলা হয়েছে।
শর্তগুলো হলোঃ (১)কেবলমাত্র বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা থেকে লাইসেন্স গ্রহণ ও ধৃতব্য মাছের নির্ধারিত শেয়ার/শুষ্ক প্রদান সাপেক্ষে কাষাই হ্রদে মাছ শিকার করা যাবে।
(২)করমুক্ত মৎস্য পোনার নিরাপত্তা এবং মাছের স্বাভাবিক প্রজননের জন্য ঘোষিত মৎস্য অভয়াশ্রমসমূহ থেকে মাছ ধরা/শিকারের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা সারা বছর বলবৎ থাকবে।
(৩)মৎস্য রক্ষা এবং সংরক্ষণ আইন, ১৯৫০-এর যথাযথ অনুসরণ করতে হবে। ৯ ইঞ্চির নিচে কোন পোনা মাছ ধরা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
(৪)বিএফডিসি এর নির্ধারিত অবতরণ কেন্দ্র ব্যতীত অন্য কোথাও মৎস্য অবতরণ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন কর্তৃক নির্ধারিত শুল্ক পরিশোধ বাতীত কোন মাছ বা শুটকী ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না।
(৫) চিতল, ফলি, বোয়াল ও অন্যান্য মাছের প্রজনন বৃদ্ধি এবং বিলুপ্তি রোধকল্পে হদের তলদেশ হতে সারা বছর (হ্রদ খোলা ও বন্ধকালীন সময়েও) সকল প্রকার গাছের গুড়ি/গুইটা তোলা/উঠানো/অপসারণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হলো। উল্লিখিত শর্তাদির লংঘন আইনত দন্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য করা হবে।