প্রায় ৫০ কোটি টাকার সাদা কাগজ পড়ে আছে কর্ণফুলী পেপার মিলে

367

॥ এম নাজিম উদ্দীন ॥

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলাধীন চন্দ্রঘোনাস্থ কর্ণফুলী পেপার মিলস (কেপিএম) লিঃ এর উৎপাদিত প্রায় ৫ হাজার মেঃ টন কাগজ অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে মিলের গোডাউনে। কাগজ বিক্রি না হওয়ায় মিলে কর্মরত শ্রমিক,কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের জুলাই-আগস্ট দু’মাসের বেতন বকেয়া পড়েছে। কেপিএমে উৎপাদিত কাগজ একসময় স্থানীয় বাজারে ব্যাপক চাহিদা ছিল। এই কাগজের গুনগত মান বিশ্ব বাজারে প্রশংসিত হয়ে আসছে বছরের পর বছর। কিন্তু প্রায় ৭০ বছরের পুরাতন এই কাগজকল গত কয়েক দশক ধরে বেসরকারি বিভিন্ন কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকি থাকতে পারছেনা স্বনামধন্য বিসিআইসি’র প্রতিষ্ঠানটি। ফলে কয়েকশ’ শ্রমিক বদলি,অবসর নেওয়া এবং অস্থায়ী শ্রমিক কর্মচারী ছাঁটাই করার পরও এটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। অর্থাভাবে নিয়মিত পরিশোধ করা যাচ্ছে না শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন।

তাছাড়া মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে গত দেড় বছরে উৎপাদিত প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন সাদা কাগজ। যা অবিক্রিত অবস্থায় কেপিএমের গোডাউনে পড়ে আছে দিনের পর দিন। পড়ে থাকা এই কাগজের মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা বলে জানান কেপিএমের মহাব্যবস্থাপক (উৎপাদন) গোলাম সরওয়ার।

তিনি জানান, টাকার অভাবে শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ২ মাসের বেতন ভাতা প্রদান বন্ধ রয়েছে। এই ৫ হাজার টন কাগজ বিক্রি করা গেলে সকল কর্মজীবিদের বেতন প্রদানসহ কারখানার অন্যান্য খরচ মিটানোও সম্ভব হতো। কাগজ বিক্রি না হওয়ায় উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্বেও বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ১০ মেট্রিকটন কাগজ উৎপাদনে সীমিত রাখা হয়েছে।

কেপিএমে গিয়ে দেখা গেছে, মিলের গুদামগুলো বর্তমানে রীম কাগজে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। গুদামে কাগজ রাখার জায়গা না থাকায় মেশিন হাউজের বিভিন্ন স্থানে স্তুপ করে কাগজ রাখা হয়েছে।
কেপিএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস জানান,এই কাগজগুলো বিক্রি করা সম্ভব হলে কেপিএম আর্থিক ভাবে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেত।

তিনি আরো জানান,করোনার কারনে গত প্রায় দেড়বছর ধরে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। তাই এই মুহূর্তে বাজারে কাগজের চাহিদা কম, যে কারণে এর প্রভাব কেপিএমে উপর পড়েছে।
মিলের নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন প্রকৌশলী জানান, জাতীয় পাঠ্য পুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কেপিএমে উৎপাদিত কাগজের মূল ক্রেতা। প্রতিবছর সরকার কোটি কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে যে পাঠ্যপুস্তক উপহার হিসেবে তুলে দিচ্ছে, সে কাগজ এনসিটিবিকে সরবরাহ করে থাকে কেপিএম। কিন্তু বর্তমানে এনসিটিবি কেপিএম থেকে কাগজ কিনছে না। ফলে কেপিএমে কাগজের পাহাড় জমে গেছে।
এছাড়া,নির্বাচন কমিশন,বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড,বিএসও,বিশ্ববিদ্যালয় সমুহ প্রতিবছরই কেপিএম থেকে কাগজ কিনে নিলেও বিগত প্রায় দেড় বছর তারাও কাগজ নিচ্ছেনা।

কেপিএম কারখানা সুত্র জানায়,কাগজ উৎপাদনের জন্য কেপিএম নগদ মূল্যে বিদেশ থেকে পাল্প (মন্ড) আমদানিসহ অন্যান্য কাঁচামালও নগদ মূল্যে ক্রয় করে থাকে। এনসিটিবিসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান যদি যথা নিয়মে কেপিএম থেকে স্বাভাবিক ভাবে কাগজ কিনে নিতো, তাহলে কেপিএমে এভাবে কাগজের পাহাড় জমে থাকত না এবং কেপিএম আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হতোনা।

কেপিএম সিবিএ সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু বলেন, শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তারা দিনরাত পরিশ্রম করে কাগজ উৎপাদন করছে। উৎপাদনের স্বার্থে শ্রমিকরা নির্ধারিত সময়ের চেয়েও বেশি শ্রম দিচ্ছে। এত পরিশ্রম করার পরও সময় মতো বেতন ভাতা না পাওয়ায় মিলে চাকরিজীবীরা মারাত্মক কষ্টে তাদের দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। এই শ্রমিক নেতা জানান,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকার পরও সরকারি বিভিন্ন সংস্থা কেপিএম হতে কাগজ কিনছে না।

বাংলাদেশ কেমিকেল ইন্ডাষ্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) চেয়ারম্যান শাহ্ মো.এমদাদুল হক গত ২২ আগস্ট কেপিএম কারখানা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি কেপিএম কারখানা ঘুরে উৎপাদিত কাগজের মান দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। সরকারের অন্যান্য সংস্থাগুলো যাতে কেপিএমের কাগজ নেয় সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তিনি স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেন বলে জানা গেছে।