প্রয়োজন শুধু একটি টার্ফ বদলে যাবে রাঙামাটির ক্রিকেট

416

দীপ্ত হান্নান

শুরু থেকেই জাতীয় ক্রিকেটে রাঙামাটির পারফরমেন্স হতাশাজনক। মাঝেমধ্যে দুই একটি অপ্রত্যাশিত জয় হয়তো এনে দিতে পারে জেলার ক্রিকেটাররা। তবে ধারাবাহিক ব্যর্থতায় কথা উঠে অনেক, কথা শুনতে হয় সংশ্লিষ্টদেরও। খেলোয়াড়দের ক্রিকেটীয় জ্ঞান, পারফরমেন্স নিয়ে শুনতে হয় নানা সমালোচনা। কর্মকতা, কোচ কিংবা খেলোয়াড়রা অযুহাত দেখালেও, কানে আসে- ‘নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা’।

উঠোনই যদি বাঁকা থাকে, নাচব কি করে? বলছি, রাঙামাটির ক্রিকেটের কথা, ক্রিকেটারদের কথা। তিন পার্বত্য জেলায় সুন্দর অবয়বে, নানা অবকাঠামো সুবিধা নিয়ে রাঙামাটির মারী স্টেডিয়াম আছে সবকিছুর আগে। কিন্তু, গত তিন দশকে একটি টার্ফ উইকেট তৈরি করা সম্ভব হয়নি এই মাঠে। প্রতি সিজনে কোন না কোন ক্রীড়া আয়োজনে মাঠটি সরগরম থাকে বলে, আউটফিল্ড মসৃন রাখা যায়নি। এবড়ো, তেবড়ো আর উচুনিচু। সময় হয়েছে, মাঠটিতে আরেকবার হাত দেওয়ার।

এই মাঠেই নেই কোন টার্ফ। ক্রিকেটারদের প্র্যাকটিস বলতে দুটি পাকা পিচ আর প্রতিযোগিতা খেলতে হয় ম্যাটে (যা এখন নিষিদ্ধ)। পাকা পিচ আর ম্যাটে খেলে বাইরে যখন টার্ফে খেলতে নামে তখন খেলোয়াড়দের কাছে উঠোনটাই বাঁকা মনে হয়। টার্ফে নানা ভেরিয়েশনের বল হয়। উচু হয়, নিচু হয়। আউট-ইনসুয়িং হয়। ব্যাটসম্যানরা এসবের মোকাবেলা করেই নিজেকে তৈরি করে, পারফর্ম করে। পাকা পিচ আর ম্যাটে কোন ভেরিয়েশন নেই। শুধু যাও, ক্রিকেট খেল, খেলতেই থাকো..তবে, ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন বাদে।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ স্টেডিয়াম। কোথাও উন্নয়নের ছোঁয়া নেই। অবস্থা দৃষ্টে মনে হল, সুনজরও নেই। জংধরা গ্রিল, সেকেলে প্যাভেলিয়ন (বসার কোন স্থান নেই, গ্যালারীও বসার উপযোগী না)। ড্রেসিং রুমের অবস্থা আরো করুন। একটামাত্র অফিসরুম। ওটাতেই সবধরণের কার্যাদি সম্পন্ন হয়। কিন্তু, একটিমাত্র কারণেই বেগমগঞ্জ স্টেডিয়াম বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে গুডবুকের তালিকায়। এটি একটি ন্যাশনাল ভেন্যু, ভাবা যায়! বিসিবির এলিট টুর্ণামেন্ট ছাড়া সবধরণের খেলা হয় এই ভেন্যুতে একটিমাত্র কারণে। সেটি হচ্ছে জাতীয় মানের টার্ফ আর ঘাসের চাদরে মোড়ানো আউটফিল্ড। সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জেনেছি, বছরের একটিসময় পানি উঠে মাঠে। টার্ফের ওপর ফুটবল খেলাও হয়। ক্রিকেট সিজনে যতœআত্বিতে টার্ফ খেলার উপযোগী করে তোলা হয়। তাদের দেয়া তথ্যমতে, মিনিমাম ৩/৪ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি জাতীয় মানের টার্ফ বানানো যায়। যেটি ফুটবল খেললেও ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।

এই একটি টার্ফই বদলে দিবে রাঙামাটির ক্রিকেটকে। সম্ভাবনাময়ী অনেক ক্রিকেটারই এই দুই দশকে জাতীয় অঙ্গনে ঢুঁ মেরেছে স্বীয় পারফর্মেন্সে। কিন্তু, নিজ জেলায় প্র্যাকটিস করার মত কোন টার্ফ না থাকায় ঝরে গেছে অসময়ে। ক্রিকেটের বিরামহীন উন্নতিতে যেখানে পাশবর্তী জেলা খাগড়াছড়িতে খেলা হচ্ছে টার্ফে। সেখানে ম্যাটে খেলা সত্যিই বেদনা জাগায়।

সাবেক ক্রিকেটাররা সবাই একবাক্যে স্বীকার করে নিলেন ক্রিকেটার না উঠার পেছনে ভালো মানের ক্রিকেট পিচ না থাকা। তাদের মতে, রাঙামাটিতে সম্ভাবনাময় অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে, যারা জাতীয় পর্যায়ে খেলার যোগ্যতা রাখে কিন্তু পাকা পিচ, ম্যাট দিয়ে তো আর টার্ফ সামলানো যাবে না। একটা খেলোয়াড়কে তৈরি হতে হলে, শুরু থেকেই টার্ফেই খেলতে হবে।

সাবেক ক্রিকেটাররা মনে করেন, রাঙামাটি টার্ফ পিচ হয়ে গেলে পর্যটন শহর বিবেচনায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সুনজরে দেখবে রাঙামাটিকে। জাতীয় পর্যায়ের যেকোন প্রতিযোগিতার ভেন্যুও হয়ে যেতে পারে নয়নাভিরাম শহর রাঙামাটি। বাইরের জেলাগুলো খেলতে আসবে, নামিদামী খেলোয়াড়রা আসবে। ওদের সাথে আমাদের প্রতিযোগিতা হবে। তখন ক্রিকেট আর পিছিয়ে থাকবে না। নিকট ভবিষ্যতে রান আর উইকেটের ফুলঝুঁরিতে মেতে থাকবে এ অঞ্চলের ক্রিকেটাররা। অপেক্ষায় থাকলাম।