॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥
দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে চলা একটি মক্তব কাম ফোরকানিয়া মাদ্রাসা ক্ষমতার জোরে দখল করে নিয়েছিল এলাকার কিছু ভূমি দস্যু। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকাবাসীর মক্তবটি রাতারাতি দখল করে বানিয়ে ফেলা হয়েছিল দোকান এবং বখাটেদেরে আড্ডা।
একদিন সকালে উঠে বাচ্চারা মক্তবে এসে দেখেন তাদের মক্তবে দোকান সাজিয়ে বিড়ি ফুঁকছে একদল বখাটে ছেলে। বাচ্চাদের মারফত খবর পেয়ে তাদের বাবা মা মক্তবে এসেছিলেন কি হয়েছে জানতে। কিন্তু তাদের একটি টু শব্দ উচ্চারণ করতে দেয়নি দখলদাররা। উল্টো তারা মক্তবে রক্ষিত কোরআন শরিফ, আরবী শেখার প্রাথমিক বই এবং এসব রাখার সেল্ফ তাদের সামনেই মক্তবের পিছনে খালে ফেলে দিয়েছিল বখাটেরা।
এলাকাবাসীকে তারা বড় বড় নেতাদের নাম উচ্চারণ করে বলেছিল তাদের নির্দেশেই আমরা এই মক্তব দখল করে নিয়েছি। কেউ বাড়াবাড়ি করলে তার বিরুদ্ধে জঙ্গী মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হবে।
তারপর আর দরীদ্র শিশদের কোরআন পড়তে যাওয়া হয়নি। অভিভাবকরা তিলে তিলে তাদের ঘাম-রক্তে গড়ে তোলা মক্তবটিতে বখাটেদের হই হুল্লোড় আর আড্ডা দেখে নিরবে চোখের পানি ফেলেছেন। ক্ষমতার দাপটের কাছে অসহায় মানুষগুলো কিছুই করতে পারেনি। শুধু আল্লাহর দরবারে বিচার দিয়েছেন দুই হাত তুলে।
সাতবছর বেদখলে থাকার পর সেই মক্তবটি এবার পুণরুদ্ধার করেছে এলাকাবাসী। শুক্রবার সকালে এলাকার নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে মক্তবটিতে আবার সাইনবোর্ড তুলে একসাথে মিলাদ পড়েছেন। শুরু হয়েছে শিশুদের সুললিত কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াৎ।
রাঙামাটি শহরের শহীদ শুক্কর স্টেডিয়ামের পাশেই গড়ে তোলা এই মক্তবটি আবার যেন তার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এলাকার দরীদ্র পরিবারের বাচ্চারা এখন প্রতিদিন সকালে কোরআন শরীফ নিয়ে মক্তবে যাওয়ার অধীর অপেক্ষায় প্রহর গুণছে।
শুক্রবার মিলাদ ও মোনাজাতের পর এলাকাবাসী জানালো ১৯৯৯ সালে এলাকার গরিব শিশুদের কোরআন শিক্ষার এক মহান উদ্দেশ্য নিয়ে এলাবাসী পঞ্চাশ একশ’ টাকা চাঁদা দিয়ে মক্তবটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানটির নাম দেয়া হয়- পুরাতন কোর্ট ফোরকানিয়া মাদ্রাসা নামে।
উদ্যোক্তদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন পৌরসভার মেয়র সাইফুল ইসলাম ভূট্টো পৌরসভা থেকে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে ধারক দেওয়াল নির্মাণ করে দেন। মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুদানে নির্মাণ করা হয় টিনের ঘর, ফ্যান, আলমিরা ও কোরআন শরীফ রাখার তাকসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। এর মধ্যেই খাসখতিয়ান ভূক্ত ভূমিখন্ডটি মক্তবের নামে বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য আবেদনও করেন তারা।
কিন্তু তস্করদের হিংস্র নখরাঘাতে এক সময় সব ধংস হয়ে যায়। ১৮ বছর চলার ২০১৭ সালে স্বৈরাচারের দোসররা অবৈধভাবে দখল করে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। এলাকাবাসী দখলদারদের নামও জানিয়েছে সুনির্দিষ্টভাবে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছিল জজকোর্টে। কিন্তু মামলা করার পর ক্ষমতাসীনদের হুমকি ধমকিতে এক পর্যায়ে খেটে খাওয়া এসব মানুষ আর মামলা চালাতে পারেনি।
এখন তারা মরণপণ করে তাদের প্রতিষ্ঠান পুণরুদ্ধারে নেমেছেন। সবার চোখে মুখে কোরআনি আওয়াজের দ্বীপ্ত শপথ।
মিলাদ মাহফিলের পর স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আমরা শিশুদের কোর শেখার এই প্রতিষ্ঠান আর কোনো তস্করের হাতে ছেড়ে দিবনা। তারা সকল সুচিন্তার মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলতে সহযোগীতা করা হয়।
এতদিন যে লোক বখাটেদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে দোকান চালাতো সেই ব্যবসায়ীও একাত্মতা ঘোষণা করেছে এলাকাবাসীর সাথে। সে শুধু দোকানের মালপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য কিছু ক্ষতিপুরণ চেয়েছে।
শীঘ্রই মক্তবটিকে একটি স্থায়ী কাঠামোয় দাঁড় করানোর জন্য সরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন এলাকাবাসী।