॥ মঈন উদ্দীন বাপ্পী ॥
জমজমাট অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পাহাড়ে শুরু হলো ‘বঙ্গবন্ধু এ্যাডভেঞ্চার উৎসব’। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ. কে আব্দুল মোমেন এমপি সোমবার রাঙামাটির চিং হ্লা মং মারি স্টেডেয়ানে ৫দিনের এই রোমাঞ্চকর অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পরপরই দেশের বাছাইকৃত একশ’ জন ক্রীড়ামোদি পার্বত্য তিন জেলায় ছড়িয়ে পড়েন। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের আয়োজনে দ্বিতীয়বারের মতো এ উৎসব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী ঘিরে এবারের এ্যাডভেঞ্চার উৎসব তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়েছে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার এই প্রথম কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলেন। বক্তব্য পর্ব শেষে স্টেডিয়ামে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পররাষ্ট মন্ত্রী। পরে তিনি বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে অ্যাডভেঞ্চার উৎসবের উদ্বোধন করা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের সভাপতি নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের খাদ্য মন্ত্রনাণলয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি, রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ ইফতেখারুল ইসলাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল আলম নিজামী, রাঙামাটির জেলা প্রশাসক এ,কে,এম মামুনুর রশিদ ও পুলিশ সুপার মীর মোদ্দাছ্ছের হোসেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য তিন জেলায় প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও নানা কারণে এখানকার পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটছে না। পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশের উদাহর তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের চেয়ে সম্ভাবনা কম থাকা সত্তের তাদের জাতীয় আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পর্যটন খাত থেকে আসে। অথচ এ খাতে আমাদের আয় একেবারে তলানীতে। পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য আমাদেরকে এ ধরণের ফ্যাস্টিভাল আয়োজনসহ পরিকল্পিত পর্যটন উন্নয়ন করতে হবে। তিনি পাহাড়ের তিন জিলাজুড়ে আয়োজিত এ্যাডভ্যাঞ্চার উৎসবের ভূয়সী প্রসংশা করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে দু’টি সম্পদ। একটি হলো মানুষ, অন্যটি হলো নদী-নালা-খাল-বিল। এ দু’টি সম্পদকে কাজে লাগাতে পারলে কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না’। মন্ত্রী আরও বলেন, ইতিহাসের মহামানব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সাধারণ ঘরে জন্ম নিয়েও মানুষের জন্য, জাতির জন্য কিছু করার চেষ্টা ছিলো। যে কারণে তাকে কারাগারে ২৩টি বছর কাটাতে হয়েছিলো। তিনি প্রত্যয়ী এবং আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। জাতিকে তিনি পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্তি দিয়েছেন। তার ইচ্ছা শক্তির কারণে তা সম্ভব হয়েছিলো।
নারী-পুরুষের সমন্বয়ে বাছাই করা এক শ’ ক্রীড়াবিদের মধ্যে সারাদেশ থেকে ৫০ জন এবং পাহাড়ের তিন জেলা থেকে ৫০জন ক্রীড়বিদ অংশ নিচ্ছে। শুক্রবার পর্যন্ত তারা তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন স্পটে নিজেদের দক্ষতা ও সাহসিকতা প্রদর্শন করবে। এ আয়োজনের বিভিন্ন ইভেেেন্টর মধ্যে থাকছে পর্বতারোহণ, নৌবিহার, কায়াকিং, হাইকিং ও ট্রেইল রান, টিম বিল্ডিং, ট্রেজার হান্ট, ট্রেকিং, ক্যানিওনিং, ট্রি ট্রেইল, রোপ কোর্সসহ নানা আনন্দ অনুসঙ্গ। শুক্রবার একই ভ্যানু মারি স্টেডিয়ামে সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই অভিযান শেষ হবে। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈসিং এমপি।
উদ্বোধনী বক্তব্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড.এ.কে. আব্দুল মোমেন এমপি বলেন, সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ হতে হবে। শুধু পুঁথিগত বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে জিপিএ বাড়ালে হবে না। মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। এইজন্য নিজের ইচ্ছে শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। মন্ত্রী আরও জানান, পার্শ্ববর্তী দেশ থাইল্যান্ডের জিডিপির অর্থনীতির চাকা ঘুরাচ্ছে পর্যটন শিল্প। কিন্তু আমাদের দেশ প্রকৃত ভরা এত সুন্দর হওয়ার পরও আমাদের পর্যটন শিল্প অনেক পিছিয়ে আছে।
তিনি তরুণদের উদেশ্যে বলেন, আমাদের দেশে একটি সমস্যা চাকরী। চাকরীর পিছনে না দৌড়ে চাকরীর বাজার কিভাবে সৃষ্টি করা যায় তার দিকে নজর দিন। নিজের হাতে থাকা ডিজিটাল ডিভাইসটাকে (এন্ড্রয়েট সেট) কাজে লাগান। সরকার বর্তমানে শিক্ষা খাতে বাজেটের হার বাড়িয়েছে। আগে শিক্ষার জন্য আট হাজার কোটি টাকা বাজেট থাকলেও বর্তমানে তা বেড়ে ৮০হাজার কোটি টাকায় উন্নতি করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ বাজেট প্রযুক্তির বিকাশ উৎকষিত করার জন্য। আপনি যদি আপনার ইচ্ছে শক্তিতে সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারেন তাহলে লোক আপনাকে কালান্তরে মনে রাখবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে তরুণদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা আগামী ১৫বছর পর্যন্ত বাড়বে। এই উপযুক্ত সময়ে তরুণ সমাজকে কাজে লাগাতে হবে।
বক্তব্যের প্রারম্ভে তিনি এসময় হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবারবর্গ, দেশের জন্য জীবন দেওয়া শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।