বাঘাইছড়িতে হলুদের বাম্পার ফলন ॥ কৃষকের মুখে হাসি

495

॥ এম নাজিম উদ্দীন ॥

রাঙামাটির বাঘাইছড়ির পাহাড়ে এবার হলুদের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই হলুদে ভরপুর স্থানীয় হাট-বাজারগুলো। পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া উপযুক্ত থাকায় এবার হলুদ চাষে সফল হয়েছেন বাঘাইছড়ির চাষীরা। তাছাড়া কম খরচে, ব্যাপক ফলন হওয়ায়,লাভও অধিক। তাই কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে মানোন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখছে বাঘাইছড়িতে উৎপাদিত হলুদ। পাহাড়ে উৎপাদিত হলুদের চাহিদা এখন বিশ্বজুড়ে। তাই রফতানি হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

উপজেলার কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে,হলুদ বহুল ব্যবহৃত একটি মসলা ফসল। তাই চাহিদার সাথে জনপ্রিয়তা বেশি। এছাড়াও হলুদের অনেক ভেষজ গুণও রয়েছে। প্রায় সব ধরনের মাটিতে হলুদ চাষ করা যায়। তবে দো-আঁশ ও বেলে-দো-আঁশ মাটি হলুদ চাষের জন্য অতি উত্তম। তাই পাহাড়ে হলুদ চাষে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। ডিমলা ও সিন্দুরী নামে হলুদের দু’টি উন্নত জাত রয়েছে। ডিমলা জাতটি স্থানীয় জাতের তুলনায় ৩ গুণ ফলন বেশী দেয়। পাহাড়ে সাধারণত ডিমলা জাতের হলুদ বেশি হয়ে থাকে।

স্থানীয় হলুদ চাষী জীবন চাকমা জানায়,প্রতিবছর উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে উৎপাদিত হাজার হাজার মেট্রিক টন হলুদ যাচ্ছে সমতলে। চাহিদা বেশি থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা হলুদ নিতে আসছে পাহাড়ে। তাই কৃষকরা বেশি দামের আশায় পাহাড় থেকে সংগৃহীত হলুদ সিদ্ধ করে রৌদে শুকানোর পর বাজারে নিয়ে আসছে। আর এসব হলুদের রঙ দেখে ঝুকে পড়ছে ব্যবসায়ীরা। তবে কষ্টের তুলনায় দাম মিলছে না। যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত ও পরিবহন সংকটের কারণে সঠিক সময়ে হলুদ বাজারজাত করতে পাড়ছে না ইউনিয়নের পাহাড়ি কৃষকরা। তাই লাভের চেয়ে ব্যয় খরচ বেশি গুণতে হচ্ছে কৃষকদের।

অন্যদিকে,প্রতিবছর বাঘাইছড়ির পাহাড়ে কি পরিমাণ হলুদের আবাদ হয় তার সঠিক কোনো তথ্য জানা না গেলেও আগের চেয়ে ব্যাপক হারে হলুদ চাষ বেড়েছে বলে দাবি স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের।

বাঘাইছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো.তোফায়েল আহম্মেদ জানান,এ বছর শুধু বাঘাইছড়ি উপজেলায় হলুদের আবাদ হয়েছে ২ হাজার হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিকটন। উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষেরা পাহাড়ের ঢালে জুমের ধানের পাশাপাশি হলুদ চাষ করে থাকে। জুমের মিশ্র ফসলে চাষাবাদের মধ্যে হলুদের চাষ অন্যতম। এটা শুধু বাঘাইছড়ি নয়, সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে হলুদের চাষ এখন ব্যাপক আকারে হচ্ছে। পাহাড়ে হলুদ বাগানে সবেমাত্র শুরু হয়েছে হলুদ সংগ্রহ করার কাজ। তাই ব্যস্ত সময় পাড় করছে কৃষকরা। কিন্তু গত মৌসুমের ন্যায় এবছরও তেমন ভালো দাম না পাওয়ার কারণে কিছুটা মনক্ষুুন্ন কৃষকরা। পার্বত্যাঞ্চলের জন্য হলুদ একটি অর্থকরী ফসল। সঠিকভাবে বাজারজাত করা গেলে দাম সংকট নিরসন করা সম্ভব বলে মনে করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

রোববার উপজেলার মসজিদ মার্কেটের খোলা মাঠে গিয়ে দেখা যায়,স্থানীয় হলুদ ব্যবসায়ী মামুন ও ইউছুপ আলী বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে সংগ্রহ করা হলুদ ঢাকা ও চট্টগ্রাম নেয়ার জন্য প্রক্রিয়াজাত করছেন।

তারা জানান,উপজেলার সাপ্তাহিক চারটি হাটে প্রায় দুই কোটি টাকার হলুদের লেনদেন হয়। তবে পরিবহন খরচ শ্রমিক মজুরী, বাজার ফান্ড,পার্বত্য জেলা পরিষদ ফান্ডসহ বিভিন্ন চাঁদার কারণে তাদের মুনাফা তেমন টিকে না।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন,পাহাড়ের মাটিতে সোনা ফলে। এখানে পরিকল্পনা করে কৃষি পণ্য সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণের সঠিক ব্যবস্থা করা গেলে পাহাড়ের অর্থনীতি ও মানুষের ভাগ্য রাতারাতি পরিবর্তন হবে।