॥ নুরুল কবির, বান্দরবান ॥
গত শনিবার ভয়াবহ পরিস্থিতির স্বাক্ষী হয়েছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমঘুম সীমান্তের মানুষ। ভারী অস্ত্র আর গোলাবারুদের মুহুর্মুহু আওয়াজে আতঙ্ক বিরাজ করছিল সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে।
রোববার ও সোমবার ওপার থেকে ভেসে আসনি কোনো গোলাবারুদের শব্দ। আকাশে চক্কর দেয়নি কোনো যুদ্ধবিমানও। সুনশান নিরবতা ছিল দিনভর। তবে কাঁটাতারের ওপারে মিয়ানমারের ভেতরে সেনাদের টহল দিতে দেখা গেছে। বাংলাদেশের দিকে তাদের ছিল সতর্ক দৃষ্টি। তারপরও তুমব্রু সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. আলম জানান, (৪সেপ্টেম্বর) রবিবার সকাল থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকাগুলোতে কোন গুলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি। যার কারনে আমাদের স্থানীয়দের মধ্যেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। পরিস্তিতি আপাতত শান্ত রয়েছে। কিন্তু কোন গুলিবর্ষণ করা হয়নি।
ইউপি মেম্বার মো. আলম আরও বলেন, গত তিন সপ্তাহ ধরে সীমান্ত এলাকা মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নিয়মিত প্রচন্ড গুলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। তবে হঠাৎ করে (৩ সেপ্টেম্বর) শনিবার তাদের যুদ্ধ বিমান থেকে ছোড়া দুটি গোলা আমাদের ঘুমধুম সীমান্ত পিলারে এসে পড়ে। এর আগেও দুটি মর্টার শেল এসে পড়ে। এতে হতাহতের কোন ঘটনা হয়নি ঠিক। তবে সীমান্ত বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
‘‘সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গুলাগুলি হলেও এপারে বাসিন্দারা কাছাকাছি হওয়ায় স্বাভাবিক কারনে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আবার গুলাগুলি বন্ধ হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। এখন পরিস্থিতি শান্ত বলা যায়। তবে কোন সময় আবার কী পরিস্থিতি তৈরি হয় বুঝা যায় না। বর্তমানে সীমান্ত এলাকাজুড়ে নিরাপত্তার বাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ সর্তকবস্থায় রয়েছে।’’
এদিকে ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান একে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, প্রায় ২০ হাজার বাসিন্দার ঘুমধুম ইউনিয়নে ৩ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সীমান্ত এলাকায় ওপারের পরিস্থিতির প্রভাব এসে পড়ে। রবিবার সকাল থেকে সীমান্ত পরিস্থিতি আপাতত শান্ত রয়েছে। সোমবার সকালে তুমব্রু সীমান্তে বিজিবি ও পুলিশের সদস্যরা বিভিন্ন পয়েন্টে টহল দিতে দেখা গেছে।
সীমান্তে বসবাসরত বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মূলত তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অভ্যন্তরে সেখানকার নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এ এ) সৈন্যদের গত তিন সপ্তাহ ধরে লড়াই চলছে। তাদের দমনে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী যুদ্ধ বিমান থেকে মর্টার শেল ও গুলি বষর্ণ করছে। উভয় পক্ষের হতাহতের খবর শুনা যায়। সেখানকার আতঙ্কিত লোকজন এলাকা ছেড়ে পাশর্^বর্তী দেশ ভারতের মিজোরাম রাজ্যে পালাতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায়।
এদিকে ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে আসা প্রায় ৬২১টি পরিবারে ৪হাজার ২শত জন রোহিঙ্গা এখনও নাইক্ষ্যছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের কোনা পাড়ার শূণ্য রেখার আশ্রয় শিবিরে অবস্থান করছে। সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে গুলাগুলির কারনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বলে জানান স্থানীয়রা।