বান্দরবানের শীলেরতুয়া-রূপসীপাড়া ব্রীজ পাল্টে দিবে জনজীবনের চিত্র

347

॥ নুরুল কবির ॥

উন্ন্য়নের মহাসড়কে স্বাক্ষর রাখতে চলেছে পাহাড়ি জেলা বান্দরবান। বিশেষ করে যোগাযোগ, পর্যটন ও কৃষি খাতের অভুতপুর্ব উন্নয়ন। পাহাড়ে চোখে পরার মতো উন্নয়ন হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার। এক উপজেলার সাথে আরেক উপজেলা, এক ইউনিয়নের সাথে আরেক ইউনিয়ন। ক্ষেত্র বিশেষে ওয়ার্ড পর্যায়ের এক পাড়া থেকে আরেক পাড়ায় যাতায়াতের পথও সুগম হয়েছে। পাহাড়ের এই আমুল পরিবর্তন তথা পিছিয়ে থাকা বান্দরবান জেলাকে উন্নয়নের মহা সড়কে নিয়ে যাওয়ার একমাত্র পাহাড়ের স্বপ্নদ্রষ্ঠা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। তার সু-দক্ষ নেতৃত্বে বান্দরবান এগিয়ে গেছে বহুদুর।

বান্দরবানের লামা পৌরসভার শীলেরতুয়া-রূপসীপাড়া সড়কের খড়শ্রোতা মাতামুহুরী নদীর উপর ১৮৪ মিটার দীর্ঘ গার্ডার ব্রীজ পাল্টে দিতে পারে রূপসীপাড়া ইউনিয়নের জনজীবন।

জানা গেছে, গত ২০১৯ সালের ৪ মে বান্দরবানের লামা উপজেলার পাশদিয়ে বয়ে যাওয়া মাতামুহুরী নদীর উপর শীলেরতোয়া-রূপসীপাড়া সড়কে ব্রিজ নির্মাণকাজ শুরু হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের টেন্ডারে ১১কোটি ৩৬লাখ টাকায় এই পিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণে দায়িত্বপায় মের্সাস তমা ও এম এ জাহেদ কন্সট্রাকশন। এই সেতুর দৈর্ঘ ১৮৪মিটার।

মের্সাস তমা কন্সট্্রাকশন এর সহকারী প্রকৌশলী রুবায়েত আলম জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার পর পুনরায় নির্মাণ কাজ চালু করা হয়েছে। তিনি জানান, কোন ধরনের সমস্যা না হলে আগামী ডিসেম্বরে কাজ শেষ করে এলজিইডিকে বুঝিয়ে দিতে পারবেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের লামা উপজেলা প্রকৌশলী মো: মাহফুজুল হক জানান, করোনার কারণে কাজ কিছুটা বিলম্ব হলেও ইতিমধ্যে ব্রিজের ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের জানুয়ারীতে খুলে যাবে শীলেরতুয়া-রূপসীপাড়া সড়কের অন্যতম এই মাধ্যমটি।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, দুইপারের মানুষ নৌকায় পারাপারে দীর্ঘ সময় লাগার কারণে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হতো। এই এলাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা বাড়াতে ব্রিজ নির্মাণে প্রতিশ্রুতি দেন পার্বত্যমন্ত্রীর বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। এরপর ২০১৯সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে নির্মাণকাজের সূচনা হয়। ব্রিজটি চালু হলে রূপসীপাড়া ইউনিয়নের পাশাপাশি ওপারের নয়াপাড়া, সিদ্দিকপাড়া, ঠান্ডাঝিরি, মারমাপাড়া, চামাইছড়ি, সাতপাড়াসহ অন্তত ৩০টি গ্রামের মানুষের চলাচল আরো সহজ হবে।

সরেজমিনে মাতামুহুরী ডিগ্রি কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্রী আসাই মারমা এই প্রতিবেদককে বলেন- ‘প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার জন্য নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হতো। বিশেষ করে দুই পারের নারীরা দুর্ভোগে ছিল’। এখন ব্রিজটি নির্মীত হওয়ায় তাদের দীর্ঘদিনের দূর্ভোগ কমে যাবে।

রূপসীপাড়া-শীলেরতুয়া অংশসহ মাতামুহুরী নদীতে দীর্ঘ ২৭বছর ধরে নৌকা চালান আবদু রাজ্জাক। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন- নদীতে পানি বেশি হলে মানুষ পারাপারে সীমাহীন কষ্ট হয়। মানুষের মাঝে ভয় কাজ করে। ব্রিজটি নির্মীত হলে হয়তো তার নৌকার আয় কমে যাবে। এরপরও তিনি খুশি। তারমতে, মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হতে হবে না। মালামাল বহণ করতে পারবে সহজে।

রূপসীপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাচিংপ্রু জানান, ১ নং ওয়ার্ডের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মানুষের যাতায়াত শীলেরতুয়া-রূপসীপাড়ার এই সড়কে। এখানকার মানুষের জীবন জীবিকা কৃষি নির্ভর। ব্রীজের অভাবে কৃষিপন্য বাজারজাত করতে কষ্ট হয়।

স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে ব্রীজটি নিমার্ণ কাজের টেন্ডার আহবান করে এলজিইডি। ব্রীজটি রূপসীপাড়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের ভাগ্যের পরির্বতন ঘটাবে বলে মনে করেন তিনি।