॥ বান্দরবান প্রতিনিধি ॥
বান্দরবান শহরের প্রাণকেন্দ্র সেগুনবাগিছা এলাকায় একটি বিশাল পুকুর ভরাট করছে প্রভাবশালী এক ব্যক্তি। রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে তিনি পুকুরটি মাটি দিয়ে ভরাট করে দোকান ঘর নির্মাণ করছেন। এতে করে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এদিকে এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সরেজমিন পুকুর এলাকা পরিদর্শন করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে স্থানীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
অভিযোগ উঠেছে, কোনো কিছু তোয়াক্কা না করেই জেলা কৃষক লীগের ভুমি ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মনির আহাম্মদ চৌধুরী নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি দিনে-রাতে অন্যত্র থেকে ট্রাকে-পিক আপে করে মাটি এনে পুকুর ভরাট করে দোকান ঘর নির্মাণ অব্যাহত রেখেছেন।
ঈদের বন্ধের ছুটির সুযোগ নিয়ে মনির আহম্মেদ চৌধুরী বান্দরবান পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র সেগুন বাগিচা এলাকায় বিশাল পুকুর মাটি দিয়ে ভরাটের কাজ শুরু করেন। পুকুরটি এতোদিন সাধারণ মানুষ সরকারি খাস জায়গা বলে জেনে আসলেও মনির আহম্মদ চৌধুরী পুকুরটিকে তাঁদের পারিবারিক সম্পত্তি দাবি করেন। তিনি বলেন, নিজেদের প্রয়োজনে তাঁদের ‘মালিকানাধীন’ পুকুরটির কিছু অংশ মাটি ভরাট করে দেখানে দোকান ঘর নির্মাণ করছেন।
তবে স্থানীয় লোকজন জানান, পুকুরটি শহরের মধ্যেই বিশাল এলাকা জুড়ে। আগে লোকজন এই পুকুরে গোসল করতেন এবং ব্যবহারের পানি নিয়ে যেতেন। কিন্তু কয়েক বছর যাবত পুকুরটি মজা পুকুরে পরিণত হয়। গোসল ও ব্যবহার অনুপযোগী রাখা হয়। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ পুকুরটি মনির আহাম্মদ চৌধুরী পুকুরটি ভরাতের উদ্দেশ্যেই ব্যবহার অনুপুযোগী করে রাখেন। আর সুকৌশলে তিনি ঈদের ছুটিতে মাটি দিয়ে ভরাট করে সেখানে দোকান ঘর নির্মাণ করছেন।
সরেজমিন সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, পুকুরটি বান্দরবান পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডেও সেগুন বাগিচা এলাকায় প্রধান সড়কের পাশে অবস্থিত। সেখানে উত্তর অংশে মনির আহাম্মদ চৌধুরী অন্য এলাকা থেকে মাটি এনে পুকুর ভরাটের কাজ করছেন। এবং উত্ত এলাকায় অন্তত ৫টি দোকান ঘর নির্মাণের কাঠামো দাঁড় করেছেন। টিন, কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি করা দোকানগুলো যেকোনো সময় চালু করা হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসাইন, রমিজ উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন সাংবাদিকদের বলেন, পুকুর (জলাশয়) এক সময় পার্শ্ববর্তী বালাঘাটা ও রোয়াংছড়ি স্টেশনগামী লোকজন হাত-মুখ ধোয়া ও গোসলের কাজ করতেন। কিন্তু কয়েক বছর যাবত পুকুরটি ভরাটের পাঁয়তারার অংশ হিসেবে মনির চৌধুরী পুকুরে কচুরি পানা ও লতা পাতায় ভরে রাখায় সেটি ব্যবহারের অনুপুযোগী হয়। তাঁরা পুকুরটি সংরক্ষণের দাবি জানান।
জানা গেছে, পুকুরটি প্রধান সড়কের পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গায় ও কিছু অংশ খাস জমি। প্রভাবশালী মনীর আহাম্মদ চৌধুরী বসত ঘর পুকুরের পাশে হওয়ায় এটিকে তিনি ‘নিজেদের পারিবারিক সম্পত্তি’ দাবি করেন এবং পুকুরটি ভরাট করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজ করছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, প্রভাবশালী মনির আহাম্মদ চৌধুরী ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব দেখিয়ে পুকুর ভরাটের কাজ করছেন। তাই ঈদের ছুটির সুযোগ নিয়ে দিনে-রাতে পুকুর মাটি দিয়ে ভরাট অব্যাহত রেখেছেন।
মনির আহাম্মদ চৌধুরী জেলা কৃষক লীগের নেতা হওয়ায় স্থানীয় লোকজন প্রকাশ্যে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। তাই মনির আহাম¥দ পুকুরটি মাটি দিয়ে ভরাট করে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
এ বিষয়ে মনির আহাম্মদ চৌধুরী বলেন, আমি কোনো পাহাড় কাটছি না, পুকুরও ভরাট করছি না। পুকুরটি আমাদের পারিবারিক সম্পতিত। পুকুরের কিছু অংশ মাটি দিয়ে ভরাট করে কয়েকটি দোকান ঘর নির্মাণ করছি। এতে কার কি! রাজনৈতিক দলের প্রভাব বিষয়ে চানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি (মনীর) কৃষকলীগের জেলা সহসভাপতি পদে রয়েছেন। তবে তিনি দলীয় প্রভাব দেখাচ্ছেন না। নিজেদের সম্পত্তি হিসেবে পুকুরের উত্তর অংশ ভরাট করছেন।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবান কার্যালয়ের কর্মকর্তা মো. আবদুস সালাম বলেন, পুকুর মাটি দিয়ে ভরাটের খবর পেয়ে তিনি সরেজমিন সেগুনবাগিচা এলাকায় গিয়ে দেখেন পুকুরের উত্তর অংশ মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে, সেখানে স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। তিনি পুকুর ভরাটের বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে প্রেরণ করেছেন।
আবদুস সালাম বলেন, পুকুর বা জলাশয় চাইলেই ভরাট করা যায় না। এটি কারো পারিবারিক/ব্যক্তিগত সম্পত্তি হলেও জলাশয় বা পুকুর ভরাট করা যায় না। এর বেশি তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, সরেজমিন প্রতিবেদন তৈরি করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে, এখন কর্তৃপক্ষ কি সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের ব্যাপার।