বান্দরবানে ভূয়া কাগজ দেখিয়ে বনবিভাগের জমি বিক্রির অভিযোগ

141

॥ নুরুল কবির বান্দরবান থেকে ॥

ভূমি জালিয়াতির চক্রের দৌরাত্ম বেড়েছে বান্দরবানে। দীঘদিন ধরে জেলা প্রশাসন এবং বোমাং সার্কেল চিফের কর্মচারীদের যোগসাজসে চলছে বনবিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কেটে জায়গা বিক্রি করা হচ্ছে। ভূমি জালিয়াতি চক্রটি জেলা প্রশাসনের রেকডরুমে থেকে অর্থের বিনিময়ে বাবা-মায়ের নামের সাথে মিল থাকা ব্যক্তিদের ভূয়া জমাবন্দি বের করে রেজিষ্ট্রেশন কর্মকর্তার চোখে ধূলো দিয়ে বহিরাগতদের নামে ভূমি রেজিষ্ট্রেশন করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

জানাগেছে, ভূমি জালিয়াতির চক্রের মূল হোতা হচ্ছেন জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের ক্যান্টিনের মালিক বাবুল দাশ, জেলা প্রশাসনের নাইট গার্ড মো: ইউনুচ, বোমাং সার্কেল চিফ কার্যালয়ের হেডক্লার্ক অংজাই এবং জেলা প্রশাসনের সাবেক নাজির শিল্পীপতি মো: আইয়ুব। এদের সাথে জেলা প্রশাসনের রেকডরুমে ভূমি অফিসের সন্তোষ ও জসিমসহ কয়েকজন কর্মচারীও জড়িত রয়েছে। যাদের সহযোগিতায় বাবা-মায়ের নামের সাথে মিল থাকা ব্যক্তিদের ভূয়া জমাবন্দি বের করে বহিরাগত জমি ক্রেতার পিতা-মাতা দেখিয়ে রেজিষ্ট্রেশন কর্মকর্তার চোখে ধূলো ভূমি রেজিষ্ট্রেশন করে দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। যদিও পার্বত্য চট্টগ্রাম আইনে আছে,

পার্বত্য শান্তি চুক্তি মোতাবেক পার্বত্যাঞ্চলে জমি নেই এমন ব্যক্তিরা তিন পার্বত্য জেলায় কোনো জমি কিনতে পারবেন না। কিন্তু আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অর্থের বিনিময়ে ভূয়া জায়গার জমাবন্দি এবং বোমাং সার্কেল চিফ (রাজার সনদ) স্থায়ী বাসিন্দার সনদ নিয়ে অন্যস্থানের জমির ভূয়া কাগজ চৌহদ্দি মিলিয়ে বসিয়ে বনবিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে শুরু করে সরকারি খাস জমি বিক্রি করে দিচ্ছে বহিরাগতদের। ভূমি জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন অসাধু চক্রটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূয়ালকের কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠ অভিযোগ করে বলেন, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের প্রবেশ মুখে জমি গুলো চট্টগ্রাম বনবিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চল ছিলো। গর্জন, কড়ৃই’সহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান বড় বড় মাদার ট্রি ছিলো। সবগুলো গাছ রাতের আধাঁরে কেটে ফেলা হয়েছে বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের মেনেজ করে। জায়গাটি বৃক্ষশূন্য করে সেখানে জমির মালিকানা দাবী করে সাইন বোর্ড লাগিয়ে দেন ভূমি জালিয়াতি চক্রের সদস্যরা

কিন্তু অর্থের বিনিময়ে ভূয়া কাগজপত্র বের করে সরকারি জায়গা বিক্রি করা হয়েছে। বনবিভাগের সরকারি ৫ একর জায়গা ইতি মধ্যে বিক্রির নামে কয়েককোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চক্রটি।

সূয়ালকের বাসিন্দার জাতীয় পাটির জেলা সভাপতি কাজী নাছিরুল আলম অভিযোগ করে বলেন, সূয়ালক বাজার থেকে হলুদিয়া বাজার পর্যন্ত রাস্তার দু-পাশের বনাঞ্চলের জায়গাটি চট্টগ্রাম বনবিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমি। ছোট্ট বেলা থেকেই দেখেছি বনবিভাগের লোকজন জায়গাটির রক্ষণাবেক্ষণ এবং গাছের চারা রোপন ও পরিচর্যা করতেন। কিন্তু ভূমি জালিয়াতি চক্র জেলা প্রশাসনের সাবেক এক কর্মচারীর নামের ভূয়া কাগজপত্র চৌহদ্দি মিলিয়ে বসিয়ে রাতের আধাঁরে সবগুলো গাছ কেটে বিক্রি করে দিয়েছে। গাছের গোড়ার চিহ্নগুলো এখনো দৃশ্যমান রয়েছে। শোনেছি বিভিন্ন জনের নামে বনবিভাগের সরকারি জমিগুলো বিক্রিও করে দিচ্ছেন সাইনবোর্ড লাগিয়ে। সরকারি জমি ও বনাঞ্চল রক্ষায় সূয়ালকের বাসিন্দারা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে। প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দিবেন।

বনবিভাগের সরকারী জমির মালিক দাবীদার অভিযুক্ত জেলা প্রশাসনের সাবেক নাজির মো: আইয়ুব বলেন, আমার নামীয় ৫ একর জায়গার কাগজ কিনে নেন ক্যান্টিন বাবুল দাশ গং। তারাই মূলত জায়গা বিক্রি করছেন।

জালিয়াতি চক্রের মূলহোতা জেলা প্রশাসনের ক্যান্টিনের মালিক বাবুল দাশ ও জেলা প্রশাসনের নাইটগার্ড মো: ইউনুচ বলেন, জায়গাটি জমির রেকর্ডদীয় মালিক আইয়ুব সাহেবের কাছ থেকে কিনেছি। উনার নামে জমির বৈধ সব কাগজপত্র রয়েছে। বনবিভাগের জমি জায়গাটির পাশ্ববর্তী। তবে ভূয়া কাগজপত্র বসিয়ে বহিরাগতদের সরকারী জমি বিক্রির অভিযোগ তাহারা অস্বীকার করেছেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে বান্দরবান বোমাং সার্কেল চিফ কার্যালয়ের হেডক্লার্ক অংজাই বলেন, কোনো ধরণের ভূমি জালিয়াতির চক্র এবং জাল রাজার সনদ প্রদানের সাথে আমি জড়িত নয়। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ভুলক্রমে দেয়া রাজার সনদ তাৎক্ষণিক বাতিল করা হচ্ছে।

বনবিভাগের চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিভাগীয় কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বনবিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমি জবর দখলের কোনো সুযোগ নেই। আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি অভিযোগ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভূমি জালিয়াতির চক্রের সাথে বনবিভাগের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।