স্টাফ রিপোর্টার, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫, দৈনিক রাঙামাটি : নিজস্ব রাজ্য ও সিংহাসন না থাকলেও রয়েছে রাজকীয় আচার অনুষ্ঠান ও রীতি রেওয়াজ। বান্দরবান বোমাং রাজ পরিবার এখনো ধরে রেখেছে তাদের রাজকীয় ঐতিহ্য। এখনো প্রজারা রাজা বাহাদুরকে মাথা নুইয়ে প্রণাম করেন। প্রজাদের কাছ থেকে জুমের বাৎসরিক খাজনা আদায়ের জন্য আয়োজন করা হয় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রাজপুণ্যাহ উৎসব। ৩দিনব্যাপী রাজপূণ্যাহ উৎসব এবং এ উপলক্ষে মেলা চলবে ৫দিন।
শুক্রবার সকাল ১১টায় বান্দরবান জেলা সদরে রাজার মাঠে ১৩৮তম রাজপুণ্যাহ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী রাজকীয় পোশাকে রাজবাড়ি থেকে রাজকীয় বাঁশির সুরে অনুষ্ঠানস্থলে নেমে আসেন বান্দরবান বোমাং সার্কেল চিফ ১৭তম রাজা ইঞ্জিনিয়ার উচপ্রু চৌধুরী। এ সময় তার সৈন্য-সামন্ত, উজির-নাজির, সিপাহীশালারা রাজা বাহাদুরকে গার্ড দিয়ে রাজমঞ্চ নিয়ে যান। বোমাং রাজা সিংহাসনে বসলে সারিবদ্ধভাবে বান্দরবান জেলার ৭টি উপজেলার ৯৫টি মৌজা এবং রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই ও রাজস্থলী উপজেলার ১৪টি মৌজাসহ মোট ১০৯টি মৌজার হেডম্যান, ৮ শতাধিকেরও বেশি কারবারী, রোয়াজারা রাজাকে কুর্নিশ করে জুমের বাৎসরিক খাজনা ও উপঢৌকন রাজার হাতে তুলে দেন। জানা গেছে, ৩ দিনব্যাপী রাজপূণ্যাহ উৎসব এবং এ উপলক্ষে মেলা চলবে ৫দিন।
রাজপুণ্যাহ মেলা অনুষ্ঠানে বোমাং রাজার আমন্ত্রনে প্রধান অতিথি ছিলেন বেসমারিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি, সেনাবাহিনীর ৬৯ রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নকীব আহমেদ চৌধুরী, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা, জেলা প্রশাসক মিজানুল হক চৌধুরী, জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। এছড়া উপস্থিত ছিলেন, সামরিক-বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘পার্বত্যাঞ্চলের প্রধান সমস্যা হচ্ছে ভূমি বিরোধ। ভূমি জটিলতা নিরসনে আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে পাহাড়ের সংকট নিরসন করা হবে। পার্বত্যাঞ্চলের উন্নয়নে সরকারের আন্তরিকতার কমতি নেই। সকল সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করা হবে।’
বীর বাহাদুর বলেন, ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিক । পার্বত্য শান্তি চুক্তির ফলে পাহাড়ে উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে। ইতোমধ্যে চুক্তির মৌলিক অনেকগুলো দিক বাস্তবায়িত হয়েছে। অবাস্তবায়িত ধারাগুলোও আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়নের কাজ চলছে।’
বোমাং রাজা ইঞ্জিনিয়ার উচপ্রু চৌধুরী বলেন, ‘আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ভূমি কর বাড়ানো দরকার। সরকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পার্বত্যাঞ্চলের উন্নয়নে কাজ করতে চাই।’
রাজপরিবার সূত্র জানায়, ১৮৭৫ সালে ৫তম বোমাং রাজা সাক হ্ন ঞো’র আমল থেকে বংশ পরস্পরায় প্রতিবছর ঐতিহ্যবাহী রাজপুণ্যাহ উৎসব হয়ে আসছে। এ মেলায় বসেছে নাগর দোলা, সার্কাস, বিচিত্রানুষ্ঠান, পুতুলনাচ, মৃত্যুকূপসহ ব্যতিক্রমী নানা আয়োজন। এ ছাড়াও হরেক রকম জিনিসপত্রের দোকান এবং সারারাতব্যাপী চলবে যাত্রা অনুষ্ঠান। রাজপুণ্যাহ উৎসব পরিণত হয়েছে পাহাড়ি-বাঙালির মিলন মেলায়। শুধুমাত্র বান্দরবান, রাঙ্গামাটি নয় রাজপুণ্যাহ মেলা দেখতে ভিড় জমিয়েছেন দেশি-বিদেশী হাজারো পর্যটক।
এদিকে রাজ পুন্যাহ মেলাকে ঘিরে সকল ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করেছে প্রশাসন। বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিক উল্যাহ জানান, রাজপুন্যাহ মেলায় সকল ধরনের পরিস্থিতি মোকারেলায় তিনস্থরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ১৫টি সিসি ক্যামরার মাধ্যমে পুরো মেলাকে নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে।
পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান। সূত্র- অন্য মিডিয়া
ছবি- সংগ্রহিত