বান্দরবানে সেনা কর্মকর্তা হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ

421

॥ বান্দরবান প্রতিনিধি ॥

বান্দরবানে সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমানকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বিকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের উদ্যোগে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বুধবার গভির রাতে রাঙামাটি ও বান্দরবান সীমানা এলাকা রুমা জোনের অন্তর্গত বথিপাড়ায় একটি নিয়মিত সেনা টহলের উপর গুলি বর্ষণ করে এই সেনা সদস্যকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ সময় সেনা বাহিনী ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জন্য স্পষ্টভাবে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জন সংহতি সমিতিকে দায়ী করেছে সেনা বাহিনীর সূত্র। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বন্দুকযুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে সেনা কর্মকর্তারা।

শনিবার পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান কাজী মো. মজিবর রহমানের নেতৃত্বে বান্দরবান শহরের হোটেল হিলবার্ড চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।

প্রতিবাদ সভায় বক্তাগণ বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৫ বছর পরও পাহাড়ে জনসংহতি সমিতি জেএসএস এর সন্ত্রাসী বাহিনী সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুন, গুম, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছে। সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস পার্বত্য চুক্তি করলেও তারা অস্ত্রের জোরে সাধারণ মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে রাখছে। এমনকি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকেও লক্ষ্য করে তারা খুন-হত্যার মত ঘৃণ কর্মকান্ড করছে। কাজী মুজিবর রহমান সেনাবাহিনীর সদস্যকে খুন ও গুলি করে আহত করার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং সেনা কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) গভির রাতে বান্দরবানের রুমা উপজেলার বথিপাড়া এলাকায় সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি সেনা টহল দল অভিযানে বের হলে বথিপাড়া এলাকায় সন্ত্রাসীরা সেনা টহল দলকে লক্ষ্য করে গুলি করলে সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমান মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। টহল দলের অপর একজন সদস্য সৈনিক মো. ফিরোজ ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় বর্তমানে চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এদিকে বান্দরবান সেনা রিজিয়নের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার প্রেস ব্রিফিং এ জানানো হয়, সেনাবাহিনীর সোর্সের মাধ্যমে খবর পায় যে সন্তু লারমার নেতৃত্¦াধীন আঞ্চলিক সংগঠক পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএএস) সদস্যরা রুমা জোনের অন্তর্গত পাখই পাড়া এলাকায় অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছে। খবর পেয়ে বুধবার রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে সেনাবাহিনীর রুমা ২৮ ইনফেন্ট্রি রেজিমেন্টের (বীর) এর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি সেনা টহল দল পাখইপাড়ার দিকে রওয়ানা দেয়। টহল দলটি বথিপাড়া এলাকায় গেলে, পাশের জঙ্গলের একটি জুম ঘর থেকে সন্ত্রাসীরা সেনা টহল দলকে লক্ষ্য করে অতর্কিতে গুলি করতে থাকে। এসময় আত্মরক্ষার্থে সেনা টহল দলটিও সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি চালায়। সেনাবাহিনীর গুলিতে সন্ত্রাসী দলের তিন সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। সেনাসদস্যদের গুলিতে দিশেহারা হয়ে সন্ত্রাসী দলের অন্য ৭/৮ জন সদস্য পালিয়ে যাওয়ার সময়ও সেনা সদস্যরা সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে।

সেনাবাহিনী নিহত সন্ত্রাসীদের মরদেহ উদ্ধার করেছেন। এসময় সন্ত্রাসী বাহিনীর ব্যবহৃত একটি এসএমজি, বিপুল অস্ত্র ও গোলা জব্দ করে সেনাবাহিনীর টহল দল। জব্দকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে একটি সাবমেশিন গান (এসএমজি), ২৭৫ রাউন্ড তাজা গুলি, তিনটি অ্যামোনেশিয়াম ম্যাগজিন, তিনটি গাদা বন্দুক ও ৩ রাউন্ড গুলি, ৫ সেট মোবাইল ফোন, ২টি বান্ডুলিয়ার, চার জোড়ার জলপাই রং এর পোষাক, নগদ ৫২ হাজার ৯০০ টাকা।
প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন পার্বত্য নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মো. রুহুল আমীন, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন, মাওলানা আবুল কালাম সভাপতিত্ব করেন জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মো. তারুমিয়া।