॥ নুরুল কবির বান্দরবান থেকে ॥
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার দক্ষিণে এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার পূর্ব-দক্ষিণে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য। দুই উপজেলার অন্তত দুইশ কিলোমিটার সীমানা পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার। এই সীমানা এলাকায় বড় কোন নদী নেই। পাহাড়ী আকাঁবাকা পথ পাড়ি দিয়ে হেটেই পার হওয়া যায় মিয়ানমারের ওপারে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গত ৬ মাসের অধিক সময় ধরে আলীকদমে চোরাই পথে মিয়ানমারের গবাদী পশুর রমরমা বাণিজ্য চলে আসছে। সম্প্রতি শুরু হয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তেও। আর এসব গরু আনার কাজে জড়িত জনপ্রতিনিধিরা
দুই উপজেলার কুরুকপাতা, বাইশারী, তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, আশারতলী, জামছড়ি, বম্বনিয়া এবং রামু উপজেলার হাজিরপাড়া, মৌলভীরকাটার বেশ কিছু চোরাকারবারি, বাজার ইজারাদার ও স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিকে সঙ্গে নিয়ে এই অবৈধ বাণিজ্য করে আসছে। এতে করে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব যেমন হারাচ্ছে, ঠিক তেমনি মাদক বিস্তারের সুযোগও তৈরী করেছে এই চক্রটি। কিন্তু গত আগস্ট মাস ধরে মিয়ানমার সীমান্তে সেদেশের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয় থাকার পরও মিয়ানমারে ওপার থেকে কিভাবে অবাধে গরু আসছে সেই প্রশ্ন তোলেছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।
গত এক মাসে দুই উপজেলার সীমান্ত এলাকা ঘুরে অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোথাও মিয়ানমারের বিজিপি, আবার কোথাও আরাকান আর্মি, এবং আরসার সদস্যদের সঙ্গে আতাঁত করার কারনেই বিনা বাঁধায় মিয়ানমারের গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এই ক্ষেত্রে চোরাকারবারী চক্রটি ওপারে বাংলাদেশ ভুখন্ডের তথ্য পাচার করছে কিনা সেই প্রশ্নও উঠেছে।
জানা গেছে, গত দু- সপ্তাহ পূর্বে বাইশফাড়ি-তুমব্রু সীমান্তে বেশ কিছু গরু জড়ো করা হয় বাংলাদেশের এপারে আনার জন্য। পরে মিয়ানমারের ওপারে আরসার নাম ভাঙ্গিয়ে কিছু যুবক অর্থের লেনদেন করে গরুগুলো এপারে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। চক্রটি গরু ছাড়াও, মিয়ানমার থেকে ইয়াবা, বিদেশী মদ, সিগারেট এবং কফি ও ক্যালসিয়ামও নিয়ে আসে।
অন্যদিকে আলীকদম উপজেলার মিয়ানমার সীমান্তবর্তী পোয়ামুহুরী-কুরুকপাতা এলাকা দিয়ে গত ছয় মাসের অধিক সময় ধরে অবৈধ গরুর ব্যবসা চলে আসছে। এই সময়ে আলীকদম উপজেলা প্রশাসন, বিজিবি ও পুলিশ একাধিক অভিযান করে অবৈধ গরু আটক করতে সক্ষম হয়। গত কয়েকমাস ধরে আলীকদম প্রশাসন চোরাই গরু আটকে তৎপর হলে চোরাকারবারিরা পথ পাল্টিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী, ঈদগড়, কাগজিখোলা পথ ব্যবহার করে আসছে। দুই পথে দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ক্রাতপুং, বাইশারী ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমসহ বেশ কয়েকজন মেম্বারের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে একটি মুঠোফোন রেকর্ডে নিশ্চিত হয়েছে এই প্রতিবেদক।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি মিয়ানমারের অবৈধ গরু পাচারকারিদের নিয়ে আইন শৃংখলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে। বিশেষ করে এসব চোরাকারবারীদের নামের একটি তালিকাও করা হয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের আশারতলী, ফুলতলী, জামছড়ি, কম্বনিয়া, চেরারকুল, লম্বাশিয়া, ভাল্লুকখাইয়া, দোছড়ি এলাকায় সক্রিয় উল্লেখযোগ্য গরু ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছে, আবদুল হাকিম, আবুল হাসেম, আব্দু, আব্দুর রহমান, নুর মোহাম্মদ, আলী হোসেন, আবদুর রহমান, আবদুল গফুর, জয়নাল আবেদীন, ছগির আলম, মনজুর আলম, নুরুল কবির, শামসু, সোলতান, ফরিদুল আলম, আবু হান্নান।
ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু এলাকার রেজাউল, আবদুল বারী, রোহিঙ্গা নাগরিক হোসেন আহমদ। এছাড়া সীমান্ত ব্যবহার করে রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের হাজিরপাড়া, বালুবাসা এলাকার জসিম উদ্দিন, আবুল কালাম, জহির উদ্দিন, জসিম উদ্দিন, নজরুল, মাহাবুব, হারুন, আবু ঈসা, মোহাম্মদ আলী, ধলা পুতিয়া, আবদুর রহিম, মোহাম্মদ আলী, আবদু শুক্কুর, জয়নাল, রাসেল, নুরুল আলম, আলাউদ্দিন, ইলিয়াছ, হাবিব উল্লাহ, মনুর ছেলে জসিম।
আলীকদম সীমান্তে গরু বাণিজ্যের মধ্যে রয়েছে, ইউনুছ মিয়া, ইলিয়াছ, মারুফ, কফিল উদ্দিন, আবুল বশর, ফখরুল, শফি আলম, আলী হোসেন, উল্লেখযোগ্য।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দায়িত্ব পালন করে গরু চালান এলাকার বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন এসব চোরাকারবারিরা। এক্ষেত্রে কেউ পুজি, কেউ ক্ষমতা বিনোয়াগ করে থাকে। আর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট প্রধানদের প্রত্যেক গরুর জন্য ১৫০০ টাকা করে সিন্ডিকেট প্রধানরা আদায় করে থাকে। যে টাকা নেওয়া হয় বিভিন্ন খাতে ‘ম্যানেজ’ করার নামে।
স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি গরু ব্যবসার নামে যেসব ব্যাক্তি সক্রিয় হয়েছে তাদের অনেকে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত আবার অনেকের রয়েছে মামলাও। আবার কেউ চোরাই কাঠ ব্যবসায়ী
নাইক্ষংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস বলেন, সীমান্ত দিয়ে অবৈধ গরু প্রবেশের বিষয়ে আমরা কয়েকবার অভিযান চালিয়েছি। গরু চোরাচালান রোধে বিজিবি অনেক সতর্ক অবস্থানে আছে।