বিলাইছড়ি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

260

॥ বিলাইছড়ি প্রতিনিধি ॥

বিলাইছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিয়মের বাইরে এসএসসি তে ফরম ফিলাপ করানো ও নতুন শিক্ষার্থী ভর্তিসহ অতিরিক্ত বেতন আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় অভিভাবকরা জানায়, ২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় এক বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা ২০২৪ সালের নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে বেশ কয়েকজন ফেল করে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অকৃতকার্যদের ফাইনাল পরীক্ষার অনুমতি না দেওয়ার কথা থাকলেও মংচিলা মার্মা ও মিতু আক্তার নামের দু’জন অনিয়মিত শিক্ষার্থীকে প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম ফরম ফিলাপ করার অনুমতি দেন এবং বাকী শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করেন।

বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৩ জন ছাত্রী ও ১৪ জন ছাত্রের কৃতকার্য তালিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করার পর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাকী অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার অনুমতি না দেওয়ার কথা থাকলেও প্রধান শিক্ষক আমাদেরকে বঞ্চিত করে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী উক্ত দুই শিক্ষার্থীকে ফরম ফিলাপ করার অনুমতি দেন।

শিক্ষার্থী অনিয়মের বিচার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। তারা আরও জানান, নির্বাচনী পরীক্ষায় ফেল করা দু’জন শিক্ষার্থীকে ফরম ফিল-আপ এর সুযোগ দেওয়ার পর আমরা নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফল সীট নোটিশ বোর্ডে দেখতে গিয়ে দেখি, সেই ফলাফল সীট সেখানে আর নেই! এ কারণে আমরা মনে করছি যে, তিনি হয়তো তাদের দু’জনের নাম নতুন করে কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ফলাফল তালিকায় যুক্তকরে তাদের পাস দেখিয়ে থাকবেন।

তাছাড়া এসএসসি শিক্ষার্থীদের পুনঃভর্তিতে ১হাজার ৩শ’ পঞ্চাশ টাকা আদায় করেও মাত্র ৮শ’ পঞ্চাশ টাকার রশিদ দিয়ে দুর্নীতির আশ্রয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও উঠেছে প্র্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে নাম পরিচয়ে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানায়, আমি এসএসসিতে এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়ে পুনঃভর্তি হতে গেলে আমার কাছ থেকে মোট ১হাজার ৩শত ৫০টাকা নেয়া হয়েছে। কিন্তু আমাকে মাত্র ৮শত ৫০টাকার রশিদ দেয়া হয়েছে। বিনা-রশিদে ৫শত টাকা আমার কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। আমার মত অন্য অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও নিশ্চয়ই একইভাবে টাকা নেয়া হয়েছে বলে ধারণা করেন তিনি।

এদিকে ভর্তি কমিটিকে পাশ কাটিয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে আসনের বাইরে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানোরও অভিযোগও উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এতগুলো অভিযোগ ছাড়াও বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (জীব বিজ্ঞান) সুপ্রিয়া দে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপ-পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এর বরাবর একখানা অভিযোগপত্র প্রেরণ করেছেন। যা উপজেলার গণমাধ্যমকর্মীদের কাছেও পৌঁছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, প্রধান শিক্ষক বেশ কয়েক বছর যাবত হতে তাকে আর্থিক এবং মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে বিদ্যালয় ত্যাগের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন। অভিযোগে তিনি প্রাণ নাশের হুমকিসহ আরও লেখেন, ১৬নভেম্বর ২০২৩ তারিখ বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে গেলে, আর স্বাক্ষর করতে হবে না বলে তার কাছ থেকে হাজিরা খাতা কেড়ে নেয়া হয়।এর পর হতে সে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে পারছেন না। এ ফাঁকে তাকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত দেখানো হচ্ছে ফলে তিনি সম্প্রতি বিদ্যালয়ে উপস্থিত থেকেও কাগজে-পত্রে অনুপস্থিত থাকছেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, এমনকি কয়েক মাস ধরে বেতনও বন্ধ রাখা হয়েছে তার। সাম্প্রদায়িক মনোভাব পোষণ করে দুর্গাপূজার ভাতাও পূজা পরবর্তী প্রদান করা হয়েছে। সর্বোপরি তিনি লেখেন, পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে কর্মস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য করবে বলে হুমকিও দেওয়া হয়েছে তাকে। এ বিষয়ে তদন্ত পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উপ-পরিচালকের কাছে সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি। অভিযোগপত্রটির কপি তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে ও প্রেরণ করেছেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম এর সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ফেল করা কোন শিক্ষার্থীকে এসএসপি পরীক্ষায় এলাউ করা হয়নি। শুধু মাত্র হাজার মানিক উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ায় মিতু আক্তারকে এলাউ করা হয়েছে। অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি বিষয়ে বাস্তবতা বিবেচনায় ভর্তি কমিটির সুপারিশে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ২০জনকে অতিরিক্ত ভর্তি করায় সর্বমোট ৭৫জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে আরও অনেকে ভর্তি আবেদন করেছেন বলেও তিনি জানান।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায় বিষয়ে তিনি মুঠোফোনে জানান, অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৮শত ৫০টাকা স্কুলের জন্য এবং ৫শত টাকা অতিরিক্ত শিক্ষকদের জন্য নেয় বলে জানান। আর ৫শত টাকা রশিদে না নিয়ে আসার কারণ, এ টাকা বেসরকারী কাজে ব্যবহার হয়, তাই আমরা রশিদে দেখাই না বলে জানান তিনি।

মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার বিভীষণ চাকমার সাথে তার অফিসে সাক্ষাতকালে তিনি জানান, অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের ফরম ফিল-আপ এ অনিয়মের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। তাছাড়া সহকারি শিক্ষক সুপ্রিয়া দে, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বরাবর অভিযোগের একখানা অনুলিপি তার কাছে প্রেরণ করার কথা স্বীকার করে বলেন, যেহেতু তিনি উপ-পরিচালক বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন সেটি তারা ব্যবস্থা নিবেন। এবং শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত উদ্দিন জানান, আমি ভর্তি কমিটির সভাপতি ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে সরকার নির্ধারিত ৫৫জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছে।কিন্তু ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির অনুমতি চেয়ে ব্যাপক আবেদনপত্র আসায় পিছিয়ে পড়া উপজেলা হিসেবে এবং ভালো রেজাল্ট এবং ওয়েটিং লিস্টের বিশেষ বিবেচনায় অতিরিক্ত ২০জন শিক্ষার্থীকে আমরা ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু শুনেছি সম্প্রতি প্রধান শিক্ষক কমিটিকে অবহিত না করে আরও অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছেন। তবে সেই তালিকাটি এখনো আমার হাতে আসেনি। এ বিষয়ে আমি তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশের ব্যবস্থা করছি।

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা জানান , প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনেক অনিয়মের অভিযোগ আমার কাছে আসে। এসএসসি (অনিয়মিত) শিক্ষার্থীরা নির্বাচনী পরীক্ষায় যারা এক বিষয়ে খারাপ করেছে তাদের ২জনকে ফরম ফিল-আপ এর সুযোগ দিয়েছে কিন্তু অন্যদের বঞ্চিত করার অভিযোগে ইউএনওর কাছে একখানা অভিযোগ দাখিল করেছে। এর এককপি অনুলিপি আমার কাছে প্রেরণ করেছে। তাছাড়া সে ভর্তি কমিটিকে উপেক্ষা করে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছে। অথচ লটারিতে প্রথম অপেক্ষমান ২জন শিক্ষার্থীকে সে ভর্তি করেনি। এছাড়া ভর্তিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগতো আছেই। তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের মাঝেও অনেক অন্তর্দ্বন্দ্ব, কোন্দল ইত্যাদির অভিযোগ আসে।