॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥
পঞ্চশীল প্রার্থনাসহ ধর্মীয় আচার পালনের মধ্যদিয়ে রাঙ্গামাটির আসামবস্তী বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহার ও রাঙামাটি উলুছড়ি ছাবা বৌদ্ধ বিহারে চীবর উৎসর্গের মাধ্যমে মাসব্যাপী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসব শুরু হয়েছে। সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে রাঙামাটি আসামবস্তী বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহার ও রাঙামাটি বড়ুয়া জনকল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে ২৩তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসব শুরু হয়।
বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহার ও রাঙ্গামাটি বড়ুয়া জনকল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়ুয়ার পরিচালনায় ধর্মসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সুপ্রিয় বড়ুয়া, বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহার ও রাঙ্গামাটি বড়ুয়া জনকল্যাণ সংস্থার সভাপতি রণজিৎ কুমার বড়–য়া।
এর আগে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের রাঙ্গামাটি পৌর শাখার প্রধান উপদেষ্টা ভদন্ত ধর্মকৃর্তি মহাথেরোর সভাপতিত্বে আয়োজিত দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসবে ধর্মসভায় পূর্ণার্থীদের উদ্দেশে প্রধান ধর্মদেশক প্রদান করেন, কাউখালী শান্তি নিকেতন’র বৌদ্ধ বিহার’র অধ্যক্ষ্য ভদন্ত শ্রীমৎ জ্ঞানানন্দ মহাথেরো, আসামবস্তি ধর্মচক্র বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ পাঞ্ঞা বংশ মহাথেরো। সদ্ধর্মালোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম চন্দনাইশ কেন্দ্রীয় শ্রদ্ধানন্দ বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ বোধিপ্রিয় ভিক্ষু।
অনুষ্ঠানে পবিত্র মঙ্গলাচরণ পাঠ করেন, বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ করুনাপাল ভিক্ষু। এতে শত শত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। পরে পঞ্চশীলের মাধ্যমে মঙ্গলাচরনের পর ভিক্ষুসংঘকে চীবর উৎসর্গ করা হয়। বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহারে সমবেত প্রার্থনায় অংশ নিয়ে রাঙ্গামাটি বড়ুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ ভিক্ষুসংঘকে চীবর দান করেন।
ধর্মসভা ও পঞ্চশীল গ্রহণের পর চীবর দানের মাধ্যমে ‘মুক্তির অহিংসা বাণী ছড়িয়ে যাক মানুষে মানুষে এবং সামনের দিনগুলোতে শান্তি ফিরে আসুক ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের’ এমন প্রার্থনার মধ্যদিয়ে চীবর দানের সমাপ্তি ঘটে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল ভোরে পরিত্রাণ পাঠ, পুষ্পপূজা ও ভিক্ষুসংঘের প্রাতঃরাশ, জাতীয় পতাকা ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, বুদ্ধপূজা, শীলগ্রহণ, সংঘদান ও ভিক্ষু সংঘের ধর্ম দেশনা, অনুত্তর পূণ্যক্ষেত্র ভিক্ষু সংঘকে পিন্ডদান। দুপুরে ছিল উদ্বোধনী সংগীত, দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান, পূজনীয় ভিক্ষু সংঘের ধর্মোপদেশ ও সন্ধ্যায় ফানুস বাতি উত্তোলন।
এর আগে সকালে রাঙ্গামাটি উলুছড়ি ছাবা বৌদ্ধ বিহারে ১৫তম কঠিন চীবর দানানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সকালে বিহার প্রাঙ্গনে পঞ্চশীল প্রার্থনা, বৌদ্ধ মুর্তি দান, সংঙ্গ দান, চীবর দানসহ বিভিন্ন দানের মাধ্যমে চীবর দানানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে ধর্মীয় দেশনা প্রদান করেন পার্বত্য ভিক্ষু সংষের সভাপতি শুদ্ধালংকার মহাথের, ছাবা বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শুভদর্শী মহাথের। পরে ভিক্ষুসংঘকে চীবর উৎসর্গ করার মধ্যদিয়ে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।
উল্লেখ্য, মহামতি বুদ্ধের প্রজ্ঞাদীপ্ত শিক্ষা ‘বর্ষাবাস তথা বর্ষাব্রত’ পালনের সমাপনী অনুষ্ঠান শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা এবং দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসব হলো বৌদ্ধদের অতি পবিত্র ও মাহাত্ম্যপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এ পূত-পবিত্র অনুষ্ঠান-উৎসবের মধ্যদিয়ে বৌদ্ধরা তথাগত গৌতম বুদ্ধের পরম কল্যাণময় শিক্ষা চর্চার ব্রত হয়। হিংসা ক্রোধ ও মোহের বদলে প্রেম দয়া ও ক্ষমায় মানুষের কল্যাণে তপস্যা ভিক্ষুদের। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্রকে বলা হয় চীবর। তাই এ বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের পরিধেয় বস্ত্রের অভাব দুর করতেই কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান। তাই বৌদ্ধদের কাছে প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবর দান অত্যন্ত গুরুত্ববহ পুণ্যানুষ্ঠান।