ভালোবাসার প্রতিদানে জনগণের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা আরো বেড়ে গেলো: দীপংকর এমপি

113

॥ রাঙামাটি রিপোর্ট ॥

বিজয়ের পরদিন ফুলে ফুলে নেতাকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হলে পঞ্চমবারের মতো পার্বত্য রাঙামাটি সংসদীয় আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত দীপংকর তালুকদার এমপি। এসময় দীপংকর তালুকদার বলেন, আমার প্রতি রাঙামাটিবাসীর ভালোবাসায় আমি আপ্লুত। রাঙামাটির মানুষ আমাকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসে বলেই তারা বারবার ভোট দিয়ে আমাকে সংসদে পাঠিয়েছে, এবার সেই ভালোবাসার পরিমান ছিল আরো বেশি, আরো প্রাণবন্ত। তিনি বলেন, এই ভালোবাসার প্রতিদানে আমার জনগণের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা আরো বেড়ে গেলো। আমি রাঙামাটিতে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙালি সকল সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি আপনাদের সাথে নিয়ে পাহাড়ের বিষয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাবো।

সোমবার সকাল থেকেই তার বাসভবনে ফুল নিয়ে আসাতে থাকে বিভিন্ন ব্যক্তি, সংসগঠন ও সংস্থার লোকজনসহ সরকারি কর্মকর্তারা, এসময় ফুলের স্তবক নিয়ে ভিড় জমায় নিতাকর্মীরাও। এক পর্যায়ে জনতার অতিরিক্ত চাপ দেখে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান অসুইপ্রু চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধান্ত দেন যে বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা গ্রহণ করা হবে। এ অবস্থায় বেলা ১১টা পর্যন্ত অন্যান্যদের শুভেচ্ছা গ্রহণ করে তিনি বিহারের উদ্দেশ্যে উপাসনা করতে বেরিয়ে যান।

পরে বিকেলে বিপুল সংখ্য দলীয় নেতাকর্মী, শুভাকাঙ্খী ও বিভিন্ন স্তরের মানুষ দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানায়। এ সময় সকল নেতাকর্মীদের মুখে একটাই দাবি ছিল আমার নেতা নির্বাচন করেছি, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা মন্ত্রী চাই, তারা এবার দীপংকর তালুকদারকে মন্ত্রী বানিয়ে রাঙামাটিবাসীর দুঃখ ঘোচানোর আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে রাঙমাটি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা, অংসুইপ্রু চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব, সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. মুছা মাতব্বরসহ আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে রোববারের নির্বাচনে ২ লাখ ৭১হাজার ৫০৬ ভোট পঞ্চম বারের মতো বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য হিসেবে বিজয়ী হন সাবেক এই পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী এবং পাহাড়ি বাঙালি ঐক্যের প্রতীক দীপংকর তালুকদার। রোববার গভির রাতে নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ডিসি মোহাম্মদ মিজানুর রহামন খান। নৌকার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট এর অমর কুমার দে ছড়ি প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪৯৬৫ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে থাকা তৃণমুল বিএনপির মো: মিজানুর রহমান সোনালী আশ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৬৯৩ ভোট। রাঙামাটিতে মোট ভোটার ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৫৪ জন।
দীপংকর তালুকদার ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের নির্বাচন করেই তরুণ নেতা হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময় তিনি পার্বত্য শান্তিচুক্তি সফল করতে অনন্য ভূমিকা পালন করেন। চুক্তির পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় প্রত্যাগত শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোসের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব প্রদান করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি হেরে গেলেও ২০০৮ সালের ডিসিম্বরে নবম সংসদ নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোট বিজয়ী হয়ে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তবে ২০১৮ সালে জেতার পর তাকে মন্ত্রণালয় না দিয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। মনে দুঃখ থাকলেও নেত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে ধৈর্যের পরাকাষ্টা প্রদর্শন করেন এই বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ। এবার তার সবুরের মেওয়া ফলবে বলে প্রত্যাশার করছে রাঙামাটি সর্বস্তরের মানুষ।

ঘোষিত ফলাফলে জানানো হয়েছে, রোববার ৭ই জানুয়ারী রাঙামাটিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট বৈধ ভোটারের সংখ্যা ছিলো ২৭৯০৩১। এই নির্বাচনে বাতিল হয়েছে ৪ হাজার ২৪৬টি ভোট। ভোটের দিন সারাদিনে সর্বমোট ২ লাখ ৮৩ হাজার ২৭৭ জন ভোটার ভোট কেন্দ্রে ভোট প্রদান করেছে।

পার্বত্য রাঙামাটি(২৯৯) আসনের মোট ভোটার ৪,৭৪,৪৫৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২,৪৭,৪১৬ ও মহিলা ২,২৭,০৩৬ জন, এছাড়াও রাঙামাটিতে দু’জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন। রাঙামাটির ১০টি উপজেলার ২১৩টি কেন্দ্রের ১ হাজার ১২১টি ভোটকক্ষে ভোট গ্রহন করা হয়। এর মধ্যে ‘হেলিসর্টি’ কেন্দ্র-১৮টি।