স্টাফ রিপোর্টার, ২৯ নভেম্বর ২০১৫, দৈনিক রাঙামাটি : পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘৮ গণসংগঠনের কনভেনিং কমিটি’ গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ), পা.চ.নারী সংঘ, সাজেক নারী সমাজ, সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটি, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি ও প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়াড আজ ২৯ নভেম্বর রবিবার খাগড়াছড়ি সদরের তিনটি স্থানে জাতিসংঘ ঘোষিত ‘ফিলিস্তিন সংহতি দিবসে’ সমাবেশ করতে গেলে নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশের হামলা, বেধড়ক লাঠিপেটায় নারীসহ ১৪ জন আহত এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা, একই সংগঠনের কর্মী দ্বিতীয়া চাকমা ও ২জন ছাত্রকে আটক করা হয়েছে।
আট গণসংগঠনের কনভেনিং কমিটির আহ্বায়ক সোনালী চাকমা ও সদস্য সচিব অংগ্য মারমা এক বিবৃতিতে উক্ত হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা আটককৃতদের কাল সোমবারের মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে আগামী মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) খাগড়াছড়ি জেলায় আধাবেলা সড়ক অবরোধ পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।
আঘাতে দীপু ত্রিপুরা ও বিপ্লব চাকমা মাথা ফেটে গুরুতর আহত হয়েছেন। সেনা-পুলিশের হামলায় সমাবেশে অংশগ্রহণকারীগণ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বিবৃতিতে তারা অভিযোগ করে বলেন, রবিবার সকাল সাড়ে দশটায় খাগড়াছড়ি সদরের মধুপুরে অনুষ্ঠিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অতর্কিতে সেনা-পুলিশ হামলা চালায়। এতে ৩ নারীসহ কমপক্ষে ৮ জন গুরুতর আহত হয়। সেনা-পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটা ও বেয়নেটের, সমাবেশ ভ-ুল হয়ে যায়।
এ ঘটনার ঘণ্টাখানেক পর ১১.৩০ মিনিটে স্বনির্ভর থেকে চেঙ্গীস্কোয়ারে আহুত সমাবেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিলে উপজেলা অফিসের সামনে আবারো হামলা চালানো হয়। এ সময় রাস্তা থেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা ও সদস্য দ্বিতীয়া চাকমাকে সেনা-পুলিশ সদস্যরা আটক করে। এছাড়া স্বনির্ভর এলাকা থেকে জেএসসি (সদ্য সমাপ্ত হওয়া) পরীক্ষার্থী দীবিক্ষ দেওয়ান ও উপজেলা পরিষদ এলাকা থেকে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের ছাত্র জয়শীষ চাকমাকে আটক করা হয়েছে। সেনা-পুলিশ সদস্যরা লাঠিপেটা করে সমাবেশে যোগদানকারীদের তাড়িয়ে দেয়। এতে ৪ নারীসহ ৬ জন আহত হয়।
আট সংগঠনের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,‘২৯ নভেম্বর হচ্ছে জাতিসংঘ ঘোষিত ফিলিস্তিনি সংহতি দিবস। সারা বিশ্বে ন্যায় বাংলাদেশের জনগণও এ দিবসের সাথে একাত্মতাবোধ করে। খোদ বাংলাদেশ সরকারও ফিলিস্তিনিদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানায়। এ অবস্থায় খাগড়াছড়িতে জাতিসংঘ ঘোষিত দিবসে সংহতি জানাতে গিয়ে ৮গণসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর যেভাবে নিরাপত্তা বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্বিচারে বেয়নেট চার্জ, লাঠিপেটা করে নারী-পুরুষ স্কুল-কলেজ ছাত্র-ছাত্রীকে জখম করেছে, তাতে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আরও বেশী ঘণীভূত হবে। সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সরকারের ঘোষিত সমর্থন পরোয়া করে না বলে প্রতিয় মান হয়। কতিপয় সেনা কর্মকর্তা জাতিসংঘের নীতিমালা পদদলিত করার ধৃষ্টতা কিভাবে দেখালেন।
জাতিসংঘের পরিচালিত বিভিন্ন শান্তি মিশনে অংশ নিলেও আদতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কতখানি শান্তিরক্ষার সহায়ক, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময় তাদের বিতর্কিত ভূমিকা জনমনে এ ব্যাপারে সংশয় আরও বদ্ধমূল হচ্ছে বলে নেতৃবৃন্দ মন্তব্য করেছেন।
আটককৃতদের আজ রবিবারের মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে আগামী মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) খাগড়াছড়ি জেলায় আধাবেলা সড়ক অবরোধ পালনের ঘোষণা দিয়েছে ৮গণসংগঠন।
এদিকে, গোটা খবংপুজ্জ্যাপাড়ায় হুমকিমূলক টহল জোরদার করে। চেঙ্গীনদীর পারে গিয়ে সমাবেশে যোগদানেচ্ছু লোকজনের মনে ভীতি সঞ্চার করে। বিকাল পর্যন্ত পূর্ব ও পশ্চিম নারাঙহিয়ার সংযোগস্থল সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে সেনা টহল জোরদার রয়েছে। এখন এ এলাকার সর্বত্র আতংক বিরাজ করছে। – প্রেস বিজ্ঞপ্তি
পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান