মঙ্গলবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

383

ডেস্ক রিপোর্ট >>

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে চাপে আছে বাংলাদেশ সরকার। বিভিন্ন সংগঠন তাদের নিয়ে সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ১২ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে রোববার ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূত জর্জ কোচেরি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছেন যে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত তিন হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। বিকেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর জর্জ কোচেরি বলেন, ‘‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন, এই সহিংসতায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে তিন হাজারের মতো রোহিঙ্গা মারা গেছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের সহায়তা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন। ”

অন্যদিকে, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, বাংলাদেশে এখন রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা সাত লাখেরও বেশি। ২৫ আগস্ট থেকে এখন অবধি রাখাইন থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছে তিন লাখ বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে কক্সবাজার ও সংলগ্ন জেলাগুলোকে কাজ শুরুর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের নাম, ঠিকানা, ছবি এবং সম্ভব হলে হাতের ছাপ নেবেন।

আর সব রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এক জায়গায় রাখার জন্য কক্সবাজারের মধ্যেই আপাতত দুই হাজার একর জমি খোঁজা হচ্ছে। ”

এদিকে, সরকারের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে যে, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি বাংলাদেশে যাতে রোহিঙ্গাদের খাবার, আশ্রয় নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে সরকার সেদিকে নজর রাখছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মনিটর ও নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘রোহিঙ্গা সেল’ গঠন করেছে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতসহ আরো অনেক রাজনৈতিক দল রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকারের ওপর চাপ দিচ্ছে। তারা দাবি করছে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ‘ব্যর্থ’ হয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চ সোমবার বিকেলে ঢাকায় মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছে। আর হেফাজতে ইসলাম ঘেরাও করবে ১৯ সেপ্টেম্বর। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ছাড়াও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিদিনই ঢাকায় বিক্ষোভ করছে। ধারণা করা হচ্ছে আগামী শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকাসহ সারাদেশে বড় আকারের বিক্ষোভ হতে পারে।

প্রসঙ্গত, ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসা শুরু করলে প্রথমে সীমান্ত সিল করা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কয়েকদিন পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরণের নির্দেশ দিলে সীমান্ত শিথিল হয় এবং ব্যাপকহারে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখেই বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে। তবে বাংলাদেশ কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও অব্যাহত রেখেছে। তারই অংশ হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্টদূতদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

বাংলাদেশে এখন সব মিলিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্য কমপক্ষে সাত লাখ। এর মধ্যে নিবন্ধিত মাত্র ৩০ হাজার। কূটনীতিক এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের এখন প্রধান কাজ তিনটি। প্রথমত, নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় এবং খাদ্যের ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়ত, শরণার্থী ক্যাম্প এবং সংলগ্ন এলাকার আইন-শৃঙ্খলা নিশ্চিত এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তালিকাভুক্ত করা। তৃতীয়ত, রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। ”

তিনি বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন করতে হলে বাংলাদেশকে বড় ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। শুধু ঢাকায় বসে হবে না। বন্ধু রাষ্ট্রগুলোতে বিশেষ দূত পাঠাতে হবে। ওইসব দেশকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানাতে হবে। ”