মাদকবিরোধী বিতর্ক উৎসবে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক : মাদক এখন গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে

861

Photo 4
সিরডাপে অনুষ্ঠিত ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত মাদকবিরোধী বিতর্ক উৎসবের উদ্বোধনী প্রতিযোগিতার বিজয়ী দল শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজকে ক্রেস্ট প্রদান করছে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। এসময় উপস্থিত ছিলেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান।

ঢাকা ব্যুরো অফিস, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি (প্রেস বিজ্ঞপ্তি) : ‘সারাদেশে গত বছরই মাদক বিষয়ে মোট ৪২৫০১টি মামলা হয়েছে। ১ কোটি ৪০ লক্ষেরও বেশি ইয়াবা উদ্ধারা করা হয়েছে। গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে মাদক। এ থেকেই উপলব্ধি করা সম্ভব মাদকের ভয়াবহতা কতোটা তীব্র। তবে শুধু আইন প্রয়োগের মধ্যে দিয়ে মাদকের বিস্তার রোধ করা সম্ভব নয়। সামাজিক গণসচেতনতা তৈরির মধ্যে দিয়েই মাদককে পরিহার করতে হবে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীসহ ঝুঁকিপূর্ণ সব জনগোষ্ঠীকে সচেতন না করা গেলে মাদকের চাহিদা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে না। সমাজে মানুষ মাদকের অপব্যবহার এবং কুফল সম্পর্কে যতবেশি সচেতন হবে তত মাদকের চাহিদা কমে আসবে।’

আজ ১৯ জানুয়ারি ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সপ্তাহব্যাপী মাদকবিরোধী বিতর্ক উৎসব-২০১৬ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বিপিএম, পিপিএম একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ উৎসবের শ্লোগান- ‘মাদকমুক্ত তরুণ প্রাণে, গড়বো দেশ যুক্তির গানে।

পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক আরও বলেন, বর্তমানে মাদক একটি জাতীয় সমস্যা। এই সমস্যা মোকাবিলায় সবাইকে এগিয়ে আসার প্রয়োজন রয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রাম-শহর সর্বত্র মাদকের উৎস বন্ধ এবং একই সাথে সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে সর্বাত্বক চেষ্টা করা হচ্ছে। মাদকবিরোধী বিতর্ক উৎসব আয়োজন মাদক প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান বলেন, বর্তমানে সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সাথে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনও হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় আইন করে সবকিছু প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। মাদক প্রতিরোধে সামাজিক প্রতিরোধের পাশাপাশি মাদক নিয়ন্ত্রণে যারা যুক্ত তাদের নীতি নৈতিকতারও উন্নয়ন ঘটাতে হবে।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দেশে মাদকাসক্তদের মধ্যে ৮০ ভাগেরও বেশি তরুণ জনগোষ্ঠী। এদের অধিকাংশই সমাজের নানা অসঙ্গতির কারণে বন্ধুদের দ্বারা মাদকাসক্তির দিকে ঝুঁকে পড়ে। এই বিতর্ক উৎসব তাদের যুক্তিবোধের মধ্যে দিয়ে মাদকের কুফল তুলে ধরে এর থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করতে সহযোগিতা করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তরুণরা জাতির ভবিষৎ, তাই তরুণরা ব্যর্থ হলে, রাষ্ট্র ব্যর্থ হবে। এই ব্যর্থতার দায়ভার সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারবে না। কিরণ বলেন, মাদকের ঝুঁকি থেকে দূরে রাখতে তরুণ প্রজন্মের মাঝে নতুন শক্তি তৈরি করা না গেলে সমাজকে আলোকিত করা সম্ভব হবে না।
Photo 3

সিরডাপে অনুষ্ঠিত ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আয়োজিত মাদকবিরোধী  বিতর্ক উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, বিতর্ক সংগঠক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমানের সাথে বিতার্কিকদের দেখা যাচ্ছে।

উদ্বোধনী বিতর্কে ভিকারুন নূন নেসা স্কুল অ্যান্ড কলেজকে পরাজিত করে শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজ জয়ী হয়।  প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন মাদ্রক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (নিরোধ শিক্ষা) নাজমুল আহসান মজুমদার, যোগাযোগ পরামর্শক ড. এস.এম মোর্শেদ, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। এ ছাড়াও সপ্তাহব্যাপী মাদকবিরোধী বিতর্ক উৎসবের প্রথম দিনে  প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑসিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ, সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারী স্কুল, সাউথ পয়েন্ট কলেজ, ঢাকা কমার্স কলেজ ও ঢাকা ক্যান্টঃ পাবলিক গার্লস কলেজ।

মাদকাসক্তির কারণ, মাদক প্রতিরোধে পরিবার-সমাজ ও রাষ্ট্রের ভূমিকা, মাদকের কুফল, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, মাদক প্রতিরোধ আন্দোলন, গণমাধ্যমের ভূমিকা, সুশীল সমাজের দায়বদ্ধতা-ইত্যাদি বিষয় নিয়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগামী ২৪ জানুয়ারি এফডিসিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন উৎসবের গ্রান্ড-ফাইনাল ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করবেন। প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ দলকে পুরস্কার হিসেবে নগদ অর্থ, ট্রফি, ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে।

প্রতিযোগিতায়  বিতার্কিক, শিক্ষার্থী-শিক্ষক, অভিভাবক, গণমাধ্যম কর্মী ও  সরকারী বেসরকারী কর্মকর্তাসহ নানা শ্রেণী পেশার ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

পোস্ট- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান