পিছিয়ে পড়া পার্বত্য জেলার মানব সম্পদ উন্নয়নে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে গত কয়েক বছর যাবৎ ধারাবাহিকভাবে যেসব কর্মমূখী শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে; পাহাড়ের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তা অসামান্য অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি অধিক গুরুত্ব দেওয়া সময়ের দাবি। দেশে বর্তমানে সাধারণ শিক্ষা, ধর্মীয় শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা এবং বিশেষায়িত শিক্ষা নামে নানা ধরণের শিক্ষা পদ্ধতি চালু থাকার বিষয়টি যথাযথ নয় উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করে শিক্ষা পদ্ধতির সংস্কার প্রয়োজন। একই সাথে শিক্ষা জীবনশেষে শিক্ষার্থীরা যাতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে সে দিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
শ্রী লারমা আরো বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তথ্য প্রযুক্তি একটি অপরিহার্য অনুসঙ্গ। তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলা গেলে তারা আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে অমূল্য অবদান রাখতে হবে। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তবে মনে রাখতে হবে কম্পিউটারের উপর দক্ষ হয়ে তা যেমন ইতিবাচকভাবে কাজে লাগানো যায়, তেমনি এর নেতিবাচক দিকও রয়েছে। প্রযুক্তির নেতিবাচক দিক হতে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি আরো বলেন, শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে সমাজ উন্নয়নে যোগ্য ভূমিকা রাখা কঠিন। সমাজে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রয়োজন নিজের মূল ও শেকড়, বিশ্ব প্রেক্ষাপট, ইতিহাস ঐতিহ্য তথা নিজের সমাজ ব্যবস্থার আদ্যপ্রান্ত জানা। এভাবে জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর জন্য তথ্য প্রযুক্তি নিয়ামক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাঙামাটি সদর সেনা জোনের আয়োজনে ২০১ জন যুবক যুবতীর মাঝে কারিগরি প্রশিক্ষণের সনদ বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে সন্তু লারমা উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
রাঙামাটি সদর সেনা জোনের উদ্যোগে এই যুবক যুবতীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
রিজিয়ন সদর দপ্তরের প্রান্তিক হলে অনুষ্ঠিত এ অনষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙামাটি সেনা রিজিয়নের অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সানাউল হক এসজিপি পিএসসি ও রাঙামাটির জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাকেন সদর জোনের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার মেজর মোঃ নাঈমুল হাসান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ সদস্য হাজি মোঃ মুছা মাতব্বর, পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, সহকারি পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মাহবুব উন নবী ও রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আল হক প্রমূখ।
রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সানাউল হক বলেন, পাহাড়ের মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়নে সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন যাবত কাজ করে যাচ্ছে, এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। ডিজিটাল যুগে এসে কম্পিউটার শেখা এখন সময়ের দাবি। এ অঞ্চলের ছেলে মেয়েদেরকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তুলতে সেনাবাহিনী যে কার্যক্রম শুরু করেছে, তা অব্যাহত রাখা হবে। তিনি বলেন এই পরিশ্রম তখনই সফল হবে, যদি শিক্ষার্থীরা প্রশিক্ষনে অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগাতে পারে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসরণ করে আমরা ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশের পরিণত করতে চাই। এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন তখনই সম্ভব হবে যদি আমাদের সার্বিক উন্নয়নের প্রত্যেকটি সূচককে আমরা উপরে নিতে পারি। মানব সম্পদ উন্নয়ন এ ক্ষেত্রে একটি অন্যতম পথ। পার্বত্যাঞ্চলের ছেলে মেয়েদের জন্য এই প্রশিক্ষণ একটি চমৎকার উদ্যোগ। যুতসই ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কম্পিউটার শিক্ষার বিকল্প নেই। সুন্দর সমাজ গঠনে ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে এ উদ্যোগের জন্য তিনি সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রশিক্ষণে যথেষ্ঠ পরিমাণ নারী শিক্ষার্থী থাকার বিষয় অত্যন্ত উৎসাহ ব্যঞ্জক।
এ অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর রাঙামাটি সদর সেনা জোন পরিচালিত ২০১ জন কম্পিউটার প্রশিক্ষণার্থীর মাঝে সনদ বিতরণ করা হয়। সেনাবাহিনী সূত্র জানায়, পার্বত্য রাঙামাটির সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষিতদের স্বাবলম্বী করে তুলতে ২০১২ সাল থেকে এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। কাউখালী উপজেলায় প্রথম এ কর্মসূচি শুরু করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে ঘাগড়ায় স্থানান্তর করা হয়।
এ পর্যন্ত উক্ত কর্মসূচির আওতায় ২৩টি ব্যাচে ৪৭৩জন প্রশিক্ষণার্থী অংশ নিয়ে কম্পিউটার প্রশিক্ষন গ্রহণ করেন। চলতি বছর জানুয়ারী হতে নভেম্বর পর্যন্ত ৮টি ব্যাচে ১২০ জন প্রশিক্ষনার্থী অংশ নেন। সূত্র জানায়, প্রশিক্ষণ শেষে অনেকে নিজ উদ্যোগে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করে স্বাবলম্বী হওয়া সুযোগ পেয়েছে।