মানিক মিয়া স্মৃতি সম্মাননা পেলেন মকছুদ আহমেদ

508

॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥

সংবাদপত্র জগতের পথিকৃৎ, স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা ও দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ‘মোহাম্মদ তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া স্মৃতি সম্মাননা’ পেলেন পাহাড়ের প্রবীণ সাংবাদিক ও দৈনিক গিরিদর্পণ সম্পাদক একেএম মকছুদ আহমেদ। শনিবার রাঙামাটি প্রেসক্লাবে সংক্ষিপ্ত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই সম্মাননা মকছুদ আহমেদের হাতে তুলে দেন স্বাধীন সংবাদপত্র পাঠক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী।

তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশের প্রতিথযসা কিছু সাংবাদিকদের অনুকুলে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। গত ১লা জুন জাতীয় প্রেসক্লাবে তথ্য মন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সম্মাননা বিতরণ করেন। ওই অনুষ্ঠানে মকছুদ আহমেদ উপস্থিত হতে না পারায় স্বাধীন সংবাদপত্র পাঠক সমিতির নেতৃবৃন্দ রাঙামাটি এসে তার হাতে এই সম্মাননা অর্পণ করে।

সম্মাননা বিতরণ ঘিরে মানিক মিয়ার স্মরণে শনিবার রাঙামাটি প্রেসক্লাবে মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

দৈনিক ইত্তেফাকের রাঙামাটি প্রতিনিধি প্রবীন সাংবাদিক ও গিরিদর্পণ সম্পাদক এ কে এম মকছুদ আহমেদের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী। মুখ্য আলোচক ছিলেন স্বাধীন সংবাদপত্র পাঠক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি সাংবাদিক এস. এম. জামাল উদ্দিন। আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আল হক, সমিতির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সাংবাদিক শ্যামল নাথ ও রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী। মিলাদ ও দোয়া পরিচালনা করেন মাওলানা কারী ওসমান গণি চৌধুরী।

সভায় বিভিন্ন বক্তাগণ বলেন; পূর্ব বাংলার স্বাধিকার ও স্বায়ত্তশাসনের মাঝে যাঁরা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাদের মধ্যে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া একজন। তিনি তার শক্তিশালী রাজনৈতিক কলামে, সভা-সমিতিতে ভাষণদানকালে এবং সহকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে যে বিষয়টির ওপর বারবার ইঙ্গিত দিতেন, তা ছিল পূর্ব বাংলার স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা ও পুর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন। তিনি জানতেন, স্বাধিকার ও স্বায়ত্তশাসন ছাড়া জাতির অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আর অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া রাজনৈতিক স্বাধীনতাও অর্থহীন। মানিক মিয়া আজীবন একটি স্বপ্ন লালন করতেন। সেই স্বপ্নের মূল প্রতিপাদ্য ছিল পূর্ব বাংলার মুক্তি। মানিক মিয়া ছিলেন পূর্ব বাংলার দাবিদাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আপোষহীন। মানিক মিয়া ও তার লেখনী দ্বারা এই দেশবাসীকে যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম ও স্বাধীনতা মূলত সেই চেতনারই ফসল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ রচনায় তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার অবদান চিরোজ্জ্বল।

বক্তারা আরো বলেন, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ব্যক্তি বা ব্যবসায়িক স্বার্থরক্ষার জন্য সংবাদ মাধ্যমকে ব্যবহার করেননি। তাঁর কাছ থেকে জাতির অনেক কিছু শেখার আছে। স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া। তাঁর বলিষ্ঠ লেখনী বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উজ্জীবিত করেছিল। তাই বঙ্গবন্ধু সে সময় সাড়ে সাত কোটি মানুষের নয়নমণি ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সহযোগী শক্তি হিসেবে স্বাধীনতা সংগ্রামে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাংবাদিকতাকে অবলম্বন করে সারাজীবন মানিক মিয়া এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সম্মুখযোদ্ধা ছিলেন। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া আমৃত্যু নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। সেজন্য তিনি বাংলার মানুষের কাছে নির্ভিক সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। আলোচনা সভা শেষে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।