॥ নুরুল কবির ॥
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী এলাকায় মিয়ানমারের ছোড়া মর্টারশেলের আঘাতে এক বাংলাদেশিসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ। নিহতরা হলেন- ঘুমধুম ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের জলপাইলী এলাকার বাদশা মিয়ার সহধর্মিণী হোসনে আরা (৫৩) ও নবী হোসেন (৫২)। এদের মধ্যে নবী হোসেন রোহিঙ্গা নাগরিক বলে জানা গেছে। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে তুমব্রু সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি (রোববার) ভোর রাত থেকে টানা সাত ঘন্টা মিয়ানমারের সীমান্তের অভ্যান্তরে জান্তা বাহিনীর সাথে সে-দেশের স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহী পার্টি (আরকান আর্মির-এএ) সাথে তুমুলযুদ্ধে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি ) ২৭ জন সদস্য পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে।এ নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বিজিপি সদস্যের সংখ্যা দাঁড়াল ৯৫ জনে।
রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টায় ও সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ৩টা পর্যন্ত পালিয়ে আসার এই তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে রাতে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া বিজিপির সদস্য সোমবার সকালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৫ জনের।
নির্ভযোগ্য সূত্রে জানা যায়, বিজিপির ৬৮ জন সদস্যদের মধ্যে ১৫ জনের বেশী আহত। এর মধ্যে দুই জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তারা কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এছাড়া রবিবার থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত নতুন করে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় হওয়া ২৭ জনের কতজন আহত তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) আশিকুর রহমান বলেন, গত রবিবার মিয়ানমারের বিজিপির দুই সদস্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত ২টা পর্যন্ত কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখলী ইউনিয়নের ধামনখালী সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অভ্যান্তরের টেঁকিবুনিয়া এলাকয় ব্যাপক গোলাগুলি ও বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।তবে সকাল থেকে গোলাগুলির আর কোন শোনা যায়নি।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, গত কাল রবিবার ভোর রাত থেকে টানা সাত ঘন্টার মতো গোলাগুলির আওয়াজ আর মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী পুলিশ (বিজিপি) আমাদের এপারে ডুকে পড়ে বিজিবির তত্ত্বাবধানে আশ্রয় নিচ্ছে নিরস্ত্র ভাবে। আজ দুপুরেও গোলি ছুড়ে এসে জলপাইতলী এলাকায় বাংলাদেশী এক মহিলাসহ এক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।
আমাদের পক্ষ থেকে সীমান্তের বাসিন্দাদের সর্তক করা হচ্ছে,যাতে করে বিনা প্রয়োজনে ঘরে থেকে বের না হয়।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দীন বলেন, বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি উত্তেজনা থাকায় সাময়িক সময়ের জন্য সীমান্তবর্তী ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে।নিরাপত্তা জনিত কারনে জনগণের যাতায়ত সীমিত করার পাশাপাশি ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকার বেশ কয়েকটি সড়ক যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে জনপ্রতিনিধিদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।