যমচুগে শ্রীমৎ নন্দপাল মহাস্থবির : নির্বাণ আবিষ্কার করে অমৃতের সন্ধান দিয়েছেন তথাগত বুদ্ধ

246

p.1

স্টাফ রিপোর্টার, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : জরা-ব্যাধি-মৃত্যু, শোক বিলাপ প্রভৃতি দুঃখে পরিপূর্ণ এই সংসার। জীবনে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর চিন্তা। মৃত্যুর হাত থেকে কারোর রক্ষা নেই। জ্ঞানী মরে, ধ্যানী মরে, ব্রহ্মচারীও মরে। সবাইকে একদিন মরতে হয়। এই জগতে এমন কোন স্থান নেই যেখানে মৃত্যু হয় না। তথাগত ভগবান বুদ্ধ নির্বাণ আবিষ্কার করে মৃত্যুর মধ্য থেকেই অমৃতের সন্ধান দিয়েছেন। দুঃখ নিরোধ নির্বাণ আবিষ্কার করে প্রাণীগণকে জন্ম-জরা,ব্যাধি ও মৃত্যু থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে গেছেন। মঙ্গলবার যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত মহাসংঘদান অনুষ্ঠানে বনভান্তের প্রধান শিষ্য নন্দপাল মহাস্থবির এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন,  মানব জীবন খুবই দুর্লভ। দেব-ব্রহ্মাদের থেকেও মানুষের জীবন অত্যন্ত মুল্যবান। মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করলে বুদ্ধের শিক্ষা, দান, শীল, ভাবনা চর্চা করে নির্বাণ সাক্ষাৎ সম্ভব হয়। অন্য কোনো প্রাণীর পক্ষে তা সম্ভব হয় না। তাই দুর্লভ মানব জীবন সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হলে সবাইকে বুদ্ধের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে শীল সমাধি প্রজ্ঞার অনুশীলন করে জ্ঞানের পথে অমৃতের সন্ধান করতে হবে।
মঙ্গলবার সকালে ত্রিশরণসহ পঞ্চশীল গ্রহণ, বুদ্ধমুর্তি দান, মহাসংঘদান, অষ্ট পরিষ্কারদান, হাজার প্রদীপ দানসহ বিভিন্ন দানানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে রাঙামাটি সদর উপজেলার বন্দুকভাঙ্গা, লংগদু উপজেলার কাট্টলী, বরকল উপজেলার সুবলং, বরকলের ফালিটাঙ্যাচুগ এলাকাবাসী, খাগড়াছড়ির দিঘীনালা এবং ভারতের আগরতলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক পুণ্যার্থী  অংশ নেয়।

অনুষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ ভিক্ষুদের মধ্যে বরকল উপজেলার লতিবাশছড়া বন বিহারের অধ্যক্ষ শুভবর্দ্ধন মহাস্থবির, দিঘীনালার বটতলী ধুতাঙ্গটিলা বন বিহারের অধ্যক্ষ দেবধাম্মা মহাস্থবির, যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ কল্যাণ জ্যোতি স্থবির, ভারতের বুদ্ধগয়া বন বিহারের আবাসিক ভিক্ষুসংঘ, শ্রীমৎ নন্দপাল মহাস্থবিরের সদ্ধর্ম প্রচারের সহযোগী ভিক্ষুসংঘ উপস্থিত ছিলেন।

উপাসক-উপাসিকাদের মধ্যে যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্র পরিচালনা কমিটির উপদেষ্টা পুরেন্দ্র চাকমা, মহালছড়ি জনতা বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি পুর্ণচক্র চাকমা, যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্র পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিহারী চাকমা, সহ-সভাপতি দয়াল কৃঞ্চ চাকমা, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) রূপক চাকমা (যুবক্যা) সহ-সাধারণ সম্পাদক নতুন ধন চাকমা, অর্থ সম্পাদক বাসক্ষী চাকমা, বরকলক জনহিতকর বন বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অরুন চাকমা, জহরলাল চাকমা, প্রদীপ চাকমা, ভারতের আগরতলা সদ্ধর্ম বন বিহারের উপাসিকা শীলা চাকমা, দিঘীনালা বন বিহারের উপাসিকা গোলাপী চাকমা, স্থানীয় পানছড়ি গ্রামের মুরুব্বী সভ্যশশী চাকমা, হাজাছড়া গ্রামের বীর কুমার চাকমা, মোন আদাম গ্রামের মুরুব্বী হিরণ কুমার চাকমাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্রে নির্মাণাধীন তিনতলা বিশিষ্ট বুদ্ধ মন্দিরটির নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রতিদিন কয়েকশ মানুষ নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে বিহারে আসছেন। যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্র পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিহারী চাকমা জানান, চলতি জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্রে প্রতিদিন সার্বজনীন সংঘদান, অষ্ট পরিষ্কার দানসহ বিহার উন্নয়নমুলক কার্যক্রম চলবে। শ্রীমৎ নন্দপাল মহাস্থবির প্রতিদিন পুণ্যার্থীদের মাঝে সর্দ্ধম দেশনা প্রদান করবেন।

আগামী ৩০ জানুয়ারি সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের পরিনির্বাণ বার্ষিকী উপলক্ষে যমচুগে বিভিন্ন কর্মসুচী হাতে নেয়া হয়েছে এবং যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য্য সহকারে বনভান্তের পরিনির্বাণ দিবস পালন করা হবে। অনুষ্ঠানে জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে অংশ গ্রহণ করার আহবান জানিয়েছেন যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্র পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রূপক চাকমা (যুবক্যা)। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে যে সকল শাখা বন বিহার রয়েছে সে সকল শাখা বন বিহার পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দকে যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্রের অনুষ্ঠিতব্য বনভান্তের পরিনির্বাণ বার্ষিকী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

পোস্ট- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান