যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্রে বনভান্তের পরিনির্বাণ বার্ষিকী পালিত

344

॥ ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি ॥

হাজারো পুণ্যার্থীদের ভক্তি শ্রদ্ধায় পালিত হয়েছে বৌদ্ধধর্মীয় মহাসাধাক শ্রাবক বুদ্ধ ভদন্ত শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের ১০তম পরিনির্বাণ বার্ষিকী। এ উপলক্ষে রাঙামাটি সদরের যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্র দিনব্যাপী কর্মসূচি পালিত হয়েছে। স্মরণ করা হয়েছে বৌদ্ধদের মহাসাধক বনভান্তেকে। রবিবার(৩০ জানুয়ারি) সকালে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জলন ও পরে বনভান্তের অস্থায়ী বেদীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে শুরু হয় ধর্মীয় নানা আনুষ্ঠানিকতা।

শনিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত দূর-দূরান্ত থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দেন হাজার হাজার পুণ্যার্থী। নানা রঙে তৈরি তোরণ ও বেলুনে সাজানো হয় গোটা বিহার এলাকা। অনুষ্ঠানকে ঘিরে সকালে বৌদ্ধ পতাকা উত্তোলন, পঞ্চশীল প্রার্থনা, বুদ্ধপূজা, ত্রিপিটক পূজা, সংঘদান, অষ্টপরিস্কার দান, বুদ্ধমূর্তি দান, প্রদীপ পূজা ধর্মীয় সভাসহ ধর্মীয় শোভাযাত্রা করা হয়। যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্র বিহার পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে গুনীজনদের দেওয়া হয়েছে সম্মাননা স্মারক। এসময় ধর্মীয় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য বিপুল ত্রিপুরা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি পূর্ণচক্র চাকমা। পঞ্চশীল প্রার্থনা পাঠ করেন বিহার পরিচালনা কমিটির অর্থ সম্পাদক প্রদীপ চাকমা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রূপক চাকমা। এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিহার পরিচালনা কমিটির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক প্রভাত চাকমাসহ বিহার পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ প্রমূখ।

বনভান্তের অমৃতময় বাণীর উদ্ধৃতি দিয়ে পুণ্যার্থীদের মাঝে ধর্মদেশনা দেন, দীঘিনালা বন বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ শুভবর্ধন মহাস্থবির, ধুতাঙ্গটিলা বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ দেবধাম্মা মহাস্থবির,সাজেক বনবিহারের বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ ধ্যানমতি ভিক্ষুসহ যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্রের বিহার অধ্যক্ষ কল্যাণজ্যোতি মহাস্থবির প্রমুখ।

এদিকে বৌদ্ধধর্মীয় মহাসাধাক শ্রাবক বুদ্ধ শ্রীমৎ ভদন্ত সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের ১০তম পরিনির্বাণ বার্ষিকীউপলক্ষে রাঙামাটি রাজবন বিহার, নানিয়ারচরের রতœাংকুর বনবিহারসহ বিভিন্ন শাখা বনবিহারে অনুষ্ঠিত হয়েছে ধর্মীয় মহাপুণ্যানুষ্ঠান।

খাগড়াছড়ি পানছড়ি থেকে যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্রে আসা পূণ্যার্থী পহেল চাকমা বলেন,‘পার্বত্য চট্টগ্রামে সুউচ্চ পাহাড়ে অবস্থিত যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্রে প্রথমবার আসছি পূজ্য বনভান্তেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। প্রায় ৫০ মিনিটের মত হেঁটে পাহাড় উঠে বিহারে পৌঁছতে হয়েছে। কষ্ট হলেও এখানে এসে খুব খুশি হয়েছি।’

নিজেনী চাকমা বলেন,‘প্রতি বছর পূজ্য বনভান্তেকে শ্রদ্ধা জানাতে বিহারে আসি। ১০ বছর আগে পূজ্য ভান্তেকে হারিয়েছি। তবে তাঁর প্রচারিত বৌদ্ধধর্মকে বিশ^াস করে বিহারে আসছি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য।’
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য বিপুল ত্রিপুরা বলেন,‘পূণ্যভূমি এ উঁচু পাহাড়ে পূণ্যার্থীরা আসেন মূলত বনভান্তেকে শ্রদ্ধা করে। তাঁর স্মৃতি এখানে অনেক রয়েছে। এ প্রথম যমচুগ বিহারে আসা। বিহারের আশে পাশে ঘুরে দেখেছি। বিহার এখনও উন্নত হয়নি। সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বিহার উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে। তখন বৌদ্ধধর্ম প্রচারের পাশাপাশি বিহার উন্নয়ন সম্ভব হবে।’ পরে তিনি বিহার উন্নয়নে ২০ লাখ টাকা সহায়তা দেয়ার আশ^াস দেন।

বৌদ্ধধর্মীয় এ মহাগুরু জন্ম ১৯২০ সালের ৮ জানুয়ারি রাঙ্গামাটি সদরের ১১৫ নম্বর মগবান মৌজার মোরঘোনা নামক গ্রামের এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে। তিনি মহামতি গৌতম বুদ্ধের পথ অনুসরণ করে ১৯৪৯ সালে গৃহত্যাগ করেছিলেন। যার পথ ধরে মহাপরিনির্বাণ লাভের মধ্য দিয়ে দেহত্যাগ করেন, ২০১২ সালের ৩০ জানুয়ারি। জীবদ্দশায় আমরণ ছিলেন, রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ ছিলেন বৌদ্ধধর্মীয় এ মহাগুরু।