।।আলমগীর মানিক।।
রাঙামাটিতে চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফ এর সক্রিয় কালেক্টরকে গুলি করে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা। রোববার (১৬ মার্চ) সকালে রাঙামাটি সদর উপজেলাধীন সাপছড়ি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের খামারপাড়ায় এই ঘটনা ঘটায় অস্ত্রধারীরা। নিহত ব্যক্তির নাম নির্মল খীসা(৩২)। সে নানিয়ারচর উপজেলার তৈচাকমা গ্রামের সুনীল বিহারী খীসার ছেলে।
রাঙামাটির কোতয়ালী থানা পুলিশ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সাহেদ উদ্দিন জানান, আমাদের পুলিশের একটি টিম নিহতের মরদেহ উদ্ধারে ঘটনাস্থলে রওয়ানা দিয়েছে তারা মরদেহ উদ্ধার পরবর্তীতে ফিরে আসলে বিস্তারিত জানা যাবে।
এদিকে, স্থানীয় কয়েকটি সূত্র জানায়, নিহত ইউপিডিএফ কালেক্টর নির্মল খীসা একজন বড় মাপের চাঁদা আদায়কারি। সম্প্রতি প্রশাসনের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাঙামাটি শহর এড়িয়ে অবৈধ ভারতীয় সিগারেট ব্যবসায়িরা কাপ্তাই হ্রদ দিয়ে কুতুকছড়ি নিয়ে ইউপিডিএফ এর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পাহাড়ি পথ দিয়ে কাউখালী উপজেলার মধ্যদিয়ে চট্টগ্রামে কোটি কোটি টাকার সিগারেট পার করতো। পাচারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় অবৈধ ব্যবসায়িদের আয়ের উপর নজর পড়ে কালেক্টর নির্মল খীসার। তাই অবৈধ সিগারেট ব্যবসায়িদের কাছে সম্প্রতি এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছিলো সে।
বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি অবৈধ সিগারেট ব্যবসায়িরা। তাই বিষয়টি জেএসএস এর সশস্ত্র শাখাকে অবগত করে নির্মলকে চিরতরে শেষ করে দেওয়ার চুক্তিতে নির্মলের থাকার অবস্থান জানিয়ে দেয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় জেএসএস’র অস্ত্রধারিরা বাড়ি থেকে বের করে নির্মল চাকমাকে রোববার সকাল ৯টার সময় গুলি করে হত্যা করে।
এদিকে, রবিবার (১৬ মার্চ ২০২৫) সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে ইউপিডিএফের রাঙামাটি জেলা সংগঠক সচল চাকমা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, রোববার সকাল ৯টার সময় রাঙামাটি সদর উপজেলার সাপছড়ি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে খামার পাড়ায় আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা জেএসএস সন্তু গ্রুপের ৬/৭ জনের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী ইউপিডিএফ সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এতে সন্ত্রাসীরা গুলি করে ইউপিডিএফ সদস্য নির্মল খীসাকে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের পর সন্ত্রাসীরা কাটাছড়ি স্বর্গপুর বনভাবনা কেন্দ্রের দিকে চলে যায় বলে স্থানীয়রা জানান।
বিবৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশে করে তিনি বলেন, চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন হলেও অন্তবর্তীকালীন সরকার শেখ হাসিনার দোসর সন্তু লারমার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। রাষ্ট্রীয় বিশেষ মহল এখনো সন্তু লারমাকে মদদ দিয়ে খুন-খারাবি চালিয়ে যাচ্ছে। আজকে খামার পাড়ায় ইউপিডিএফ সদস্যকে হত্যার ঘটনাও তারই অংশ। ইউপিডিএফ নেতা অবিলম্বে নির্মল খীসার হত্যাকারীদেরসহ হত্যাকান্ডের মূল হোতা সন্তু লারমাকে আঞ্চলিক পরিষদ থেকে অপসারণ করে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানান।
এদিকে, সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস এর পক্ষ থেকে এই হত্যাকান্ডে তাদের কোনো সংশ্লিষ্ট্যতা নেই জানিয়ে সংগঠনটির নেতা ডা: গঙ্গা মানিক প্রতিবেদককে বলেন, এই ধরনের কোনো অগণতান্ত্রিক সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জেএসএস কোনো ভাবেই সম্পৃক্ত নয়। তিনি বলেন, হয়তো ইউপিডিএফ এর নিজস্ব অর্ন্তকোন্দলের ফলেই এই হত্যাকান্ড ঘটেছে বলে আমি মনে করছি।