॥ বিহারী চাকমা ॥
‘জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষণে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হউন’ এই শ্লোগানে রাঙ্গামাটিতে বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪০তম মৃত্যু বার্ষিকীতে জুম্ম জাতীয় শোক দিবস ও স্মরণসভার আয়োজন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি ডা. গঙ্গামানিক চাকমার সভাপতিত্বে স্মরণসভায় প্রধান আলোচক ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও সাবেক সাংসদ উষাতন তালুকদার।
শুক্রবার সকালে রাঙ্গামাটি শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত স্মরণ সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কবি ও সাহিত্যিক শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ভবতোষ দেওয়ান, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মনি চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপন ত্রিপুরা প্রমুখ।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যের শুরুতে উষাতন তালুকদার মহান নেতা বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ও তার ৮ সহযাগীসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি বলেন দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের আন্দোলন নচ্যাৎ করার জন্য এমএন লারমাকে হত্যা করা হয়েছে। এম এন লারমা ছিলেন একজন মানবতাবাদী নেতা। তাকে হত্যা করে জাতির অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন- মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জুম্মজাতির প্রবক্তা। জুম্ম জাতীয়তাবাদ প্রবতর্নের মাধ্যমে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল জাতিসমুহকে একই প্লাটফর্মে নিয়ে এসেছিলেন। এমএন লারমা ছিলেন প্রগতিবাদী, নির্ভীক, সৎসাহসী, দক্ষ ও বিচক্ষণ রাজনীতিক। যারা শোষণ বঞ্চনার অবসান চায়, যারা গণতান্ত্রিক চেতনা লালন করেন তাদের কাছে এমএন লারমার মৃত্যু পাহড়ের চেয়ে ভারী। এমএন লারমার মত ত্যাগী, আদর্শবান, সৎ ও নির্ভীক নেতাকে হত্যা করলেও তার আদর্শকে হত্যা করা সম্ভব হয়নি। তিনি সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন লালন করতেন। তার চিন্তা চেতনা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ছাত্র-যুবকসহ সর্বস্তরের মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। এ কারণে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রত্যেকটি পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে আজ এমএন লারমার স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিটি উপজেলায় বিপ্লবী এমএন লারমাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হচ্ছে। এমএন লারমার আদর্শ বুকে ধারণ করে ভয়ভীতি পরিহার করে অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে যতক্ষণ পর্যন্ত পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
স্মরণ সভার শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নগেন্দ্র চাকমা সংগঠনের প্রতিবেদন পড়ে শোনান। সেখানে তিনি রাষ্ট্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলায় নিহত, আহত, নির্যাতিত ও বিভিন্ন হয়রানিমুলক মামলায় ক্ষতিগ্রস্থ দলীয় নেতাকর্মী সমর্থকদের নাম ঠিকানা ও পরিচয় বিস্তারিত তুলে ধরেন। এর আগে সকালে প্রভাত ফেরির মাধ্যমে বিপ্লবী এমএন লারমাকে স্মরণ করা হয়। প্রভাত ফেরি শিল্পকলা একাডেমী থেকে শুরু হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বনরূপা ঘুরে আবার শিল্পকলা একাডেমীতে শেষ হয়।