রাঙামাটিতে এ বছর আমনের বাম্পার ফলন উৎসবের প্রস্তুতি কৃষাণ কৃষাণীদের মাঝে

100

॥ মঈন উদ্দীন বাপ্পী ॥

বৈচিত্রময় পার্বত্যাঞ্চল রাঙামাটি ফলমূল এবং জুম চাষের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু এখানে এসব ফসলের পাশাপাশি গতানুগতিক সমতল অঞ্চলের ন্যায় অন্যান্য ফসলের চাষ হয় সমানতালে। এ জেলার মাটি উর্বর হওয়ায় সকল ফসলাদি চাষের জন্য উপযোগী। কৃষকরা এ উর্বর ভূমিকে স্বর্ণ ভূমিও বলে থাকে।

পাহাড়ের এ স্বর্ণ ভূমিতে চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় যথা সময়ে ফসল ঘরে তুলে হেমন্তের পিঠা-পুলি উৎসব সাড়াম্বরে আয়োজন করবে কৃষক পরিবার। যে কারণে পাহাড়ের গ্রামগুলোতে বইছে উৎসবের আমেজ, বেজায় খুশি কৃষক-কৃষাণীরা।

এইবার জেলার দশটি উপজেলায় ১০হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে আমনের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অধিক ফলন হয়েছে বলছে কৃষি বিভাগ। হেমন্তের শিশির ভেজা শীতল কুয়াসা বাতাসে দোলছে পাকা ধানের শীষ, নূয়ে পড়ছে মাটিতেও। আড়ম্বর আয়োজনে নবান্ন উৎসব পালনের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে কৃষক-কৃষাণীরা।
যেসব জমিতে ধান কাটার উপযুক্ত হয়েছে সেইসব জমির ধান কেটে মাঠে শুকানো হচ্ছে। শুকানো হলে সেগুলো আঁটি বেঁধে মাড়াই করা হচ্ছে। ভোর থেকে এসব কাজে ব্যতি-ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণীরা । কৃষকরা বলছেন- চলতি মওসুমে আবহাওয়া ভাল হওয়ায় এবং রোগ-বালাই কম থাকায় আমনের ভাল ফলন হয়েছে।

শহরের রাঙাপানি এলাকার কৃষক সোনামণি চাকমা বলেন- আমি দুই একর জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি। উৎপাদন ভাল হয়েছে তাই মনে শান্তি লাগছে।

একই এলাকার কৃষাণী হরপতি চাকমা বলেন- জমিতে যে পরিমাণ ধান উৎপন্ন হয়েছে তা দিয়ে পুরো বছর চলে যাবে। এ বছর লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে অত্যন্ত ভাল ফলন হয়েছে বলে এ কৃষাণী যোগ করেন।

কৃষক চয়ন চাকমা বলেন- জুমের ভাল ফলন না পেলেও আমরা আমনের ভাল ফলন পেয়েছি। যথা সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় চলতি মওসুমে আমনের ভাল ফলন হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি জেলা কার্যালয়ের কর্তৃপক্ষরা জানিয়েছেন- জেলার দশটি উপজেলায় ১০হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষমাত্রা করা হয়েছিলো। শতভাগ সেই লক্ষ্য মাত্রা পূরণ করা হয়েছে। গত কয়েকদিনে ২দশমিক ৭৮হেক্টর জমি থেকে ২৭হাজার ৪৩৮ মেট্রিক টন উফসি জাতের ধান এবং ১দশমিক ৪০ হেক্টর জমি থেকে ২৯৪ মেট্রিক টন স্থানীয় ধান পাওয়া গেছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আমনের ভাল ফলন হয়েছে বলে জানাচ্ছে কৃষি বিভাগ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি জেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আদর প্রিয় চাকমা বলেন- চলতি মৌসুমের আমনের সবগুলো ধানের ভাল ফলন হয়েছে। যথা সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবং পোকা-মাকড়ের কম থাকায় ফলনের বাম্পার হয়েছে।

এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- আমার এলাকায় ইঁদুরের কোন উৎপত্তি ছিলো না। কারণ আমরা আগে থেকেই ইঁদুর নিধনের ব্যবস্থা নিয়েছি। চাহিদার তুলনায় ফলন ভাল হওয়ায় কৃষক পরিবারগুলোর পুরো বছরের চাহিদা পুরণ হয়ে যাবে এমন প্রত্যাশা এ কৃষি কর্মকর্তার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি জেলার উপ-পরিচালক তপন কুমার পাল বলেন- রাঙামাটির মাটি উর্বর ভূমি। এখানে যা কিছু চাষ করা হয় তাই ফলে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে হলো।

এ কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন-জেলায় বৃষ্টিপাত কম হলেও আমনের মওসুমের আগে বৃষ্টিপাত হওয়ায় চলতি মওসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে উৎপাদন বেশি হবে।
কৃষিবীদ তপন কুমার পাল বলেন- সরকার কৃষি নিয়ে মহা পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। দিনদিন কৃষির উন্নয়নে যত আধুনিক পরিকল্পনা দরকার সব করছে। কৃষির উন্নয়নে সরকার কোটি-কোটি টাকা খরচ করছে, ভুর্তকী দিচ্ছে।